নারী দিবসের আড়ালেই কলকাতার রাজপথ থেকে আসন্ন লোকসভার নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যনার্জি। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার বিকেলে কলকাতার শ্রদ্ধানন্দ পার্ক থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত এক পদযাত্রার আয়োজন করেছিল তৃণমূল নারী কংগ্রেস। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় মিছিল। সেই মিছিলেই পা মেলান মমতা। এর মাধ্যমেই শুরু হয়ে গেল ২০১৯ সালের ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা।
মিছিলকে কেন্দ্র করে দলের নারী কর্মীদের মধ্যে উন্মাদনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। মমতার সঙ্গেই মিছিলে পা মেলান নারী সংগঠনের সভানেত্রী এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য ও আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, দলের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সাংসদ দোলা সেন, বিধায়ক সোনালী গুহসহ বিশিষ্টরা। দলীয় পতাকা এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে যে উন্নয়ন মূলক কাজ করা হয়েছে-সেই সম্পর্কিত পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিলে হাঁটেন নারী সংগঠনের কর্মী-সদস্যরা। তবে ভোটের স্লোগান ছিল না।
দলের নেতা কর্মীদের দাবি, এবারের লোকসভা নির্বাচন তৃণমূলের কাছে ‘ঐতিহাসিক’। তাদের লক্ষ্য কেন্দ্রে জনবিরোধী বিজেপি সরকারকে উৎখাত করা। মোদি সরকারকে উৎখাত করতে ইতিমধ্যেই ২৩ টি অ-বিজেপি দলকে নিয়ে কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে জমায়েত করেছেন মমতা। এরপর দিল্লিতে গিয়েও মোদি বিরোধী সুর আরও চওড়া করেছেন তিনি। আসলে মোদি বিরোধী জোটের অন্যতম মুখই হলেন মমতা। এবারের কেন্দ্রে সরকার গঠনেও তৃণমূল কংগ্রেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারনা।
যদিও লোকসভার তফসিল এখনও ঘোষণা হয়নি। সূত্রে খবর, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। আর তরপরই দেশজুড়ে ভোটের দামামা বেজে যাবে। কিন্তু আজ থেকেই প্রচারণা শুরু করে দিলেন তিনি। এর আগে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ও নারী দিবসের এই দিন থেকেই প্রচারণা শুরু করেছিলেন মমতা।
নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে দলের প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করবেন তিনি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু এবার তাদের লক্ষ্য ৪২-এ ৪২। কয়েকদিন আগেই দলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে প্রত্যেককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে সবকয়টি আসনেই জেতার লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দেন মমতা।
এদিকে এ রাজ্য থেকেই নিজের দলের নেতা-কর্মীদের ২৩টি আসনের জেতার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। অন্যদিকে কংগ্রেস এবং সিপিআইএম কোমর বেঁধে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছে। সবমিলিয়ে যথেষ্ট কঠিন হতে চলেছে এবারের নির্বাচনী লড়াই।
মিছিল শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। তার অভিযোগ "মোদী দেশের গোপনীয়তা ও রুপি চুরি করে তার নিজের দলের তহবিলে ঢেলেছেন।" মমতার প্রশ্ন রাফায়েল জেট বিমান সম্পর্কিত চুক্তির নথিপত্র যিনি রক্ষা করতে পারেন না তিনি কীভাবে দেশকে সুরক্ষিত রাখার নিশ্চয়তা দেবেন। মমতার আরও অভিযোগ, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটনা বাড়ার হার ২৬০ ভাগ। এই সরকার উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না কারণ এই সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তার অভিমত নির্বাচনের পর কেন্দ্রে নতুন সরকার আসলে তারাই কাশ্মীরের শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনবে।"
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা