বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

হঠাৎ সম্পদ খোয়ানো ধনকুবেরদের কাহিনি

আবদুল কাদের

বিশ্বে ধনকুবেরের সংখ্যা কমেছে। কমেছে শীর্ষ ধনীদের সম্পদের পরিমাণও। রকেট গতিতে যেসব শীর্ষ ধনীর সম্পদ বেড়েছিল, বৈশ্বিক অস্থিরতায় সেসব ধনীর সম্পদও কমেছে। সাধারণত ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ কমে যাওয়ার পেছনে তাদের ব্যবসার শেয়ারের পতনকে দায়ী করা হলেও বিশ্লেষকদের মতে, দুই বছর ধরে চলমান মহামারি এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শীর্ষ ধনীদের সম্পদ কমেছে। এর বাইরেও বেআইনি লেনদেন, কর ফাঁকি ও আইন ভেঙে নথিভুক্ত সংস্থা থেকে অন্যখানে অর্থ সরিয়ে নেওয়া ইত্যাদি তো আছেই! বিস্তারিত রকমারিতে...

 

বিশ্বের অনেক ধনকুবের আছেন, যারা শেয়ার বাজারের টালমাটালে তাদের সম্পদ হারিয়েছেন। তবে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং এক দশকেরও বেশি সময় বিশ্বের শীর্ষ ধনীর খেতাব ধরে রাখা বিল গেটস ভিন্ন কারণে অর্থ হারিয়েছেন, কারণটি- চ্যারিটি (অনুদান)।

সব সম্পদ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিল গেটস

২০২২ সালের জুলাই; প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস টুইটারে ২০০ কোটি ডলার অনুদানের ঘোষণা দেন। বিশ্বের অন্যতম এই ধনী নিজের প্রতিষ্ঠিত দাতব্য প্রতিষ্ঠানের (বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন) বার্ষিক কার্যক্রমকে আরও বাড়াতে তিনি এ অনুদান দেন। এরপর আরও সম্পদ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমি আমার সব সম্পদ ফাউন্ডেশনে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। এতে আমি বিশ্বের সবচেয়ে ধনকুবেরের তালিকায় নিচে নেমে যাব এবং শেষ পর্যন্ত বাদ পড়ব। বিবিসির খবরে বলা হয়, বিল গেটস বলেছেন, সমাজে তার সম্পদগুলো দান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে বিল গেটস তার সব সম্পদ দান করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তার সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তার সম্পদমূল্য ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে জুলাই মাসে প্রতিশ্রুত দানের অর্থ চলে গেলে বিল গেটসের সম্পদ ১০০ কোটি বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়াবে। ২০০০ সালে বিল গেটস ও তার স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস মিলে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বিশ্বের অন্যতম বড় দাতব্য সংস্থা হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে বিল ও মেলিন্ডার মধ্যে বিচ্ছেদ হলেও উভয়ের সম্মতিতে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চলছে।

 

সম্পদ কমার পরও শীর্ষস্থান অর্জন করেন বার্নার্ড আর্নল্ট

২০২১ সালে টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ককে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হয়েছেন ফ্রান্সের বার্নার্ড আর্নল্ট। ২০২২ সালেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন ফরাসি বিলাসদ্রব্য সংস্থা এলভিএমএইচ-এর এই চেয়ারম্যান। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, আর্নল্টের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার। গেল ডিসেম্বরে প্যারিস ভিত্তিক টাইকুন ফোর্বসের ‘রিয়েল টাইম বিলিয়নিয়ার’ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন তিনি। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, সম্পদ কমার পরও শীর্ষ ধনীর খেতাব অর্জন করেছেন আর্নল্ট। ২০২১ সালে তার মোট সম্পদের মধ্যে ৩৮২ কোটি ডলার কমেছে। উদ্যোক্তার মতে, ওই বছরের শুধু সেপ্টেম্বরেই নতুন মুদ্রাস্ফীতির তথ্য এবং সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ফরাসি বিলিয়নিয়ার ৪০ কোটি ডলারের বেশি হারিয়েছেন। তবে করোনা মহামারির প্রভাব ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে গেল বছর আর্নল্টের সম্পদ প্রায় ৭০ কোটি ডলার কমেছে। কিন্তু সেটা তাকে বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকার শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। উল্টো দিন দিন সম্পদ বেড়েই চলেছে এই ধনকুবেরের।

