আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ইতালীয় বংশোদ্ভূত বিশ্বখ্যাত মার্কিন লেখক মারিও পুজোর সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘গডফাদার’ পড়ে থাকবেন। উপন্যাসের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত সর্বকালের অন্যতম সেরা ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রটিও হয়তো কেউ কউ দেখেছেন। ১৯৪৫ থেকে ’৫৫ সালের মধ্যকার ঘটনা নিয়ে নিউইয়র্ক শহরের অপরাধ জগতের যে কাহিনী মারিও পুজো তার বইতে তুলে ধরেছেন তা তাবৎ দুনিয়ার অপরাধ জগতের জন্য একটি মাইলস্টোন হয়ে রয়েছে। চুপচাপ ভদ্রলোকের মতো অভিব্যক্তি নিয়ে সমাজের মধ্যে ঘাঁপটি মেরে থেকে কত বড় জঘন্য ও লোমহর্ষক অপরাধ ঘটানো সম্ভব তার একটি নিখুঁত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে গডফাদার উপন্যাসটিতে।
বিংশ শতাব্দীর বিশ্ব অপরাধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভয়ঙ্কর সব অপরাধীর জন্ম হয়েছে যাদের কুকর্মের রেশ সংশ্লিষ্ট দেশ-জাতি শত বছর ধরে বহন করে চলেছে। পাক-ভারতের গুন্ডারাজ ও কুখ্যাত অপরাধ জগতের ডন হাজী মাস্তানের উত্থান হয়েছিল সেই পঞ্চাশের দশকে যার হাত ধরে দাউদ ইবরাহিম, ছোটা শাকিল, ছোটা রাজন প্রমুখ ভয়ঙ্কর মাফিয়া ডন অদ্যাবধি এশিয়া-ইউরোপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জঘন্য সব অপরাধের ঝাণ্ডা তুলে। যাদের কিছুটা প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে বিভিন্ন সময়ে। আজকের নিবন্ধে আমি আমার নিজের কাহিনী বলতে গিয়ে দুনিয়া কাঁপানো ভয়ঙ্কর ডনদের কিছু ইতিবৃত্ত বর্ণনা করলাম এই কারণে যে, আমার কুকর্মগুলোর গুরুত্ব ও প্রভাব যাতে আপনারা সহজে অনুধাবন করতে পারেন।
আপনারা জেনে হয়তো অবাক হবেন, আমি আমার কুকর্মগুলোকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অমর করার জন্য বিশ্বের অপরাধ জগতের অতীত-বর্তমানের নানান চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছি। খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, মাদক পাচার, সোনা চোরাচালান, আন্তর্জাতিক মাদক ও মানব পাচারের লাভ-ক্ষতি, ঝুঁকি এবং সাড়া জাগানো সফলতা পর্যালোচনা করে আমার মনে হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেয়ে ভয়ঙ্কর, নিকৃষ্ট ও অমানবিক কোনো অপরাধ সমসাময়িক দুনিয়ায় নেই। এই কুকর্মের মাধ্যমে আমি আগামী হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের অভিশাপের বিষয়বস্তু হিসেবে যেমন শয়তানের উচ্চতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারব তেমনি দেশ-জাতির মেধা ও মননশীলতা এবং সৃষ্টিশীলতা ধ্বংসের মহানায়করূপে মারিও পুজোর গডফাদারের আব্বার মর্যাদায় ইতিহাসে আলকাতরার উজ্জ্বলতায় অমরত্ব লাভ করতে পারব।
আমি আমার কুকর্ম শুরু করার আগে খুব ভালো করে নিজেকে জানার চেষ্টা করেছিলাম। মহামতি সক্রেটিসের ‘নিজেকে জানো’ সূত্রের মূলমন্ত্র হলো— নিজের অন্তর্নিহিত যোগ্যতা, রুচি, বিবেক, বুদ্ধিমত্তা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও দক্ষতার সঙ্গে কর্মের সংযোগ থাকতে হবে। সক্রেটিসের সূত্র পর্যালোচনা করে আমি বুঝেছি, পচা, নোংরা ও দুর্গন্ধময় স্থানে আতর ছিটানো হলে যেমন লাভ হয় না তেমন পূতপবিত্র স্থানে কোনো নোংরা জীবাণু বাস করতে পারে না। আমাদের সমাজের বর্তমান চালচিত্র, মানুষের মন-মানসিকতা এবং সার্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে আমার মনে হয়েছে এখন বেশির ভাগ লোক প্রতিযোগিতা করতে চায় না। তারা ফাঁক-ফোকর খুঁজে ধাপ্পা মেরে সফল হতে চায়। তারা মুখে বড় বড় নীতিকথা বলে কিন্তু সুযোগ পেলে জঘন্য অপকর্মটি করে বসে। তারা পরের ধনে পোদ্দারি, অন্যের অনুগ্রহভাজন হয়ে পরগাছা কিংবা চাটুকার, দালাল ও আগাছা হিসেবে বেঁচে থাকাটাকে গৌরবের বিষয় বলে মনে করে। জাল-জালিয়াতি, ঘুষ-দুর্নীতি, পরধন ও পরনারী হরণকে তারা এক ধরনের সফলতা বলে কাণ্ডজ্ঞান করে। তারা মন্দ মানুষের সংসর্গ, মন্দ মাহফিলে হাজির ও মন্দ কাজে ব্যুৎপত্তি অর্জনের জন্য রীতিমতো হররোজ একজন অন্যজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে।
