শাড়ি বাঙালি নারীর সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক; যা সঠিক গহনার মেলবন্ধনে পূর্ণতা পায়। গহনা আপনার ব্যক্তিত্ব ও রুচি ফুটিয়ে তোলে। তবে ট্রেন্ডের চেয়ে আপনার নিজস্ব স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দিন। কারণ, এতেই সাজে আসে আসল পূর্ণতা
শাড়ি বাঙালি নারীর চিরন্তন সৌন্দর্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক। আর এই শাড়ির সাজে পূর্ণতা এনে দেয় মানানসই গহনা। গহনা কেবল একটি অলংকার নয়, এটি আপনার ব্যক্তিত্ব এবং রুচির প্রতিচ্ছবি। শাড়ির রং, বুনন, আর স্টাইলের সঙ্গে যদি গহনার সঠিক মেলবন্ধন না হয়, তবে পুরো সাজটাই ফিকে হয়ে যেতে পারে। তাই আজ আমরা স্টেটমেন্ট জুয়েলারি যেমন ঝুমকা, চুড়ি, গাজরা ইত্যাদির সঙ্গে শাড়ির রং ও স্টাইলের দারুণ কম্বিনেশন তৈরির কিছু ফ্যাশন পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করব।
ঝুমকা : ঐতিহ্যে আধুনিকতা
ঝুমকা বাঙালি নারীর কাছে কানের দুল বা কেবল অলংকার নয়, আবেগ আর ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। এর ছন্দময় দুলুনি শাড়ির সঙ্গে এক দারুণ আবেদন তৈরি করে।
► ভারী কাজের ঝুমকা ও বেনারসি/জামদানি : উৎসব বা বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে বেনারসি বা জামদানি শাড়ির সঙ্গে ভারী কারুকাজ করা সোনালি বা অ্যান্টিক ঝুমকা অসাধারণ লাগে। শাড়ির পাড় বা কাজের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ঝুমকার পাথর বা কুন্দনের কাজ থাকলে তা সাজকে আরও জমকালো করে তোলে। যেমন- একটি লাল বেনারসির সঙ্গে গোল্ডেন পোলকি ঝুমকা রাজকীয় রূপ দেবে।
► ছোট ঝুমকা ও সুতি/সিল্ক : দৈনন্দিন বা হালকা অনুষ্ঠানে সুতি, লিনেন অথবা হালকা সিল্কের শাড়ির সঙ্গে ছোট বা মাঝারি আকারের ঝুমকা বেছে নিতে পারেন। অক্সিডাইজড সিলভার বা রঙিন সুতার কাজ করা ঝুমকা এই ধরনের শাড়ির সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া আনে। যেমন- একটি একরঙা সুতির শাড়ির সঙ্গে রঙিন সুতার ঝুমকা সাজে সতেজতা আনবে।
► রঙিন ঝুমকা ও ফ্লোরাল শাড়ি : ফ্লোরাল প্রিন্টের শাড়ির ক্ষেত্রে শাড়িতে ব্যবহৃত কোনো একটি রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ঝুমকা বেছে নিতে পারেন। এতে সাজে সামঞ্জস্য আসবে এবং চোখে আরাম দেবে।
চুড়ি : হাতে জাদুর স্পর্শ
হাতভর্তি চুড়ি ছাড়া বাঙালি নারীর সাজ যেন অসম্পূর্ণ। চুড়ির ধরন আপনার শাড়ির স্টাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া জরুরি। বেনারসি, কাঞ্জিভরম, বা ভারী সিল্কের শাড়ির সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী গোল্ডেন বা মেটাল চুড়ি দারুণ মানায়। এক সেট চওড়া চুড়ি অথবা একাধিক সরু চুড়ির কম্বিনেশন ক্ল্যাসিক লুক দিতে পারে। তা ছাড়া হ্যান্ডলুম, কটন বা জামদানি শাড়ির সঙ্গে অক্সিডাইজড সিলভারের চুড়ি এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এটি ফিউশন লুক আনে, যা আধুনিক নারীদের পছন্দের। হালকা কাজের শাড়ি বা প্রতিদিনের শাড়ির সঙ্গে বিভিন্ন রঙের কাচের চুড়ি বাঙালি সাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কাচের চুড়ি হাতে এক দারুণ ঝলমলে ভাব আনে।
ফুলের সুবাসে রূপের স্নিগ্ধতা
গাজরা বা ফুলের মালা কেবল চুলের সাজ নয়, এটি আপনার সাজে স্নিগ্ধতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যোগ করে। ঐতিহ্যবাহী সাজে গাজরার ব্যবহার খুবই প্রচলিত। সাদা রজনীগন্ধা বা জুঁই ফুলের গাজরা যে কোনো রঙের বেনারসি, জামদানি বা সিল্কের শাড়ির সঙ্গে মানানসই। এটি সাজে এক ধরনের ক্ল্যাসিক ও মার্জিত ভাব এনে দেয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে এর আবেদন অনবদ্য। হালকা রঙের বা ফ্লোরাল প্রিন্টের শাড়ির সঙ্গে গোলাপ বা অন্য রঙিন ফুলের গাজরা ব্যবহার করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে ফুলের রং যেন শাড়ির সঙ্গে খুব বেশি কনট্রাস্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা ভালো।
গহনা ও শাড়ির স্টাইল
► নেকলেস : যদি আপনার শাড়ির গলা ডিজাইন করা হয় বা শাড়িটি জমকালো হয়, তবে ভারী নেকলেসের বদলে একটি চিকন চেইন বা ছোট পেনডেন্ট পরুন। আর যদি শাড়ি সাধারণ হয়, তবে একটি স্টেটমেন্ট নেকলেস দিয়ে সাজে নাটকীয়তা আনতে পারেন।
► আংটি : হাতে চুড়ি ও ব্রেসলেট থাকলে আংটির ক্ষেত্রে হালকা ডিজাইন বেছে নিন। আবার যদি হাতে কিছু না পরেন, তবে একটি বড় আকারের ককটেল রিং আপনার সাজে গ্ল্যামার যোগ করবে।
শাড়ি আর গহনার এই মেলবন্ধন মূলত আপনার নিজস্ব রুচি আর আত্মবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। ট্রেন্ড অনুসরণ করার চেয়ে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দিন। কারণ, যখন আপনি নিজের সাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, তখনই আপনার সৌন্দর্য পূর্ণতা পাবে।