 

সবচেয়ে বেশি সম্পদ খুইয়ে শীর্ষ ধনকুবেরের খেতাব হারালেন ইলন মাস্ক

মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ এর যথার্থ উদাহরণ- টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথম সারিতে চলে আসেন তিনি। ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যক্তিগত সম্পদের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন মার্কিন ধনকুবের মাস্ক। কিন্তু সে খেতাব ধরে রাখতে পারেননি। মাত্র এক বছর পর ২০২২ সালে ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মূলধন থেকে ২০ হাজার কোটি ডলার খোয়ানোর রেকর্ডও গড়লেন মাস্ক।

এক লাফে ২০ হাজার কোটি ডলার হারানোর নজির আগে কখনো দেখা যায়নি। বিশ্বের ইতিহাসে এত বড় ক্ষতি এটিই প্রথম। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্লুমবার্গের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। যেখানে উঠে আসে ইলন মাস্কের বিপুল অঙ্কের ক্ষতির সংবাদ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-এর জানুয়ারিতে অ্যামাজনকর্তা জেফ বেজোসের পরই ছিলেন মাস্ক, যিনি ২০ হাজার কোটি ডলার বেশি সম্পত্তির মালিক ছিলেন। গাড়ি সংস্থা টেসলার শেয়ার কমে যাওয়াতেই এই বিপত্তি, এমনটা মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

৫১ বছর বয়সী মাস্কের সম্পদ কমছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় টেসলার শেয়ারের পতনের পরে তার সম্পদ ১৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। গত ২৭ ডিসেম্বর ১১ শতাংশ শেয়ার হারিয়েছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি গাড়িতে ৭৫০০ ডলার ছাড় দিচ্ছে টেসলা। এ ছাড়া সাংহাইয়ে এই সংস্থা গাড়ি তৈরির সংখ্যাও কমিয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে নাম উঠে এসেছিল মাস্কের। ডিসেম্বর মাসে তাকে টপকে গেছেন ফরাসি ব্যবসায়ী বার্নার্ড আর্নল্ট। টেসলার ধাক্কার সঙ্গে সঙ্গে টুইটার নিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। তবে টেসলা নিয়ে সমস্যার কথা মানতে নারাজ সিইও মাস্ক। গেল বছর টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নেন ইলন মাস্ক। তারপর থেকেই একাধিক বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে ইলন মাস্ককে। বিশ্লেষকদের মতে, টেসলা নিয়ে খুব একটা সিরিয়াসও নন তিনি। বিনিয়োগকারীদের অনেকেই এমনটা ভাবছেন। আর সে কারণেই টেসলার শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন তারা।

গেল বছর টুইটারে একটি অভ্যন্তরীণ ভোট হয়। যেখানে তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে জানতে চান টুইটারের সিইও পদে তার থাকা উচিত কি না। আর সেই ভোটের ফলাফলে বড় ধাক্কা খান মাস্ক। দেখা যায়, বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্লিগিং সাইটের সিইও পদে মাস্ককে চান না। আর এর পরেই জল্পনা তৈরি হয়েছে, তাহলে মাস্ক কি টুইটের সিইও পদ ছেড়ে দেবেন? আর এই জল্পনার মধ্যেই জানা যায়, তিনি নয়া সিইও খুঁজছেন। আবার এও শোনা যাচ্ছে, তিনি আরও একটি সংস্থা কিনতে চলেছেন। আর এর মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির বড় ধাক্কা। এক লাফে ২০ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে তার। যা টেসলাকর্তার কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।

 

