মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
আজ কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস

বিশ্বকবির শেষ দিনগুলো

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাওড়া রেলস্টেশনের একটি কক্ষে বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ছবিটি প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালের ২২ নভেম্বর

রকমারি ডেস্ক

বিশ্বকবির শেষ দিনগুলো

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শ্রাবণের বৃষ্টিভেজা এক দিনে তিনি বিদায় নেন। পার্থিব প্রয়াণ হলেও সাহিত্যে, অনুভবে তিনি জয় করেছেন কাল-মহাকাল। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। কবিগুরু তিনি। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি আঙিনা তিনি সাজিয়েছেন, ফুলেল বাগান গড়েছেন তিনি। বাইশে শ্রাবণ নশ্বর শরীরের বিদায় হলেও কবিগুরু তার কর্মে আমাদের মাঝে বর্তমান আছেন, থাকবেন। কবির ভাষায় বলা যায়, ‘জীবনে মৃত্যু করিয়া বহন প্রাণ পাই যেন মরণে।’

তিনি আরও লিখে গেছেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে/জীবন হৃদয় মাঝে যদি স্থান পাই।’

জীবনের শেষ দিনগুলোয় একাধিক অসুখ ভর করেছিল কবিগুরুকে। নানারকম ওষুধেও কাজ হচ্ছিল না। সে সময় তিনি শান্তিনিকেতনে ছিলেন। রোগ উপশমে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কবিগুরুর তাতে মোটেও মত ছিল না। তিনি বলেছিলেন, ‘মানুষকে তো মরতেই হবে এক দিন। একভাবে না একভাবে এই শরীরের শেষ হতে হবে তো, তা এমনি করেই হোক না শেষ। মিথ্যে এটাকে কাটাকুটি ছেঁড়াছেঁড়ি করার কী প্রয়োজন?’ কিন্তু তিনি যে অসহনীয় যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন। তার উপশমের জন্য দেহে অস্ত্রোপচার করতেই হবে বলে মত ছিল চিকিৎসকদের। সব শেষে কবিকে রাজি করিয়ে আনা হয় কলকাতায়। আর সেটাই ছিল রবীন্দ্রনাথের শেষবারের মতো শান্তিনিকেতন ছেড়ে আসা। ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আনা হয় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। হাঁটার মতো অবস্থা না থাকায় স্ট্রেচারে করে তাকে দোতলায় নিতে হয়েছিল। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আপন লোক পেয়ে বেশ প্রফুল্ল ছিলেন। পরদিন ৮০ বছরের রবীন্দ্রনাথ ৭০ বছর বয়সী ভাইপো অবনীন্দ্রনাথের মাঝে অতীত দিনের নানা গল্প হয়। ২৭ জুলাই সকালে রবীন্দ্রনাথ মুখে বলে চললেন, ‘প্রথম দিনের সূর্য প্রশ্ন করেছিল সত্তার নতুন আবির্ভাবে, কে তুমি, মেলেনি উত্তর।’ তা টুকে রেখেছিলেন তারই এক ছাত্রের স্ত্রী রানী চন্দ। ৩০ জুলাই দুপুরের দিকে সম্পন্ন হয় কবির অস্ত্রোপচার। নিজের অসুস্থতার জন্য সৃষ্ট ভারি আবহাওয়া উড়িয়ে দিতে কবি তখনো রসিকতা করলেন, ‘খুব মজা, না?’ শরীরে যথেষ্ট যন্ত্রণা হয়েছিল অপারেশনের সময়। কিন্তু তা বুঝতে দেননি কাউকে। সেদিন ঘুমিয়েছিলেন। পরদিন ৩১ জুলাই যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। গায়ের তাপ বাড়ছে। ১ আগস্ট আর কথা বলেননি তিনি। অল্প পানি আর ফলের রস খেতে পেরেছিলেন। ২ আগস্ট কিছুই খেতে চাইলেন না, কিন্তু বললেন, ‘আহ! আমাকে জ্বালাসনে তোরা।’ তাতেই সবাই খুশি। ৩ আগস্টও শরীরের কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। ৪ আগস্ট সকালে সামান্য কফি খান। জ্বর আরও বাড়ে। ৫ আগস্ট ডা. নীলরতন বিধান রায় এসে স্যালাইন দিলেন কবিকে। অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আনিয়ে রাখা হলো। ৬ আগস্ট বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড়। কিন্তু খিঁচুনি ছিল, রাত ১২টার দিকে আরও অবনতি হলো কবির শরীরের অবস্থা। ৭ আগস্ট ছিল ২২ শ্রাবণ। কবিকে সকাল ৯টার দিকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে ক্ষীণ হতে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে একেবারে থেমে গেল। সেদিন জনারণ্যে পরিণত হয়েছিল ঠাকুরবাড়ি। শোকের মিছিলে জমায়েত হয়েছিল সবাই। সেদিন শরীরের বিদায় হলেও আনন্দে, বেদনায়, দ্রোহে এখনো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির প্রেরণার প্রধানতম উৎস। তার দর্শন এখনো বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মনের খোরাক জোগায়। বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়। সত্যিকার অর্থেই কাল জয় করেছেন রবীন্দ্রনাথ। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর