হবু মায়েরা রোজা রাখতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে চিন্তিত হন অনেকেই। হয়তো গর্ভবতী মা রোজা রাখতে চাইলেন, কিন্তু বাদ সাধলেন আপনজনেরা। হবু মা এবং তার অনাগত সন্তানের সুস্থতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তারা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থায় রোজা রাখলে কোনো ক্ষতি নেই। তাই এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তারও কিছু নেই।
গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখতে কোনো নিষেধ নেই। তিনি রোজা রাখতে পারেন, তবে তার নিজের এবং গর্ভের সন্তানের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। মা ও তার গর্ভের সন্তানের কোনো সমস্যা না হলে মা রোজা রাখতে পারেন অনায়াসেই। জেনে নিন হবু মায়েদের জন্য পরামর্শ।
প্রথম তিন মাস :
গর্ভবতী মায়ের এ সময় কারও কারও অতিরিক্ত বমি হতে পারে। খুব বেশি বমি হলে তার রোজা না রাখাই ভালো। এ ছাড়া অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলেও রোজা না রাখাই ভালো। পরবর্তী দিনগুলোতে গর্ভধারণের তিন মাসের পর থেকে সাধারণত বমির সমস্যা কমে আসে। এ সময় মা রোজা রাখতে পারেন। যদি আপনি রোজা রাখেন, তবে ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। রোজা রাখার ফলে আপনার পরিপাক ক্ষমতা ধীর হয়ে যায়, তাই ইফতার করতে হবে যথাসম্ভব ধীরে। প্রথমে ছোট এক গ্লাস ফলের রস বা পানি পান করুন। এরপর অল্প খাবার গ্রহণ করুন। এক বা দুই ঘণ্টা পরপর বারবার অল্প করে খাবার খান। প্রচুর পরিমাণ তরল এবং পানি পান করুন। দিনের বেলায় কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম গ্রহণ করুন। রোজা রাখার সময় কোনো শ্রমসাধ্য কাজ বা ব্যায়াম না করাই সবচেয়ে ভালো। একটি খাবারের ডায়েরি সঙ্গে রাখা উচিত। তাহলে আপনি কখন কি খাচ্ছেন তা সহজেই জানতে পারবেন।
>> সাহরিতে খেতে পারেন
আপনার সাহরিতে জটিল ধরনের শর্করা জাতীয় খাদ্য থাকা উচিত, কারণ এ ধরনের খাবার পরিপাক দীর্ঘ সময় লাগে এবং তা সারা দিন ধরে আপনার শক্তি সরবরাহে সাহায্য করবে। আপনি খেতে পারেন-
০. তেল ছাড়া চাপাটি বা পরোটা
০. দুধ দিয়ে সিরিয়ালস
০. তাজা এবং শুকনো ফল, যেমন-কলা ও খেজুর
০. লবণ ছাড়া বাদাম
০. প্রচুর তরল পান করুন
০. খাওয়ার পর সরাসরি শুয়ে না পড়ে, একটু হাঁটাহাঁটি করে নিন।
>> ইফতারিতে খেতে পারেন
০. খেজুর, ফলের রস বা দুধ
০. সালাদ বা তাজা মৌসুমি শাক-সবজি।
০. পরিষ্কার চিকেন বা ভেজিটেবল স্যুপ
০. হালিম প্রোটিনের একটি ভালো উৎস এবং এতে চর্বির পরিমাণও কম থাকে।
০. তেল ছাড়া তৈরি ছোলা। এর সঙ্গে লেবু, লবণ এবং অল্প মসলা যোগ করা যেতে পারে।
০. প্রোটিন হিসেবে খেতে পারেন মুরগি, মাংস, মাছ, ডাল, ছোলা বা শিম।
০. জটিল শর্করা হিসেবে বাদামি চাল বা চাপাতি রুটি।
০. প্রচুর পরিমাণ শাক-সবজি।
>> যেসব খাবার থেকে বিরত থাকবেন
ডুবো তেলে ভাজা খাবার যেমন— বেগুনি (গর্ভাবস্থায় বেগুনি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত), পিয়াজু, আলুর চপ ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এই তেল ও চর্বিযুক্ত খাবারগুলো আপনার উদরপুর্তি করলেও তা আপনার পুষ্টির চাহিদা পুরণ করবে না। এগুলো বদহজমও তৈরি করতে পারে। খাবার শেষ করার সময় সিরাপ নির্ভর খাবার যেমন- জিলাপি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে এক বাটি তাজা ফলের সালাদ বা দই খেতে পারেন। চা বা কফি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এগুলো আপনার প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আপনার দেহ থেকে অতিরিক্ত তরল বের করে দেয়। যদি খালি পানি পান করতে একঘেয়ে লাগে তবে দুধ, দই, বরফ এবং ফলমূল দিয়ে তৈরি সালাদ খেতে পারেন।
রাতের খাবারের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন এবং তারপর বাকি কাজ করুন। ঘুমানোর আগে অন্য কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, তবে অবশ্যই সাহরি খাবেন। পানিশূন্যতা রোধে ইফতার এবং সাহরির মধ্যবর্তী সময়ে প্রচুর পানি পান করুন।
>> গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা সহজ করতে যে বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারেন
০. দিনের কাজগুলো পরিকল্পনা মাফিক করুন, যাতে আপনি নিয়মিত বিশ্রাম নিতে পারেন।
০. দীর্ঘ পথ হাঁটা এবং ভারী কিছু বহন করা থেকে বিরত থাকুন।
০. ঠান্ডা জায়গায় থাকুন। অন্যথায় খুব দ্রুত আপনার শরীর পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে, যা আপনার বা আপনার বাচ্চার জন্য ভালো নয়।
ধীরেসুস্থে কাজ করুন এবং প্রয়োজনে কারও সাহায্য নিন। আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকলেও এই নির্দিষ্ট রমজানে আপনাকে বেশ শান্ত থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে। আপনার পরিবারের অন্য নারীদের কাছ থেকে কীভাবে গর্ভাবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেবেন, সে সম্পর্কে নানান পরামর্শ এবং কৌশল জেনে নিন।