অর্ধেকেরও বেশি সম্পদ খুইয়েছেন জাকারবার্গ

গেল অর্থবছর সবচেয়ে বড় নিট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। ফোর্বস ম্যাগাজিন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ৩৮ বছর বয়সী জাকারবার্গ তার অর্ধেকেরও বেশি সম্পদ হারিয়েছেন। ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তির তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। ফলে মেটার প্রধান নির্বাহী ব্লুমবার্গের বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার তালিকায় ২০তম স্থানে নেমে এসেছেন। বর্তমানে তার সম্পদ কমে হয়েছে মাত্র ৫৫৯ কোটি ডলার।  ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানায়, তাদের বিলিয়নিয়ার তালিকায় থাকা কোনো ধনীর সর্বোচ্চ সম্পদ খোয়ানোর ঘটনা এটি। সবশেষ ২০১৫ সালে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় শীর্ষ দশে ছিলেন বিশ্বের অন্যতম এই ধনকুবের। এর কারণ হিসেবে ফোর্বস জানিয়েছে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটার দরপতন জাকারবার্গকে তলানিতে নিয়ে এসেছে। ফোর্বসের মতে, একই সময়ের চেয়ে গত বছর পর্যন্ত মেটা শেয়ারের দর ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের গোপনীয়তা নীতির পরিবর্তন, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক জনপ্রিয়তার এবং প্রতিযোগিতার কারণে মেটা বিজ্ঞাপন হারায়। প্রাথমিকভাবে এটা ছিল মেটার অধঃপতনের মূল কারণ। মেটাভার্সে ভারি বিনিয়োগের কারণ     এবং এর পরিচালনা মুনাফাও সম্পদ কমার পেছনে দায়ী বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

 

শেয়ারের পতন ও বিচ্ছেদে সম্পদ হারিয়েছেন বেজোস

সম্পদ কমেছে অনলাইন মার্কেটপ্লেস অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের। ১৯৯৪ সালে তিনি অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ২০২১ সালে তিনি অ্যামাজনের ৮৮০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দেন। এরপর ছেড়ে দেন প্রধান নির্বাহীর পদ। থাকেন কেবল নির্বাহী চেয়ারম্যান হয়ে। একই বছর সামান্য সময়ের জন্য নিজের প্রতিষ্ঠানের সম্পদ কমতে দেখেছেন জেফ বেজোস। নিউইয়র্ক পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২১ সালের জুলাই থেকে তার মোট ৯০০ কোটি ডলারের বেশি কমে গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তিনি প্রায় ৬৫৭ কোটি ডলার খরচ করেছেন। এ ছাড়া চাউর হয়েছে, একই বছরের ২৭ অক্টোবর রাতারাতি ২৩০ কোটি ডলার পর্যন্ত হারিয়েছেন। জানা গেছে, তার অনলাইন মার্কেটপ্লেস অ্যামাজন কোম্পানি ছুটির দিনে ধীরগতির বিক্রির পূর্বাভাস দেয়। এর পরই কমতে থাকে শেয়ারের দর।

বাজার বন্ধ হওয়ার পরে শেয়ারের দর ২১ শতাংশের মতো কমেছে। প্রতিষ্ঠানটি রাতারাতি তাদের শেয়ারের দাম ৭৫ কোটি ডলার কমে যায়। ২০১৯ সালে সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি বেজোসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় জেফ বেজোসের। সেই সময় ম্যাকেঞ্জিকে তিনি অ্যামাজনে নিজের শেয়ার থেকে ১৬ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করেন। ফলে এটি ইতিহাসের অন্যতম ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ হিসেবে পরিচিত।

 

বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা থেকে ছিটকে পড়লেন ভারতীয় সেরা ধনকুবের গৌতম আদানি

প্রায় দুই যুগ ধরে ভারতে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন গৌতম আদানি। সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ, খনি, রেল, অবকাঠামো ব্যবসা আরও কত কি! অর্ধশতাধিক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। বর্তমানে ভারতীয় এই ধনকুবের বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী। এবার পরিকল্পনা ছিল শেয়ার বিক্রি করে বড় তহবিল সংগ্রহ করবেন। কিন্তু সব ভেস্তে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ ফার্ম। এ ফার্মটির কাজ হলো কোনো সংস্থার শেয়ার বিক্রিতে কারসাজি হচ্ছে কি না, সংস্থাগুলোর বাজার থেকে নেওয়া ঋণে স্বচ্ছতা আছে কি না- বিষয়টি যাচাই করা।

 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিনডেনবার্গ রিসার্চ ফার্ম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শেয়ার কারসাজি এবং আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ। বেআইনি লেনদেন, কর ফাঁকি ও আইন ভেঙে নথিভুক্ত সংস্থা থেকে অন্যখানে অর্থ সরিয়ে নিয়েছে আদানি শিল্পগোষ্ঠী। আর তাতেই রাতারাতি মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর শেয়ার দর। অনিয়মে নড়ে উঠল আদানি সাম্রাজ্যের ভিত। প্রতিবেদনটি প্রকাশ্যে আসতেই ভারতের শেয়ারবাজারে শোরগোল পড়ে যায়। রাতারাতি মুখ থুবড়ে পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর শেয়ার। আদানির মূল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এরই মধ্যে তারা ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড ও আদানি টোটাল গ্যাসের মতো কিছু সহযোগী সংস্থা দৈনিক ২০ শতাংশ পতনের সীমা স্পর্শ করেছে। আদানি গ্রুপের ১০টি কোম্পানির বাজার মূলধন প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা কমেছে। ২৪ জানুয়ারি যেখানে আদানি গ্রুপের মার্কেট ক্যাপ ছিল ১৯ লাখ কোটি টাকা, তা ২৭ জানুয়ারিতে কমে হয় ১৫ লাখ কোটি টাকা। আদানি গ্রুপের অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরেও টালমাটাল অবস্থা। মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের শেয়ারগুলো লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ভারতীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বীমা কোম্পানি আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোয় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বা ঋণ দিয়েছে। আদানি গ্রুপকে বড় ধরনের ঋণ দেওয়া বীমা ও ব্যাংকগুলোয় এক ধরনের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।  আদানি গোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। তবে এ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যবসায়ী সংস্থার ঋণ-মূল্যের সমপরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে ব্যাংকের হাতে।

 

হিনডেনবার্গ রিসার্চ অনুযায়ী, স্পষ্টভাবে আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগকারীরা বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২৪ থেকে ২৭ জানুয়ারি আদানি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কোম্পানির ক্ষতির পরিমাণ- আদানি টোটাল গ্যাসে ৬ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা, আদানি এন্টারপ্রাইজ ৩ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা, আদানি পোর্টস ৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, আদানি ট্রান্সমিশন ৩ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, অম্বুজা সিমেন্টস ১ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা, আদানি গ্রিন এনার্জি ৮৭১ কোটি টাকা, এসিসি ৫৪৪ কোটি টাকা। বর্তমানে লিকুইড ক্রাইসিস বা নগদ টাকার অভাবে ধুঁকছে আদানি গোষ্ঠী। আলোচিত প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে তার অবস্থান ছিল তৃতীয়। হঠাৎ শেয়ার মূলধন হারিয়ে ধনীদের তালিকায় তার অবনমন হয়েছে। বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষ ১০ থেকে ছিটকে পড়েন আদানি। তবে এত বড় অবনমনের পর এখনো এশিয়ার শীর্ষ ধনী আদানি।

 

অর্ধেক সম্পদ হারালেন এশিয়ার ধনী নারী ইয়াং হুইয়ান

নগদ অর্থ সংকটে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারী ইয়াং হুইয়ান তার অর্ধেকেরও বেশি সম্পদ হারিয়েছেন। চীনের প্রপার্টি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান কান্ট্রি গার্ডেনের বেশির ভাগ শেয়ারের মালিক ইয়াং হুইয়ান। এক বছর আগে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৩০ কোটি ডলার। ইয়াংয়ের সেই সম্পদ এক বছরের ব্যবধানে ৫২ শতাংশের বেশি কমে দাঁড়িয়েছে ১১৩ কোটি ডলার। ব্লুমবার্গের বিলিয়নিয়ার সূচক তথ্যে জানা গেছে, গুয়াংডংভিত্তিক কান্ট্রি গার্ডেনের হংকংয়ে তালিকাভুক্ত শেয়ারের মূল্য ১৫ শতাংশ কমে যাওয়ার পর কোম্পানিটি নগদ অর্থ সংগ্রহের জন্য নতুন শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিল। এই ঘোষণার পর বুধবার ইয়াংয়ের সম্পদের ওপর বড় এক ধাক্কা এসেছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, কান্ট্রি গার্ডেনের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াং হুইয়ানের বাবা ইয়াং গুওকিয়াং ২০০৫ সালে কোম্পানির উত্তরাধিকার হিসেবে সব সম্পদের মালিকানা তার মেয়ের কাছে হস্তান্তর করেন। হংকংয়ে এই ডেভেলপার কোম্পানির প্রাথমিক কার্যক্রম শুরুর পর তিনি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারী হয়ে ওঠেন। কিন্তু এখন শুধু নামেই এশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারীর তকমা ধরে রেখেছেন তিনি। এখন চীনের রাসায়নিক ফাইবার টাইকুন ফ্যান হংওয়েই শীর্ষ ধনীর নারীর খেতাব অর্জন করেন।

সর্বশেষ খবর