৫ জুলাই, ২০২২ ১৫:২৬

দুঃসময়ের ছাত্রলীগ নেতা আনিসের আত্মহনন, দায় কার?

অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু

দুঃসময়ের ছাত্রলীগ নেতা আনিসের আত্মহনন, দায় কার?

প্রতীকী ছবি

কাজী আনিসুর রহমান পোড় খাওয়া একজন ত্যাগী ছাত্রনেতা ছিলেন।  স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। সে সময় কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতি করা অত্যন্ত দুরুহ ব্যাপার ছিল। কুষ্টিয়ায় তখন হাতেগোনা স্বল্পসংখ্যক মানুষ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ করতো। আওয়ামী রাজনীতির চরম দুঃসময়ে তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

আজ আওয়ামী লীগের সুসময়ে নিজের পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যা করেছেন। পত্রিকার খবরে প্রকাশ হেনোলাক্স কোম্পানির সাথে ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি তার সারা জীবনের  সঞ্চয় ওই কোম্পানীতে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু হেনোলাক্সের মালিক  তাঁর সাথে বেঈমানি করে।

মৃত্যুর পূর্বে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে হেনোলাক্স কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে গেছেন। তাঁর সকল কষ্টের কথা বলে গেছেন।  তিনি তাঁর পাওয়া টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার না পেয়ে এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। একজন মানুষ কতটা কষ্ট পেলে নিজের স্ত্রী-সন্তান, পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে আত্মহত্যা করতে পারেন; তা সহজেই অনুমেয়। 

আমি খুব কাছ থেকে আনিসকে দেখেছি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ায় স্হানান্তরের পর আমরা একসাথে কুষ্টিয়ায় স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে  লড়াই করেছি। অসাধারণ একজন সংগঠক ও ত্যাগী নেতা ছিলেন আনিস। কুষ্টিয়ায় হরতালের মিছিল থেকে আমার সাথে আনিসও গ্রেফতার হয়েছিলেন।

আনিসদের মেধা, শ্রম ও আত্মত্যাগে আওয়ামী লীগ আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অথচ আনিসের প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের শাসনামলেই তাঁর পাওনা টাকা আদায় করতে না পারেননি। জীবন যুদ্ধে পরাজিত সেই দুঃসময়ের মুজিব রণাঙ্গনের সাহসী যোদ্ধা আনিস আজ  আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। আনিসের আত্মহত্যা কি শুধুই আত্মহত্যা - নাকি হত্যা? এ দায় কার? আমি মনে করি এটা আত্মহত্যা নয়। একটি হত্যাকাণ্ড।  হেনোলাক্স কোম্পানি আনিসকে তিলে তিলে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছে। এই  হত্যাকাণ্ডের  দায় অবশ্যই হেনোলাক্সের মালিককেই  নিতে হবে।

আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ; 
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ খবর