বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগরে মহাপরিকল্পনা

জাপান নির্মাণ করতে চায় মাল্টিপারপাস বন্দর, এনার্জি হাব, শিল্পাঞ্চল, যোগাযোগে হাইওয়ে, রেলওয়ে কানেকটিভিটি, বিনিয়োগ ৯০ বিলিয়ন ডলার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বঙ্গোপসাগরে মহাপরিকল্পনা

বঙ্গোপসাগর ঘিরে উন্নয়নের একটি মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে সরকারকে বিশদ তথ্য দিয়েছে জাপান। ২০১৬ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় ৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হবে বলে সরকারকে জানিয়েছে উন্নয়ন সহযোগী এ দেশটি। স্থানীয় মুদ্রায় এ বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) গত মাসে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে তাদের মহাপরিকল্পনা সম্পর্কিত একটি সার্ভে রিপোর্ট জমা দেয়। ‘ডাটা কালেকশন সার্ভে অন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফর সাউদার্ন চিটাগাং রিজন’ শীর্ষক এ রিপোর্টটি বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। জানা গেছে, জাপানের এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছে জাইকার একটি প্রতিনিধি দল। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জাইকা জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীনকে নিয়ে যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ বি ইনিশিয়েটিভ) গড়ে তোলার প্রয়াস রয়েছে তার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মাতারবাড়ীকে বেছে নেওয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনায়। ওই এলাকায় এরই মধ্যে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে জাপানের অর্থায়নে। ওই প্রকল্প থেকেই এ মহাপরিকল্পনার ভিত্তি রচিত হয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

যা রয়েছে ওই মহাপরিকল্পনায় : বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি মাতারবাড়ীতে একটি মাল্টিপারপাস সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চাইছে জাপান। যেখানে থাকবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী বিপুল কয়লা নামানোর জন্য জেটি ও হারবার। এ বন্দরকে ভিত্তি করে গড়ে তোলা হবে একটি এনার্জি হাব, যার মধ্যে থাকবে কয়লা টার্মিনাল, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল ও জ্বালানি পরিশোধন কেন্দ্র। বন্দর ও এনার্জি হাবকে ঘিরে গড়ে তোলা হবে বিশেষ শিল্পাঞ্চল, যেখানে স্টিল প্ল্যান্ট, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, সার কারখানা স্থাপন হবে। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য থাকবে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা হবে পর্যটন কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন অবকাঠামোয় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের জন্য একটি পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা হবে যেখানে আধুনিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবাসহ প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। যাতায়াতের জন্য হাইওয়ে এবং রেলওয়ে লিঙ্ক স্থাপন করা হবে যা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যে বিগ বি ইনিশিয়েটিভ অর্থাৎ শিল্পোৎপাদন বেল্ট গড়ে তোলার আলোচনা চলছে তার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ওই মাল্টিপারপাস সমুদ্রবন্দর ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে জাপানের সার্ভে রিপোর্টে।

যত ব্যয় হবে : ২০১৬ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত তিনটি ধাপে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে যেখানে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস বন্দর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এনার্জি হাব গড়ে তুলতে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে লাগবে আরও ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বিনিয়োগের এ অর্থ একবারে লাগবে না বলে সরকারকে জানিয়েছে জাইকা। সংস্থাটি বলেছে, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনটি ধাপের প্রথম পর্বে (২০১৬-২৬) বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে ২৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, দ্বিতীয় পর্বে (২০২৭-২০৩১) সময়ে বিনিয়োগ লাগবে ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং শেষ পর্বে (২০৩২-২০৪১) বিনিয়োগ দরকার হবে প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জাইকার প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বঙ্গোপসাগরের মাতারবাড়ীকে ঘিরে গত বছর জাইকা একটি প্রাথমিক স্টাডি করেছিল যেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও গভীর সমুদ্রবন্দর, শিল্প জোন ও পরিকল্পিত সিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময় ও ব্যয় সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানতে চাওয়া হয় ওই সময়। সম্প্রতি তারা আরেকটি সার্ভে রিপোর্ট দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর