ঝুপ করে শীত নামলো বিকেলে। ভয়ানক শীত। গা হাত পা ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। আকাশ থেকে ঘন কুয়াশা নামছে। দুচার হাত দূরের জিনিস ঠিকমতো দেখা যায় না। আমি আর পলাশ মায়ের পাশে বসে রইলাম। চুলোয় গনগনে আগুন। নিমেষে শরীর গরম হয়ে গেল। চুলোর ধারে বসে আমি ঝিমুতে লাগলাম। লাল আগুনের আভায় চিকচিক করছে পলাশের চোখ মুখ। আমি আগুনের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনের ভিতর কতো ছবি। কখনো মনে হয় যেন একটা গাছ বাতাসে দুলছে। কখনো মনে হয় লাল জামা পরা একটা শিশু দুই হাত তুলে নাচছে। কখনো মনে হলো- যেন একটা জাহাজ লাল পতাকা উড়িয়ে ছুটে চলেছে সাগরের বুক চিরে। আগুনের দিকে তাকিয়ে আমি অনেক কিছু ভাবতে থাকি। পাশে বসা পলাশ ততোক্ষণে চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছে। মা অন্য কাজে চলে গেছেন।
তখন আমার মনে হলো আগুনের ভিতর থেকে কেউ যেন উঠে এসেছে। লম্বা সরু মুখ। পেছনে কুমিরের মতো বড় লেজ। পেছনের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। তারপর আগুনের নিঃশ্বাস ছড়ালো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সেই আগুনমুখো জন্তুই তখন বলল, আমি আগুনের ড্রাগন। এসেছি ইন্দোনেশিয়া থেকে।
তুমি কে? কি করো এখানে?
আমি শিমুল। পড়ি ক্লাস সিক্সে। আজ প্রচ- ঠান্ডা পড়েছে, তাই চুলোর পাড়ে বসে আছি।
বসে বসে কী ভাবছ?
ভাবছিলাম একটা জাহাজে চড়ে সাগর পাড়ি দিচ্ছি।
খুব ভালো কথা। তাহলে আমাকে ঠিকমতো ধরো। লেজটা কিছুতেই ছাড়বে না।
লেজে একটা আঘাত করে ড্রাগন উড়াল দিলো। চুলোর জ্বাল তখনো নেভেনি। পলাশ তখনো ঘুমোচ্ছে। আর আমি চললাম সাগর পাড়ে।