জিলহজ মাসের ৯ তারিখ অর্থাৎ ঈদুল আজহার আগের দিনটি হচ্ছে আরাফা দিবস। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে এ দিনটি অত্যন্ত ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, শপথ উষার। শপথ ১০ রজনীর, শপথ জোড় ও বেজোড়ের। (সূরা ফজর : আয়াত নং-১-৩)। এ আয়াতে জোড় বলতে ঈদুল আজহার দিন আর বেজোড় বলতে আরাফা দিবসকে বুঝানো হয়েছে। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত মুহাম্মদ (সা.) জোড় বেজোড়ের এ ব্যাখ্যাই করেছেন (তাফসিরে ইবনে কাছীব ও মাআরিফুল কোরআন), অবশ্য জোড় বেজোড়ের অন্যান্য ব্যাখ্যাও রয়েছে। আরাফা দিবসে রোজা রাখা মুস্তাহাব। এ প্রসঙ্গে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, আরাফার দিনের রোজা সম্পর্কে আমি মহান আল্লাহর কাছে আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ্ মাফ করে দেবেন। (তিরমিজি ১/১৫৭ মুসলিম ১/৩৬৮)।
এ হাদিস দ্বারা আরাফা দিবসের রোজার অশেষ সওয়াব ও ফজিলত প্রমাণিত হয়। তবে এটা যারা হজে যাননি তাদের জন্য। যারা হজে যান তারা আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে থাকেন। আর হাজিরা আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে রোজা না রাখাই উত্তম। যাতে তারা সবল সতেজ ও চাঙ্গা থেকে অধিক দোয়া ও ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারেন। এ বিষয়টিও হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত নবী করীম (সা.) আরাফা দিবসে আরাফার ময়দানে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, ১/৩৩১)।
হজরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, আমি হজরত নবী করিম (সা.), হজরত আবু বকর, হজরত উমর ও হজরত উসমানের সঙ্গে হজ করেছি। তারা কেউই আরাফার রোজা রাখেননি। (হাদিসের ভাবার্থ) (তিরমিজি ১/১৫৭)। হজরত উম্মুল ফাজাল (রা.) থেকে বর্ণিত, বিদায় হজে কতিপয় লোক তার কাছে আরাফা দিবসে রসুল (সা.)-এর রোজা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হলেন। কেউ বললেন, রসুল (সা.) আজ রোজা রেখেছেন। কেউ বললেন, না রসুল আজ রোজা রাখেননি। হজরত উম্মুল ফাজাল রসুল (সা.) জন্য এক পেয়ালা দুধ পাঠালেন। রসুল (সা.) তখন আরাফার ময়দানে নিজের উটের পিঠে ছিলেন। তিনি সে দুধ পান করলেন। (ফলে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, রসুল আজ রোজা রাখেননি), (বুখারি ১/২২৫), ৯ জিলহজই হচ্ছে আরাফা দিবস। যে দেশে যেদিন ৯ জিলহজ হবে সেদেশে সেদিনই আরাফা দিবস হবে। সৌদি আরবের আরাফা দিবসই গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য আরাফা দিবস এ কথাটা সঠিক নয়।
লেখক : খতিব, মুহাম্মদিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ ওয়াপদা রোড, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা