ছত্রিশ দিনের জুলাই বিপ্লব ও ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে দ্বিতীয় বিজয় অর্জন করেছে দেশ। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-জাতীয় মর্যাদা পুনরুদ্ধার হয়েছে। দেড় দশকের স্বৈরশাসন অবসানে চলছে রাষ্ট্র সংস্কার। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে জমে ওঠা অনিয়ম-বঞ্চনার বর্জ্য অপসারণ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে অর্থনীতি ও শিল্প ক্ষেত্রে। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পোৎপাদন গতিশীল না থাকলে হোঁচট খাবে জাতীয় অর্থনীতি। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং দেশে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতা শিল্প খাতকে সংকটে ফেলে। পতিত সরকারের অনেক নীতিসিদ্ধান্ত অবস্থা আরও জটিল করে। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, অযৌক্তিক শুল্ককর কাঠাম- কিছুই ব্যবসাবান্ধব ছিল না, অথচ তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্ত। এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। চাই সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ। শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি খাতের প্রতি সরকারের স্বযত্ন স্বীকৃতি ও পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। ঋণের কিস্তি পরিশোধেও যৌক্তিক সময় দেওয়া জরুরি। দেশের বেশকটি ব্যাংক নানা সমস্যায় জর্জরিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা না দিলে এগুলো গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারবে না। তাতে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে অক্ষমতাসহ নানা জট পাকাতে পারে, যা কোনো বিবেচনায়ই শুভ ফল বয়ে আনবে না। এসব বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লাগসই কর্মসূচি নিতে হবে। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যেও শ্রমিক অসন্তোষের অজুহাতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর-নাশকতায় বেশ কিছু শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। পেছনে কেউ কলকাঠি নাড়ছে কি না- শ্রমিকদের তা বুঝতে হবে। কারণ, ব্যবসা ও শিল্পের ওপর আঘাতটা মূলত ক্ষতিগ্রস্ত করছে মালিক-শ্রমিকের রুটিরুজির ক্ষেত্রকে। যা সবার জন্যই আত্মঘাতী। এ পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিকভাবে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে মালিক-শ্রমিকসহ সব পক্ষকে যত্নবান হতে হবে।