সামাজিক নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মহাপরিকল্পনায় নিজ দল ডেমক্র্যাটদের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভে ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘যা মানুষ চায় তা অনেকেই পরিপূর্ণভাবে পায় না। আমি নিজেও না। তাই সমঝোতার পথে যতটা সম্ভব আমেরিকানদের সার্বিক কল্যাণে করতে চাচ্ছি’।
হতাশায় ডুবে যাওয়া এবং ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ বাইডেন বৃহস্প্রতিবার সকালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার প্রাক্কালে হোয়াইট হাউজে প্রেস ব্রিফিংকালে এমন অভিমত পোষণ করেন।
উল্লেখ্য, বেশ ক’মাস আগে সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের এক মহাপরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তা ছিল নির্বাচনী অঙ্গিকার এবং করোনায় ক্ষত-বিক্ষত আমেরিকাকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পরিপূরক। এ নিয়ে ডেমক্র্যাটরাও বাগড়া বসিয়েছিলেন। এতবড় অংকের দায় কেন নেবে যুক্তরাষ্ট্র-এ প্রশ্ন ছিল সিনেট ও হাউজের নীতি-নির্ধারকদের। অথচ ব্যাপকভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ এবং স্বল্প ও মাঝারি আয়ের আমেরিকানদের জীবন-মানের উন্নয়নে বাইডেনের ঐ মহাপরিকল্পনার বিকল্প ছিল না।
এমনকি, অভিবাসন আদালত ও পারিবারিক কোটায় ভিসা ইস্যুর যে জটিলতা শুরু হয়েছে, তা দূর করতেও বিপুল অর্থ দরকার ছিল। নির্বাচনী অঙ্গিকার অনুযায়ী সকল আমেরিকানের ব্যাচেলর ডিগ্রি পর্যন্ত ফ্রি করার পাশাপাশি সকল শিশুর কিন্ডার গার্টেন পড়া ফ্রি করার কর্মসূচিও ছিল ঐ মহাপরিকল্পনায়। দাঁতের চিকিৎসাকেও মেডিকেইডের আওতায় আনতে চেয়েছিলেন। হোমকেয়ার সার্ভিসকেও আরো উন্নত করার প্রস্তাবও ছিল। স্টুডেন্ট লোন মওকুফের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ছাড়াও অভিবাসন আইন ঢেলে সাজাতে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এসব জরুরী হয়ে পড়েছিল সামনের বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটেও ৬০টি আসন দখল করার।
কিন্তু প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনাকে অর্ধেকে নামিয়ে আনায় বাইডেনের জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়েছে, তা আরো ত্বরান্বিত হবে বলেও মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ ডেমক্র্যাটরা আত্মঘাতি একটি ফাঁদে পা দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। ব্যক্তি হিসেবে জো বাইডেন মনোক্ষণ্ণ হলে কারো কিছু যাবে আসবে না, কিন্তু সাধারণ আমেরিকানদের সার্বিক কল্যাণের মনোভাবকে হতাশায় নিপতিত করার দায় নিতে হবে ডেমক্র্যাটিক পার্টিকে-এমন অভিমত পোষণ করেছে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমসমূহও।
‘বিল্ড ব্যাক বেটার’ স্লোগানে বাইডেনের সামাজিক নিরাপত্তা এবং উভয়দলের স্বার্থে অবকাঠামোগত উন্নয়ন (সড়ক, সেতু, সমুদ্রবন্দর, ব্রডব্যান্ড এবং অন্যান্য স্থাপনা) পরিকল্পনাসমূহ এখন মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিত্তশালী এবং বিপুল অর্থ উপার্জনকারি কর্পোরেশনের ট্যাক্স বৃদ্ধির মাধ্যমে মহাপরিকল্পনার অর্থ-সংস্থানের প্রস্তাব ছিল বাইডেনের। এবং এটিই হচ্ছে প্রধান কারণ প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনাকে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে। কারণ, বিত্তশালি এবং বিলিয়ন ডলারের অধিক উপার্জনকারি ব্যক্তি ও কোম্পানীর কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা পেয়ে থাকেন রাজনীতিকরা। এজন্যে ঐসব ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ক্ষেপাতে চাননি সিনেটর ও কংগ্রেসের নীতি-নির্ধারকরা। অর্থাৎ ভোটের ময়দানে সাধারণ আমেরিকানদের সার্বিক কল্যাণের অঙ্গিকারগুলো বিত্তশালীদের স্বার্থের কাছে অবদমিত হয়ে গেল। সমঝোতা অনুযায়ী পৌণে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ পাশ হলে ৫৫৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে। ৩-৪ বছর বয়েসী শিশুর প্রি-কিন্ডারগার্টেন ফ্রি বাবদ ৪০০ বিলিয়ন ডলারম ৩ লাখ ডলার পর্যন্ত উপার্জনকারি পরিবারের চাইল্ডকেয়ার খরচ কমানো হবে। ২০২২ সাল পর্যন্ত চাইল্ড ক্রেডিট অব্যাহত রাখতে বরাদ্দ করা হবে ২০০ বিলিয়ন ডলার। হোমকেয়ারের ওয়েটিং লিস্টের সংখ্যা কমাতে রাখা হবে ১৫০ বিলিয়ন ডলার। এফোর্ডেবল হাউজিং ইউনিট খাতে ১৫০ বিলিয়ন ডলার, অভিবাসনের স্থবিরতা কাটাতে ১০০ বিলিয়ন ডলার রাখা হবে। কারণ, ট্রাম্পের কারণে ৯০ লাখের বেশী ভিসা ইস্যুও কার্যক্রমটি ঝুলে রয়েছে।
এসাইলামের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে নতুন বিচারক নিয়োগের কাজটিও দ্রুত সম্পন্ন করতে চায় বাইডেন প্রশাসন। যদিও অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ তেমন আগ্রহের পরিপূরক নয় বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, চীন আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের সামগ্রিক সক্ষমতা আরো জোরদারের অভিপ্রায়ে বাইডেন উন্নয়নের মহাপরিকল্পনাটি উপস্থাপন করেছিলেন ক্ষমতা গ্রহণের পরই।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল