রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুমিনের কোরবানি

মুমিনের কোরবানি

একবার সাহাবিগণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! কোরবানি কী? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:)-এর সুন্নাত। কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো তিনটি। যথা- পশু জবেহ করার মাধ্যমে মূলত নিজের নফছকে কোরবানি করা ও তাকওয়া অর্জন করা। বিস্তারিত লিখেছেন- মেরাজুল ইসলাম

 

কোরবানি এটি আরবি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে নৈকট্য, সান্নিধ্য, উৎসর্গ। পরিভাষায় কোরবানি বলা হয়- নির্দিষ্ট দিনে হালাল প্রাণীর মধ্য থেকে চার পা বিশিষ্ট যে কোনো প্রাণী আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা। এটি যদিও হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নাত, কিন্তু ছেলে কোরবানির কাজটি আল্লাহর কাছে খুব পছন্দনীয় হওয়াতে পরবর্তীতে উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য ইবাদত হিসেবে এটি ওয়াজিব করা হয়েছে। একবার সাহাবিগণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসলুুল্লাহ! কোরবানি কী? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাত। কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো তিনটি। যথা- পশু জবেহ করার মাধ্যমে মূলত নিজের নফছকে কোরবানি করা ও তাকওয়া অর্জন করা। নফছ কোরবানি হলেই তাকওয়া অর্জন হবে। কারণ মনের সঙ্গেই তাকওয়ার সম্পর্ক। দুই. পশু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা। তিন. পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে পালনকর্তার হুকুম পালন করা। যেমন কোরআন ইরশাদ করে, এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। সূরা হজ -আয়াত ৩৭। এই কোরবানির প্রচলন যদিও হজরত আদম (আ.) এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিল থেকে শুরু হয়েছে, কিন্তু অনেক নবী ও রসুলের আগমনে তাদের প্রত্যেক উম্মতের ওপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে কোরবানির রেওয়াজ বহাল ছিল। যেমন- কোরআন ইরশাদ করে, আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেওয়া চতুষ্পদ পশু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের ইলাহ তো একমাত্র ইলাহ। সুতরাং তোমরা তারই অনুগত থাক এবং বিনয়ীগণদের সুসংবাদ দাও। সূরা হজ্ব-আয়াত ৩৪। সকল উম্মতের কোরবানির নিয়ম এক ছিল না। একেক উম্মতের একেক পদ্ধতি ছিল। যেমন হাবিল কাবিলের কোরবানি কবুল হওয়ার আলামত ছিল আসমান থেকে আগুন এসে কবুলকৃত বস্তুকে খেয়ে ফেলত। যেমন কোরআন ইরশাদ করেন, (হে নবী) আপনি তাদের আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা শুনিয়ে দিন। যখন তারা উভয়ে কিছু উৎসর্গ করেছিল, তখন তাদের একজনের উৎসর্গ কবুল হয়েছিল এবং অপরজনের উৎসর্গ গৃহীত হয়নি। সূরা মায়েদাহ- আয়াত ২৭। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, আসমান থেকে আগুনের একটি খ- এসে হাবিলের দুম্বাটি খেয়ে ফেলল। আর কাবিলের কোরবানি নিজ জায়গায় পড়ে রইল। আর ইব্রাহিম (আ.) এর কোরবানি তো সবার কাছেই প্রসিদ্ধ। যেমন কোরআন ইরশাদ করেন, ইব্রাহিম (আ.) বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবেহ করেছি; এখন তোমার অভিমত কী? পুত্র বললেন, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে  তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। সূরা সাফফাত-আয়াত ১০২। এখন দেখার বিষয় হলো- কোরবানির মূল প্রাণ কী ? উত্তর- কোরবানির মূল প্রাণ হলো তাকওয়া,  খোদাভীতি। কারণ, আল্লাহ মানুষের কাছে  গোশত চাননি ও রক্তও চাননি। চান মানুষের মনের তাকওয়া। যেমন কোরআন ইরশাদ করেন, এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। সূরা হজ্ব-আয়াত ৩৭! আর এই কোরবানি দ্বারা সমাজের বা সামাজিক উপকার হলো সমাজে আল্লাহর নাম উচ্চারণের প্রচলন ঘটবে। দুই. যারা মূর্তি বা দেবদেবীর নামে পশু জবাই করে, তাদের এটা হারাম করা হলো। তিন. সমাজে কেয়ামত পর্যন্ত এই ইবাদতের প্রচলন থাকবে। কারণ, কোরবানি এটিও একটি ইবাদত। চার. গোশত ও চামড়ার মাধ্যমে সমাজে ধনী-গরিবের মাঝে কিছুটা হলেও বৈষম্য দূর হবে। কারণ, এটা তো গরিবের অধিকার। আর প্রত্যেক ব্যক্তিই তার অধিকার ফিরে পেলে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হয়। পাঁচ. পশুর চামড়া ও হাড় দিয়ে সমাজের চাহিদাগুলো মিটানো যাবে। ছয়. রপ্তানির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরাট লভ্যাংশ বয়ে আনবে। সাত. ব্যক্তির ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম পালন হবে। আট. আর ব্যক্তির তাকওয়া ও খোদাভীতি হাসিল হবে এবং পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে ছওয়াব পাওয়া যাবে এবং হাশরের ময়দানে সে পশুর সর্বাঙ্গ নিয়ে হাজির হবে। যেমন- হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কোরবানির দিন কোরবানির রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই। আর ওই ব্যক্তি কেয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর ও পশম ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। কোরবানির রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। অতএব, তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পবিত্র মনে কোরবানি কর। -তিরমিজি, ইবনে মাজাহ।

আসুন! আমরা বাহ্যিক পশু কোরবানির মাধ্যমে নিজের নফছকে কোরবানি করি এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে রসুলের বর্ণনা অনুযায়ী পশুর গোশত তিনভাগ করি এবং প্রত্যেক হকদারের কাছে পৌঁছিয়ে দেই। যেমন হজরত আলী (রা.) থেতে বর্ণিত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সময় ধরে ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছেন। মুসলিম, নাসাঈ। এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, সঠিকভাবে গোশত বণ্টন করা হলে তিন দিনের বেশি যাওয়ার কথা নয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে খালেছ নিয়তে কোরবানি করার ও বণ্টন করার তৌফিক দিন। আমিন।

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর