রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে ২০২৪ সালটি ছিল আলোচিত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। নানামুখী সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পথে তরুণরা। দেশে বিরাজ করছে নানামুখী সংকট। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল মানুষ। ব্যবসাবাণিজ্যে স্থবিরতা। পোশাকশিল্পে চলছে অস্থিরতা। দাবিদাওয়া নিয়ে রাজপথে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এমন বাস্তবতায় ১ জানুয়ারি বসুন্ধরা সিটি কনফারেন্স হলে ‘নতুন বছরের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রতিদিন। উপস্থিত বক্তারা তুলে ধরেছেন তাঁদের প্রত্যাশা। প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- শামীম আহমেদ, হাসান ইমন, শরিফুল ইসলাম সীমান্ত ও আবির আব্দুল্লাহ। ছবি তুলেছেন- জয়ীতা রায়
বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে
আবদুল আউয়াল মিন্টু
ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি
সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, দেশের মানুষের প্রত্যাশা ও তা পূরণের মধ্যে ফারাক অনেক। আমাদের শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য সব ক্ষেত্রে বৈষম্য। এটা কমাতে উদ্বৃত্ত সম্পদের সুষম বণ্টন জরুরি। অথচ কেউই তা কখনো করেনি। আমি চাই দেশটা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী হোক। এজন্য সম্পদ সৃষ্টি করতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এজন্য দরকার বিনিয়োগ। বিনিয়োগ বাড়াতে প্রথমেই দরকার সামাজিক শৃঙ্খলা। সেটাই নেই। এখানে অপরাধের হার ক্রমেই বাড়ছে। কিশোর অপরাধ বাড়ছে। ফেসবুকে দাওয়াত দিয়ে ছেলেমেয়েরা আত্মহত্যা করছে। অস্থির একটা সমাজ! যে পুলিশ অপরাধ দমন করবে, তাদের মধ্যেই অপরাধপ্রবণতা বেশি। সাধারণ ব্যবসায়ীর চেয়ে মাদক ব্যবসায়ী দ্রুত বাড়ছে। এমন বাস্তবতায় কেউ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। নিরাপত্তা বোধ করবে না। বিনিয়োগ না হলে বেকারত্ব আরও বাড়বে, যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা বাড়াবে। মাদকের আগ্রাসন বাড়বে। দেশকে এগিয়ে নিতে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। একটাকে রেখে আরেকটা ভালো হবে না।
রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ছাড়া সংস্কার কাজে আসবে না
মাহমুদুর রহমান মান্না
সভাপতি
নাগরিক ঐক্য
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। পুরনো পচা, জীর্ণ, লুটেরা সংস্কৃতির সংশোধন করে নতুন একটা দেশ গড়তে হবে। দেশটা পুরো বদলাতে হবে। এর জন্য সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এ সরকার কতটুকু সংস্কার করে যেতে চায় সেটা স্পষ্ট করতে হবে। এর জন্য কী পরিমাণ সময় প্রয়োজন সেটাও নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচন যত দেরি হবে সরকার তত বেশি সমস্যায় পড়বে।
আমি চাই, নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা যেন ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেন, যাতে তারা জনগণের প্রত্যাশার জবাব দিতে এবং আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেন। এর জন্য দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ’২৪-এর অভ্যুত্থান ছিল চাঁদাবাজি, গুন্ডামি, মাস্তানি, দখলদারি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এ সংস্কৃতি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে, তা ছাড়া সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না।
প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের দাবি
হামিদুর রহমান আযাদ
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, ৫ আগস্ট যে চেতনা ধারণ করে দলমতনির্বিশেষে ছাত্র-জনতা একত্র হয়েছে; সেটা বাস্তবায়ন হলে সুন্দর দেশ গঠন হবে। সুন্দর দেশ গড়ার জন্য একটা পরিকল্পনা দরকার। আগামী পাঁচ, ১০ ও ২০ বছরে দেশ কোথায় যাবে তার বাস্তবতাভিত্তিক পরিকল্পনা করতে হবে। এটার জন্য দরকার সংস্কার ও নির্বাচন।
সাবেক এই এমপি বলেন, আমরা কিছু মৌলিক সংস্কার চাই। এর মধ্যে মানবাধিকার সংস্কার, বিচার বিভাগ সংস্কার, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার, নির্বাচন আইন সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে নীতি তৈরি করেছে সেটার সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামী ৪১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। এর মধ্যে ১০ দফা বর্তমান সরকার সংস্কার করবে। আর বাকি ৩১ দফা আগামীতে যে রাজনৈতিক সরকার আসবে তারা সংস্কার করবে।
গণহত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে
সামান্তা শারমিন
মুখপাত্র
জাতীয় নাগরিক কমিটি
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, এ কথা আমাদের নিয়মিত শুনতে হচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো বাস্তবায়ন করা না হলে দেশে যে একটা গণ অভ্যুত্থান হয়েছে তার স্বীকৃতি পাওয়া যাবে না। তাই দেশে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার আগে কিছু বিষয়ের সংস্কার অত্যাবশ্যক। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে যারা ধ্বংসাবশেষে পরিণত করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ১৫ বছর ধরে যারা দেশে গুম, খুন, ধর্ষণ, অর্থ পাচারের রাজত্ব কায়েম করেছিল সেই আওয়ামী লীগই জুলাই গণ অভ্যুত্থানে নির্বিচার গণহত্যা চালিয়েছে। এ গণহত্যাকারীদের শুধু বিচার নয়, দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ভগ্নদশা রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সংবিধান সংস্কার ও পুনর্লিখন প্রয়োজন। সব অস্তিত্বশীল রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কার করে তরুণ নেতৃত্বকে সুযোগ দিতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার এবং জনমুখী সংবিধান পুনর্লিখনের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন। বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মাঠে শক্তিশালী করে প্রতিষ্ঠার জন্য হাসিনার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে আধুনিক পররাষ্ট্রনীতিতে উত্তরণ করতে হবে।
বর্তমান সরকারের কাছে দ্রুত সংস্কার প্রত্যাশা ঠিক নয়
মোস্তফা জামাল হায়দার
১২-দলীয় জোটপ্রধান
চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)
১২-দলীয় জোটপ্রধান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত সংস্কার প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। কারণ গত ১৬ বছর সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম, চাঁদাবাজি, রাজত্ব কায়েম, ঘুষ, হয়রানি, দুঃশাসন ও অবিচার হয়েছে। এ অনিয়ম চাঁদাবাজি ছয় মাস বা এক বছরে দূর করতে পারবেন না। তাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, নতুন বছরে আমার প্রত্যাশা দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়া। যে সরকার এ দেশ আবারও নতুন করে জাগিয়ে তুলবে। যারা ফ্যাসিস্ট দোসরদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবে। আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালে আনতে পারবে।
তিনি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলায় সমস্যা রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের কশাঘাত এবং স্বৈরাচার সরকারের দোসররা ষড়যন্ত্র করছে। এটাকে এ সরকার ক্ষমতায় থেকে সমাধান করবে তার পরে নির্বাচন করবে এটা কখনো বাস্তবসম্মত নয়। যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দিক। জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।
ব্যাংকিং খাতে সংস্কার করতে হবে
মোহাম্মদ হাতেম
সভাপতি
বিকেএমইএ
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সংকট হলো ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের অভাব। এ খাতে সংস্কার করা না হলে ভবিষ্যতে দেশের ব্যবসাবাণিজ্য কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে। এরই মধ্যে ১৫০-৬০টি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছে। সামনের দিনগুলোয় আরও অনেক ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে। এর অন্যতম কারণ ব্যাংকিং খাতের পলিসি, যা গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নেওয়া হয়েছে। ক্লসিফিকেশন আইন নামে যে আইন করা হয়েছে সেটি ব্যবসায়ীদের গলা টিপে হত্যা করার মতো একটা আইন। এসব জায়গা থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে। ব্যাংকিং খাতে যে পরিমাণ লুটপাট হয়েছে তাতে এ খাতে গুরুতর সংস্কার প্রয়োজন। আমি আগেও বলেছি, আইএমএফ কোনো দিন কোনো দেশের মঙ্গলের জন্য প্রেসক্রিপশন দেয়নি। যে দেশ আইএমএফের প্রেসক্রিপশন পুরোপুরি মেনে চলেছে সে দেশ পঙ্গুত্ববরণ করেছে। কিছু কিছু পরামর্শ হয়তো আমাদের নিতে হবে। কিন্তু কোনটা নেব, কোনটা নেব না সেটি রাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর ব্যবসাকে বাঁচাতে চাইলে এলডিসিতে উত্তরণের যে লক্ষ্যমাত্রা তা স্থগিত করতে হবে।
সরকার যেন কোনো গোষ্ঠীর প্রতি দুর্বল না থাকে
সাইফুল হক
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক যাত্রায় ২০২৪ সাল একটা মাইলফলক। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হিমালয়সম প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এ প্রত্যাশা পূরণের সুযোগটা যেন কোনোভাবেই হাতছাড়া না হয়। মুক্তিযুদ্ধের পরে সবচেয়ে বড় গণহত্যা হয়েছে গত জুলাই-আগস্টে। এ গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া একটা সন্তোষজনক পর্যায়ে এগিয়ে নেওয়া নতুন বছরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বিগত ১৬ বছরের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিচার দেখতে চাই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কোটি কোটি মানুষের খাদ্যগ্রহণ কমে গেছে। এখন কোনো সিন্ডিকেট নেই। এত বড় সমর্থনের পরও এ সরকার কেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে নেই। মানুষ এখনো সহ্য করছে। তবে মাসের পর মাস এভাবে চলতে পারে না। আগামী দিনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শেষবিচারে তারাই দায়িত্ব পালন করবে। কমিশন যেন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। বর্তমান সরকার যেন কোনো গোষ্ঠী বা মতের প্রতি দুর্বল না থাকে। পথ হারালেই প্রশ্ন উঠবে। সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে এড়িয়ে চলছে।
নতুন বছরের প্রত্যাশা মৌলিক সংস্কার
আবু আলম শহিদ খান
সাবেক সচিব
সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান বলেছেন, নতুন বছরের প্রত্যাশা পূরণে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। এর মধ্যে বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি, আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার, প্রতিটি সেক্টরে মেধাবী, যোগ্য এবং নিরপেক্ষ লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন। একই সঙ্গে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র, স্বাধীন গণকর্মচারী কাঠামো তৈরি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রূপান্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কার করা প্রয়োজন।
আবু আলম শহিদ খান বলেন, আমরা এমন একটা নির্বাচনব্যবস্থা চাই যে নির্বাচনটা হবে উৎসবমুখর। যেখানে সব প্রার্থীর সমান সুযোগসুবিধা থাকবে। কেউ কারও নির্বাচনি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলবে না। কারও পথসভায় কেউ হামলা করবে না। কেউ প্রচারে বাধা দেবে না।
তিনি বলেন, আমরা মিডিয়া ক্যু নির্বাচন চাই না। যেখানে গণমাধ্যমগুলো অন্ধের ভূমিকায় থাকে। আমরা রাতের নির্বাচন চাই না। নতুন বছরে আমাদের স্বপ্নপূরণের যাত্রা শুভ হোক।
সংস্কার চলবে, নির্বাচনি প্রক্রিয়াও চলবে
হাসান হাফিজ
সম্পাদক, কালের কণ্ঠ
সভাপতি, জাতীয় প্রেস ক্লাব
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেছেন, আমরা স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে সরিয়ে প্রাথমিক বিজয় অর্জন করেছি, তবে আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ বিজয় সুসংহত, স্থায়ী ও টেকসই করতে হবে। এর মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। তবে আমরা দেখছি, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বেড়েই চলেছে, যা উদ্বেগজনক। দূরত্ব কমাতে প্রয়োজন নির্বাচনি রোডম্যাপ। এ সময় সংস্কার চলবে, পাশাপাশি নির্বাচনি প্রক্রিয়াও চলবে।
নতুন বছরের প্রত্যাশা নিয়ে তিনি বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন চাই, নিত্যপণ্যের দাম যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, পরিবেশ তৈরি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। পাশের দেশও আমাদের নিয়ে খেলছে। আমরা সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব চাই। সীমান্তে আর কোনো লাশ দেখতে চাই না।
নতুন আবহের প্রত্যাশা নিয়েই গোলটেবিল বৈঠক
আবু তাহের
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের বলেছেন, নববর্ষে আমাদের অনেক প্রত্যাশা থাকে। অনেক সময় এ প্রত্যাশা বাস্তবতাকেও ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি নতুন আবহের মধ্যে চলে এসেছে। সে আবহ অনুযায়ী প্রত্যাশাগুলো জানার জন্যই আজকের এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বাধাবিপত্তির কারণে প্রত্যাশা পূরণ না হলে আমরা নতুন বছরকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে নিজেকে বলা উচিত, যেভাবে আমার এক প্রিয় শিক্ষক বলতেন, ‘ডোন্ট ইউজ ইয়োর এনার্জি টু ওয়্যারি, ইউজ ইয়োর এনার্জি টু বিলিভ, বার্ন দ্য পাস্ট, টার্ন দ্য পেজেস অ্যান্ড মুভ অন।’ তিনি বলেন, সংস্কার আমাদের প্রত্যেকেরই প্রত্যাশা। তবে সংস্কারটা যেন সং-এ পরিণত না হয়। পাশাপাশি বর্তমানে বৈষম্যহীনতার কথা বলা হচ্ছে। তবে বৈষম্যহীনতা যেন শুধু দারিদ্র্য বণ্টনের ক্ষেত্রে না হয়, সম্পদের বণ্টনের সময় যেন বৈষম্যহীনতা থাকে। নতুন বছর বরণ করবার সময় সাংবাদিক-কবি অরুণাভ সরকারের কবিতাটি মনে পড়ছে, ‘জীবন হোক মধুর আর হৃদয় হোক ফুল/ভুবন হোক আলোকময় আনন্দসংকুল।’
সকল ইতিবাচক উদ্যোগের সঙ্গে
মনজুরুল ইসলাম
নির্বাহী সম্পাদক
বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, নতুন বছরে আমাদের অনেক প্রত্যাশা থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এ বছরটি সবার জন্য ভালো হোক, সবাই ভালো থাকুক সেই প্রত্যাশা করছি। সেই সঙ্গে দেশের সব উন্নয়ন ও ছাত্রসমাজের সব ইতিবাচক উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিন থাকবে। গতকাল বসুন্ধরা কনফারেন্স হলে ‘নতুন বছরের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
মনজুরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রসমাজ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে স্বপ্ন দেখেছে, রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সবাই মিলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংকট দূরীকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণ, অহিংস সমাজ বিনির্মাণ, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণসহ দেশের সব ইতিবাচক কর্মকাণ্ড হোক আমাদের এ বছরের প্রত্যাশা।
নতুন রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক হবে না
সাইফ মোস্তাফিজ
যুগ্ম সদস্যসচিব
জাতীয় নাগরিক কমিটি
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব সাইফ মোস্তাফিজ বলেছেন, দেশের সিনিয়র রাজনীতিবিদরা আমাদের তরুণদের উৎসাহ দিচ্ছেন রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জন্য। আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছি। সিনিয়র, জুনিয়র সবাইকে নিয়ে আমরা একটি নতুন দল গঠন করব। নতুন রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক বা ক্ষমতাকেন্দ্রিক হবে না।
তিনি বলেন, কারণ ৫৪ বছরের রাজনৈতিক ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা আমরা গত ১৬ বছরও দেখেছি। সেই ব্যর্থতার দায়ভার আমাদের সব রাজনৈতিক দলকেই নিতে হবে।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার ১৬ বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর অবদান ছিল, ত্যাগ ছিল। তার পরও তাদের পক্ষে হাসিনাকে উৎখাত করা সম্ভব হয়নি। কারণ তারা যেসব রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছিল তাতে গণমানুষের অংশগ্রহণ ছিল না। মানুষের আশঙ্কা ছিল ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে এ দলগুলোই আবার নতুন আরেকটা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারে।
বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই
আলী আহসান জুনায়েদ
যুগ্ম আহ্বায়ক
জাতীয় নাগরিক কমিটি
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার দেশে এমনই জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল যে, ৫ আগস্টের বিজয়ের পর গ্রাম পর্যায়ে ওয়ার্ডের মেম্বার, এমনকি জাতীয় মসজিদের ইমাম পর্যন্ত শেখ হাসিনার সঙ্গে পালিয়ে গেছেন। আমরা তরুণরা এ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ চাই। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন মানুষ দেখেছে তা প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত হয়ে পেশাদার, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী হতে হবে। সরকার যেসব সংস্কার কমিশন করেছে সেগুলো কার্যকর করতে হবে।
তিনি বলেন, হাসিনার পতনের পর মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। গত তিনটি কলঙ্কিত নির্বাচনের প্রেক্ষিতে মানুষের মধ্যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করছি, এ ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হবে।