বাংলাদেশের একশ্রেণির মানুষের উল্লিখিত অবক্ষয়ের কারণে যে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা অপরাধ রাতারাতি জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে লোকজনের কাছে অতিদ্রুত সহনীয় হয়ে যায়। মানুষের এই নৈতিক অবক্ষয় পুঁজি করে দীর্ঘ মেয়াদে একটি রাজকীয় ব্যবসা করার জন্য আমি বহুদিন থেকে চিন্তাভাবনা করছিলাম। আমি এমন একটি দুই নম্বরি ধান্ধার কথা ভাবছিলাম যার মাধ্যমে আমি বংশপরম্পরায় শত শত কোটি অবৈধ টাকা যেমন আয় করতে পারব তেমন রাষ্ট্রশক্তির দুর্নীতিবাজ শ্রেণিটিকে জড়িয়ে দেশ-জাতিকে দীর্ঘ মেয়াদে রসাতলে নিয়ে যেতে পারব। মাদক, সোনা, নারী ও শিশু পাচারের জন্য যেমন দেশব্যাপী শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক দরকার তেমন আমার ধান্ধার জন্যও তার চেয়ে অধিক শক্তিশালী, কার্যকর ও দক্ষ নেটওয়ার্ক দরকার পড়বে। তবে ওইসব ধান্ধায় যেমন ঝুঁকি থাকে তেমনটি আমারটিতে থাকবে না। বরং সবকিছু করার পরও কেউ আমার টিকিটি বা কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না— উল্টো সবাই সব দায় রাষ্ট্রশক্তির ওপর চাপাবে। এসব দিক পর্যালোচনা করে আমার মনে হলো যে, জাতীয় পর্যায়ের সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেয়ে লাভজনক, সুবিধাজনক ও নিরাপদ ধান্ধা দুনিয়ায় আর দ্বিতীয়টি নেই।
সব প্রতিযোগিতামূলক প্রশ্নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিযোগীর সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবে না। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষায় প্রতি বছর কম করে হলেও এক কোটি আদম সন্তান অংশগ্রহণ করে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় বছরে এক থেকে দেড় কোটি ছেলেমেয়ে অংশগ্রহণ করে। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষায় বছরে প্রায় দেড় কোটি চাকরিপ্রার্থী অংশগ্রহণ করে। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় চার কোটি হরেক রকম প্রশ্ন ছাপা হয়। সুতরাং আমি যদি মাত্র এক কোটি লোভী, স্বার্থপর, বিবেকহীন, চরিত্রহীন ও ধান্ধাবাজ অমানুষ প্রতিযোগীকে আমার নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে পারি তবে বিশাল এক বাণিজ্য সাম্রাজ্য গড়ে তোলা সম্ভব। আমি যদি প্রতি সেট প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য পাইকারি হারে মাত্র এক হাজার টাকা গ্রহণ করি তবে আমার বার্ষিক মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার কোটি টাকা।
প্রশ্ন ফাঁসের জাল-জালিয়াতির উল্লিখিত অর্থযোগের হিসাব-নিকাশ করার পর লোভে আমার জিব লিক লিক করতে শুরু করল। আমি চিন্তা করলাম— খুব বেশি দক্ষতা, অতীব সতর্কতা এবং সর্বস্তরে বেইমান, মুনাফিক ও মীরজাফর প্রকৃতির এজেন্ট নিয়োগ করতে না পারলে আমার কর্মে সফলতা আসবে না। সুতরাং নিজেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতা এবং আগামী দিনের ভয়ঙ্কর ডন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমি মহামতি সক্রেটিসের ‘নিজেকে চেনো’র সূত্র মোতাবেক কতগুলো আত্মসমালোচনা এবং আত্মজিজ্ঞাসার নীতি অনুসরণ করলাম। আমি জানি যে, প্রশ্ন ফাঁস জালে আটকিয়ে অধঃপতনের প্রান্তসীমায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অযোগ্যকে যোগ্য বানিয়ে এবং যোগ্যকে অযোগ্য বানিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উল্টে দিয়ে স্বয়ং বিধাতার আইন রহিত করার দুঃসাহসিক ও অভিশপ্ত চ্যালেঞ্জটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। পৃথিবীতে যত অঘটনঘটনপটীয়ান কাজ রয়েছে তার মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসই হলো আধুনিককালের সর্বনিকৃষ্ট প্রলয়ঙ্করী অঘটন। আমি প্রশ্ন ফাঁসের মতো জঘন্য একটি কাজ কোনো অনুশোচনা এবং অপরাধবোধ ছাড়াই নির্ভয়ে করতে পারব কিনা এমন প্রশ্নে নিজেকে জর্জরিত করলাম। আমার পাপী মন সদম্ভ উত্তর করল— ওরে হতভাগা! তুই পারবি না তো কে পারবে। পাপের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে তোর জন্ম হয়েছে। আজীবন তুই পাপ পঙ্কিলতার মাঝে বেড়ে উঠেছিস। তুই যেমন তোর পিতৃপরিচয় জানিস না তেমন তোর মাও জানেন না কার ঔরসে তোর ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের রংমহলের নটীর গর্ভজাত সন্তান কী করে বলবে তার পিতা কি কোনো হানাদার সামরিক কর্তা নাকি তাদের দোসর কোনো রাজাকার অথবা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার। আমার মনের চাঁছাছোলা উত্তরে আমি একটুও বিচলিত বা বিক্ষুব্ধ হলাম না— বরং মুহাহাহা শব্দে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। আমার মন পুনরায় বলল— ওরে নরকের কীট! তুই পারবি! এখন তোর মতো কয়েক শ জাহান্নামের কীটকে সহযোগী হিসেবে খুঁজে বের কর এবং দক্ষতার সঙ্গে কুকর্ম সাধনের জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ কর।
মনের পরামর্শমতো আমি পুরোদমে প্রশ্ন ফাঁস প্রকল্পে আত্মনিয়োগ করলাম। বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য আমি উগান্ডার বিখ্যাত প্রশ্ন ফাঁস চক্রের হোতা ঘাম্বুসার কাছে চলে গেলাম। তিনি আমার মনের কথা শোনার পর আমাকে বিখ্যাত উগান্ডা ও তানজানিয়া সীমান্তের গভীর জঙ্গলের মধ্যে স্থাপিত একটি শুয়োরের খামারে ১৫ দিন বসবাস করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিলেন। পরবর্তীতে তিনি রোজ পঞ্চাশ তলা সিঁড়ি বিশেষ নিয়মে ওঠানামা করার কাজ দিলেন। আমার গুরু ঘামু্বসার নির্দেশমতো আমি শুয়োরের সঙ্গে বসবাস করে এবং চোখ বুজে একসঙ্গে দুটো ধাপ অতিক্রম করে সিঁড়ি বেয়ে নামতে ও উঠতে শিখলাম। এরপর গুরু আমাকে কিছু নোংরা, পচা ও বীভৎস জিনিস খাওয়ার অভ্যাস করতে বললেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, বল তো বৎস! এসব তোমায় কী যোগ্যতা দিয়েছে? আমি সদম্ভে বললাম— শুয়োরের সঙ্গে থেকে আমি আমার মন-অভিরুচি, ব্যক্তিত্ব ও চালচলনকে যথাসম্ভব নোংরা ও কদর্য করার যোগ্যতা অর্জন করেছি। দ্বিতীয়ত, সিঁড়িতে ওঠানামার মাধ্যমে আমি শরীর ও মনের ওপর এক ধরনের আধিপত্য কায়েম করেছি। তৃতীয়ত, অখাদ্য খেয়ে নিজের পেট-মাথা, মুখ-নাক, কান এবং পায়ুপথের চরিত্র, যোগ্যতা ও গুণাগুণ এক করে ফেলেছি।
আমার গুরু আমার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ও জবাবে ভারি খুশি হলেন। দ্বিতীয় ধাপে তিনি আমার কর্মের সফলতার পূর্বশর্ত হিসেবে কুকুর্মের সঙ্গী-সাথী নির্বাচন, আর্থিক লেনদেন এবং বড় বড় স্পর্শকাতর কেন্দ্রে মোটা অঙ্কের ঘুষ প্রদানের বাহারি কৌশল শেখাতে আরম্ভ করলেন। তিনি বললেন, ওহে বৎস! তোমার চেহারার শয়তানি ছলচাতুরী এবং কথাবার্তার নমুনা দেখে মনে হচ্ছে হারামিপনায় তুমি বিশ্বরেকর্ড অর্জনের ক্ষমতা রাখো। কিন্তু মনে রেখো, তুমি যদি তোমার কুকর্মের জন্য উপযুক্ত সঙ্গী-সাথী, হোতা ও পৃষ্ঠপোষক নির্বাচন করতে না পারো তবে মাঠে মারা যাবে। এ কাজ করার জন্য সবার আগে তোমার দুটি যোগ্যতা লাগবে। প্রথমত, মানুষ চেনার ক্ষমতা এবং দ্বিতীয়ত, নির্ধারিত মানুষকে ছলেবলে কৌশলে আপন কর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করা। এরপর তুমি তোমার অর্জিত অর্থকে নিখুঁতভাবে তোমার সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে বণ্টন করে দেবে এবং দিন দিন তাদের লোভ ও লালসাকে বাড়াতে বাড়াতে গগনচুম্বী বানিয়ে ফেলবে।
গুরু ঘাম্বুসা আরও বললেন, মানুষের কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণগত দিক রয়েছে যার মাধ্যমে তুমি সহজেই লোভী, চরিত্রহীন, নীতি ও কাণ্ডজ্ঞানহীন নিষ্ঠুর প্রজাতির মানুষকে খুঁজে বের করতে পারবে। এরপর তুমি অর্থ, মদ ও যৌনতা দ্বারা তাদের লোভ-লালসা, কামনা-বাসনার পরিধি যাচাই-বাছাই করবে। তৃতীয় ধাপে তুমি তাদের পারিবারিক ঝামেলা ও চাহিদা জন্মবৃত্তান্ত ও মন-মানসিকতা তোমার সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করবে। সবকিছু ঠিকঠাকমতো পেলে কোনো এক শুভক্ষণে শয়তানকে সাক্ষী মেনে নির্ধারিত সঙ্গী-সাথীকে দোস্ত বানিয়ে নাও এবং আপন কর্মে সর্বশক্তি নিয়োগ করে নেমে পড়বা। মনে রাখবা— পরিকল্পনামতো এগোতে পারলে সফলতার নিশ্চয়তা শতভাগ। প্রশিক্ষণের এই পর্যায়ে গুরু আমাকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের জটিল প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য হাতে-কলামে শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে উগান্ডার সরকারি দফতরগুলোয় নিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে যেসব লোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং সেসব লোকের কাছ থেকে যা শ্রবণ করলাম তাতে মনে হলো লোকগুলো হয়তো আমার অনেক আগেই শুয়োরের খামারে কয়েক বছর রাতযাপন করে এসেছে।
গুরু ঘাম্বুসার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে আমি কর্মযজ্ঞ শুরু করে দিলাম এবং অতি অল্পকালের মধ্যে ব্যাপক সফলতা অর্জন করলাম। আজ আমার অর্থকড়ি, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা দেখে দেশের অন্যান্য সেক্টরের কুকর্মের ডনেরা সকাল-সন্ধ্যায় আমার পদচুম্বন করে আমার শিষ্য হওয়ার জন্য আবেদন-নিবেদন করতে থাকে। দেশের অন্যান্য কেলেঙ্কারির হোতারা আমার সাফল্যে রীতিমতো বিস্মিত, অভিভূত ও বিমোহিত। কারণ আমার সফলতা ও ফল ভোগের কাহিনী রূপকথার সেই প্রবাদবাক্য— খায় দায় চিকন আলী মোটা হয় রমজানের মতো। অর্থাৎ কর্ম করি আমি আর দায়ী হয় অন্যজন। আমার কুকর্মের নেটওয়ার্কে আমি মহাশক্তিশালী এক রাজাধিরাজ। আমার হুকুম, আমার ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এমন কোনো শক্তি বিগত দিনে হয়নি। অন্যদিকে, আমার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন কাউকে আমি আস্ত রাখি না। অথচ এত কিছুর পরও কেউ আমার টিকিটি স্পর্শ করা দূরের কথা, আমার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারে না।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে লোকজনের বুদ্ধিশুদ্ধি কোন স্তরে নেমে গেছে তা অনুধাবন করার জন্য আপনার খুব বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনি আপনার নিজস্ব বোধবুদ্ধি, সহ্য করার অবর্ণনীয় ক্ষমতা, দেখেও না দেখার ভান করার অভিনব কৌশল ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দ্বারাই পরিস্থিতি অনুমান করতে পারবেন। আমি যদি প্রশ্ন করি, আচ্ছা বলুন তো! কেন কেউ আমার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারে না? এবার আপনি মনে মনে চিন্তা করুন কী উত্তর দেবেন? আমি শতভাগ নিশ্চিত, পরিস্থিতির চাপে আপনার বুদ্ধিনাশ ঘটেছে। ফলে সঠিক উত্তরটি দিতে পারবেন না। এবার আমার মুখ থেকে সঠিক জবাবটি জেনে নিন। ‘কেউ আপনার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারে না কারণ আমার মাথায় যে কোনো কেশই নেই।’ এবার বুঝলেন তো, কত বড় ফাটকির (ভ্রান্তি) মধ্যে রয়েছেন!
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।
বিডি-প্রতিদিন/২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব
 
                         
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        