শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পবিত্র কোরআনে মৌমাছির বর্ণনায় যা শেখা যায়

পবিত্র কোরআনে মৌমাছির বর্ণনায় যা শেখা যায়
আল্লাহ বলেছেন, তোমরা ফুলের কাছে চলে যাও। মৌমাছিরা আল্লাহর আদেশ মেনে নিজেদের পছন্দমতো ফুলের কাছে যায়। সেখান থেকে ফুলের নির্যাস চুষে নিয়ে আসে। কিন্তু ফুলের কোনো ক্ষতি করে না। ফুলের নির্যাস এমনভাবে চুষে নিয়ে আসে যে, আধুনিক যুগের কোনো মেশিনও এমনভাবে পারে না। এটা সম্ভব নয়। কিন্তু আল্লাহ ক্ষুদ্র প্রাণীটির মধ্যে সেই শক্তি দিয়েছেন। যারা ওখান থেকে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। যা মৌমাছির পেটে যাওয়ার পর মধু হয়ে যায়। বিভিন্ন রঙের ফুল-ফল থেকে তারা যে নির্যাস বের করে তা অঞ্চলভেদে একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন- সরিষা থেকে নিলে এক রকম রং হয়, সুন্দরবনের মধুর আরেক রকম রং হয়। অর্থাৎ ফুল আর ফলভেদে এর রঙেও ভিন্নতা থাকে। আপনারা জানেন, মৌমাছির হুলে বিষ থাকে। এটা আশ্চর্যজনক বিষয় যে, বিষাক্ত একটা পোকা যার মাধ্যমে এত সুন্দর একটা পানীয় আল্লাহ আমাদের বের করে খাওয়াচ্ছেন। যা ফল-ফুলের নির্যাস থেকে বের করে আনার পর মানুষের  উপকারী খাবারে পরিণত হচ্ছে...

কোরআনুল কারিমে আল্লাহ কঠিন কিছু বিষয়কে সহজ করে বোঝানোর জন্য কিছু উপমা দিয়েছেন। সেসব উপমার মাধ্যমে আমাদের কিছু জিনিসকে স্পষ্ট এবং সহজ করে বুঝিয়েছেন। তেমনি কিছু বিষয়কে উপস্থাপন করার জন্য আল্লাহ মৌমাছির উপমা দিয়েছেন। কোরআনুল কারিমের ওই মৌমাছির বর্ণনা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, জানতে পারি।

প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের বিভিন্ন বিষয়ে উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন। পরকালের ভয়ঙ্কর শাস্তির দৃশ্যকে তিনি উপমার মাধ্যমে চিত্রায়িত করেছেন। এমন কিছু বিষয়ে তিনি উপমা দিয়েছেন, যেগুলো নিয়ে বর্ণনা করলে ইমান অনেক ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়। আর হাদিস শরিফে যে গুরুত্বপূর্ণ উপমাগুলো আছে, সেগুলো থেকে এমনি একটি উপমা নিয়ে এ রচনা।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, ‘ওই সত্তার শপথ, যার পবিত্র হাতে মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবন। নিশ্চয়ই ইমানদাররা হলো মৌমাছির মতো। যারা উত্তম জিনিস খায়, উত্তম জিনিস তার পেট থেকে বের হয়। তারা ফুলের ওপর বসে, কিন্তু তা নষ্ট করে না কিংবা ভেঙে ফেলে না।’ মুসনাদে আহমদ (৬৮৭২ নং হাদিস)। মৌমাছির দৃষ্টান্ত কিন্তু রসুলে কারিম (সা.) মুসনাদে আহমদের এই হাদিসে বর্ণনা করেছেন। কোরআনুল কারিমেও মৌমাছির বর্ণনা এসেছে। মৌমাছি সাধারণত সরদারের অনুসরণ করে থাকে। উৎকৃষ্ট জিনিস তারা আহরণ করে থাকে। কোনো কিছুর ক্ষতি তারা করে না এবং সব সময় পরিশ্রম করে থাকে। অর্থাৎ কর্ম উদ্যম। আরেকটি হলো, আমানতদারিতা। এ কয়টা জিনিস তারা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়ে দেয়। মৌমাছির বর্ণনা থেকে আমরা আর কী কী শিখব সেসব গুরুত্বপূর্ণ।

এটি এমন একটি সূক্ষ্ম বিষয়, যেটা নিয়ে মানুষ সাধারণত কথা বলে না। এতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। কোরআন এবং হাদিসের আলোকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলো-

আল্লাহ মৌমাছিকে একটি বিশেষ জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যেটা অত্যন্ত সূক্ষ্ম। এ জন্য রব্বুল আলামিন মৌমাছির নামে একটি সুরা বর্ণিত করেছেন। সুরাটির নাম হলো সুরাতুন নাহল। আরবি নাহল শব্দের বাংলা অর্থ মৌমাছি। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, এর একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এই সুরাটির মধ্যে আল্লাহপাক ৬৮ নম্বর আয়াতে স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, ‘তোমার পালনকর্তা মৌমাছির প্রতি আদেশ করেছেন যে, পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরি কর।’ এটা আল্লাহপাক মৌমাছিকে আদেশ করেছেন। আল্লাহপাক ৬৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘অতঃপর সর্বপ্রকার ফল থেকে আহার কর এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথসমূহে চলমান হও...।’ মুমিন ব্যক্তি মৌমাছির মতো। কথাগুলো থেকে আমাদের একটু চিন্তা করে দেখতে হবে যে, আল্লাহপাক মৌছির ওপরে কেন এই কথাগুলো বললেন? মৌমাছির ওপরে কেন ওহি অবতীর্ণ করলেন! আওহা শব্দটির পারিভাষিক অর্থ এখানে নেওয়া হয়নি। আওহা শব্দটির পারিভাষিক অর্থ হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি অবতীর্ণ করা, যা আসে নবীদের কাছে। শব্দটি সেই হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আওহা শব্দের শাব্দিক অর্থ এখানে নেওয়া হয়েছে। এর শাব্দিক অর্থ হলো, এমন কোনো কথা কাউকে বলা যেটা গোপনে, অন্য কেউ শুনবে না। আল্লাহপাক মৌমাছিকে আওহা বলেছেন অর্থাৎ মৌমাছিকে বলেছেন, অন্য কাউকে বলেননি। মৌমাছিকে আদেশ করেছেন। তা হলো, তোমরা বাড়ি বানাও পাহাড়ে, গাছের ডালে এবং ঘরের উঁচু কোণে। আপনি দেখবেন মৌমাছি এসব স্থানেই ঘর বাঁধে। এ ছাড়া তারা তাদের বাড়ি কোথাও বানায় না। আমাদের অঞ্চলে পাহাড় কম, তাই আমরা পাহাড়ে মৌমাছি দেখি না। যেসব অঞ্চলে পাহাড় আছে সেসব অঞ্চলে পাহাড়ের গুহায় মৌমাছি বাসা বাঁধে। তবে আমরা যেটা আমাদের দেশে দেখতে পাই সেটা হলো, গাছের ডালে ডালে, উঁচু জায়গা এবং ঘরের কোণে তারা বাসা বাঁধে। এই নির্দেশগুলো দেওয়ার কারণ হলো যে, মৌমাছির জীবনের সঙ্গে মানুষের জীবনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের জীবনে রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং তাদের পরিচালনার সঙ্গে একটি মারাত্মক মিল রয়েছে। মৌমাছি যেখানে থাকে, সেখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার ছোট ছোট কুঠরী ঘর থাকে। এই ঘরগুলো কীভাবে তৈরি হয় ও কীভাবে তারা এটাকে পরিচালনা করে আমরা সেদিকে যদি একটু তাকাই, তবেই আমরা বুঝতে পারব। মৌমাছি যেখানে চাক বাঁধে সেটা তাদের একটি রাষ্ট্র। এক একটি চাক এক একটি রাষ্ট্র। এখানে একজন রানী থাকে। সে রানী সমস্ত মৌমাছি থেকে একটু আলাদা থাকে। অর্থাৎ অন্য মৌমাছিদের চেয়ে একটু বড় থাকে। এই রানী তিন সপ্তাহের মধ্যে ৬ থেকে ১২ হাজার ডিম দেয় এবং তা থেকে বাচ্চা হয়। এক একটা মৌমাছির চাকে এ রকম ১২-১৫ হাজার মৌমাছি থাকে। রানী তাদের সবাইকে পরিচালনা করে থাকে। যারা থাকে তাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে থাকে। প্রথম যে দায়িত্বটা বণ্টন করে সেটা হলো, গার্ড অর্থাৎ নিরাপত্তা প্রহরী। কিছু মৌমাছি থাকে যারা এই চাক বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কাজ বা রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। অনাকাক্সিক্ষত কাউকে এখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কোনো পোকা-মাকড় বা অন্য কেউ, যারা তাদের আক্রমণ করতে পারে এমন কাউকে ঢুকতে দেয় না। কেউ ঢুকতে চাইলে সবাই মিলে তাকে আক্রমণ করে। এটা মৌমাছিদের রানীর আদেশ। তারা রানীর আদেশ মারাত্মকভাবে মেনে চলে। অর্থাৎ রানীর কথার বাইরে একচুলও নড়ে না। রাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখবেন, মানুষের রাষ্ট্রও একইভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। বিষয়টি হলো, বর্ডার গার্ড থাকে যারা, তারা অনাকাক্সিক্ষত কাউকে ঢুকতে দেয় না। কেউ ঢুকতে চাইলে সবাই মিলে তাকে প্রতিহত করে। কিছু মৌমাছি থাকে যারা বাচ্চাদের লালন-পালন করে। কিছু মৌমাছি থাকে যারা বাচ্চা থেকে শিশু হয়েছে তাদের লালন পালন করে। এসব দায়িত্ব রানী বণ্টন করে দিয়েছেন। কিছু থাকে ওখানে বাসা নির্মাণ করে। তাদের মৌমছিদের প্রকৌশলী বলা যায়। তারা সেই বাসাগুলোকে মোম দ্বারা আটকায়। কিছু মৌমাছি এই মোম সংগ্রহ করে। মোম সংগ্রহ করে কোথা থেকে! দেখবেন, কিছু উদ্ভিদের উপরের অংশে সাদা সাদা দেখা যায়। এগুলো থেকে তারা মোম সংগ্রহ করে। আখ যেটা আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি থাকে। এটা থেকে তারা মোম সংগ্রহ করে এনে মৌমাছির প্রকৌশলীদের কাছে দেয়। আর মৌমাছিদের মধ্যে দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা সেই বাসা বা রাষ্ট্র নির্মাণ করে। মৌমাছির বাসাগুলো এতটা নিপুণ হয় যে, এর এক একটা কঠুরীর ছয়টা কোণা থাকে। ছয়টা কোণা কেন? এরও একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আশ্চর্য হলেও ছয় কোণার প্রতিটি সমানভাবে তৈরি। এটাকে যদি ফিতা দিয়ে মাপা হয়, দেখবেন প্রতিটি কোণা সমান। চুল মাত্র বেশকম পাওয়া যাবে না। কী আশ্চর্য কান্ড! একটা ছোট্ট পোকা কত নিপুণভাবে এটা তৈরি করে থাকে। জ্যামিতিকভাবে হিসাব করে দেখা গেছে, ছয় কোণা যদি না থেকে, পাঁচ কোণা, চার কোণা কিংবা তিন কোণা থাকত, তবে এর কিছু অংশ বাদ থেকে যেত। অর্থাৎ ব্যবহৃত থাকত না। ছয় কোণাবিশিষ্ট ঘর হওয়ায় এর পরিপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের দেশের প্রকৌশলীরাও এখন এই নিয়মে বাড়ি (বিল্ডিং) কিংবা ঘর নির্মাণ করছেন। কারণ, তারাও চান ঘরের কোনো কোণা যেন অব্যবহৃত না থাকে। শুধু তাই নয়, যে পিলার কিংবা ভিত দেওয়া হয় সেটাও দেয়ালের মধ্য দিয়ে দেওয়া হয়। যেন পিলারের জন্য জায়গা নষ্ট না হয়। এটা কিন্তু মৌমাছি থেকে পাওয়া একটা শিক্ষা। দ্বিতীয় যে বিষয়টি থাকে যে, কোনো মৌমাছি যদি ময়লার স্তূপের ওপর বসে পরবর্তীতে আবার চাকে ফিরে আসে তাহলে বর্ডার গার্ড বা নিরাপত্তায় থাকা মৌমাছিরা তাকে প্রবেশ করতে দেয় না। নোংরা হওয়ার কারণে এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এমনকি রানীর হুকুমে তাকে মেরে ফেলা হয়। কেন তুমি অন্যায় কাজ করেছ বা নোংরা স্থানে গিয়েছে! ঠিক একইভাবে রাষ্ট্র বা সমাজেও একই ব্যবস্থা থাকে। এটা থাকা উচিত। যদি রাষ্ট্রকে পরিশুদ্ধ রাখতে হয়। যদি সমাজকে পরিশুদ্ধ রাখতে হয়। অন্যায় যারা করবে তাদের শাস্তি দিতে হবে। শুধু কাগজে-কলমে শাস্তি থাকলে চলবে না। যথাযথ বিচার করতে হবে। তাহলেই কেবল অন্যায় রোধ হবে। সমাজ পরিশুদ্ধ হবে। অন্যথায় ন্যায়বিচারহীন সমাজ কিংবা বিচারহীন রাষ্ট্রে অপরাধ দিন দিন বাড়তেই থাকবে। যে সমাজে ন্যায়বিচার থাকবে সে সমাজ পরিশুদ্ধ সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, আল্লাহর হাবিব (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের ময়দানে আরসের ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না। সেই সময় সাত শ্রেণির মানুষ আরশের নিচে আশ্রয় পাবে। তার মধ্যে প্রথম শ্রেণির সারিতে বলা হয়েছে ন্যায় বিচারক। কি সাংঘাতিক কথা। সাত শ্রেণির মানুষ আরশের নিচে আশ্রয় পাবে আল্লাহর বিশেষ দয়ায়। তাদের মধ্যে প্রথমেই থাকবে যারা ন্যায়বিচারক শাসক ছিলেন। এজন্য ন্যায়বিচার সমাজে অত্যন্ত জরুরি। আল্লাহ পাক ন্যায়বিচারের আদেশ করেছেন। মৌমাছির জ্ঞান-বুদ্ধির কারণে আল্লাহ পাক মৌমাছির ক্ষেত্রে এখানে আওহা শব্দ ব্যবহার করেছেন। অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে কিন্তু শব্দটি তিনি ব্যবহার করেননি। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ বলেছেন, তোমরা ফলের কাছে চলে যাও। মৌমাছিরা আল্লাহর আদেশ মতো নিজেদের পছন্দ মতো ফলের কাছে যায়। সেখান থেকে নির্যাস চুষে নিয়ে আসে। কিন্তু ফলের কোনো ক্ষতি করে না। ফলের নির্যাস এমনভাবে চুষে নিয়ে আসে যে, আধুনিক যুগের কোনো মেশিনও এমনভাবে পারে না। এটা সম্ভব নয়। কিন্তু আল্লাহ ক্ষুদ্র প্রাণীটির মধ্যে সেই শক্তি দিয়েছেন। যারা ওখান থেকে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। যেটা মৌমাছির পেটে যাওয়ার পর মধু হয়ে যায়। বিভিন্ন রঙের ফুল-ফল থেকে তারা যে নির্যাস বের করে তা অঞ্চলভেদে একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন, সরিষা থেকে নিলে এক রকম রং হয়, সুন্দরবনের মধুর আরেক রকম রং হয়। অর্থাৎ ফুল আর ফলভেদে এর রঙেও ভিন্নতা থাকে। আপনারা জানেন মৌমাছির হুলে বিষ থাকে। এটা আশ্চর্যজনক বিষয় যে, বিষাক্ত একটা পোকা যার মাধ্যমে এত সুন্দর একটা পানীয় আল্লাহ আমাদের বের করে খাওয়াচ্ছেন। যেটা ফল-ফুলের নির্যাস থেকে বের করে এনে মানুষের উপকারি খাবারে পরিণত হচ্ছে। যদিও ফল-ফুলের নির্যাস মৌমাছিরও খাবার। বিষয়টি আমাদের চিন্তা করে দেখা দরকার যে, আল্লাহ আমাদের ওপর কত এহ্সান করেছেন। আল্লাহ পশুর ব্যাপারে বলেছেন যে, তোমরা পশুর দিকে লক্ষ্য কর না? এখানেও তোমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, উট- এরা যে খাবার খায় তাদের পেটের ভিতরে থাকে ময়লা। অর্থাৎ গোবর এবং রক্ত; এখান থেকে আমি তোমাদের জন্য দুগ্ধ বের করে আনি। যা তোমাদের পরিতৃপ্ত করে। একটু ভেবে দেখুন, এই দুটা উদাহরণে কত শিক্ষণীয় বিষয় লুকিয়ে আছে! চতুষ্পদ জন্তু গরু ঘাষ, কুড়া, খড় ইত্যাদি খাচ্ছে। সে জন্যই আল্লাহ বলছেন, গোবর এবং রক্তের নির্যাস থেকে বাছাই করে দুধ বের করে মানুষের খাবার হিসেবে আনছেন। মৌমাছির মাধ্যমে অত্যন্ত কৌশলী পন্থায় মানুষের জন্য মধুর ব্যবস্থা করছেন। এরপরও কি মানুষ বুঝবে না! এরপরও কি তোমরা ইমান আনবে না! আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নিবে না! এরপরও কি তোমরা দেব-দেবীর পূজা করবে! এ কথাগুলোই সুরাটির পরবর্তী পর্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু রয়েছে। আরেকটি বিষয়ে আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের দেখানো পথে হাঁটবে।’ দেখুন, মৌমাছি যখন ফুল-ফল থেকে মধুর নির্যাস সংগ্রহ করতে যায় মাইলের পর মাইলের পাড়ি দেয়। এক একটা মৌমাছি তার চাক থেকে পাঁচ মাইল, সাত মাইল, ১০ মাইল দূরেও চলে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও তারা রবের দেখানো পথে আবার ফিরে আসছে। পথ হারায় না। কারণ, তারা আল্লাহর দেখানো পথেই ছিল। মানুষও যদি আল্লাহর দেখানো পথে হাঁটে, সে কখনই পথ হারাবে না। মানুষের মূল বাড়ি হলো জান্নাত। আদম-হাওয়াকে সৃষ্টি করে কোথায় রাখা হয়েছিল? জান্নাতে, সেই বেহেশত থেকে আমরা চলে এসেছি। আল্লাহ আমাদের জন্য জান্নাতের সেই পথ তৈরি করে রেখেছেন। মানুষ যদি আল্লাহ প্রদত্ত সেই পথে হাঁটে তবে আবার সে তার বাড়িতে ফিরে যাবে। মৌমাছি থেকে আমরা সেই শিক্ষাটা পাই। ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন মরুভূমির মধ্যে আল্লাহর রসুল (সা.) আমাদের নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় আল্লাহর রসুল মরুভূমিতে লাঠি দিয়ে একটা দাগ দিলেন। সেই দাগের চতুর্দিকে আরও কয়েকটা দাগ দিলেন। আল্লাহর হাবিব বললেন, সোজা যে রাস্তাটা দেখছ এটা আল্লাহ প্রদত্ত সিরাতুল মুসতাকিম। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই সরু পথে যারা চলবে তারা আল্লাহর জান্নাতের সুসংবাদ পাবে। আর দাগের আশপাশের যত রাস্তা আছে, সব শয়তানের আবিষ্কৃত রাস্তা। অর্থাৎ তোমরা যখনই সিরাতুল মুসতাকিমের পথ বাদ দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে হাঁটবে সবগুলো শয়তানের রাস্তা। সেটা যতই চাকচিক্যময় হোক না কেন, যতই আরামপ্রিয় হোক না কেন, সেটা শয়তানের রাস্তা। আল্লাহর কসম এর বাইরে আর কিছু নেই। এটা আমি বলিনি। আল্লাহ বলে দিয়েছেন। মানুষ সিরাতুল মুসতাকিমের পথ ছেড়ে যখন অন্য পথ দিয়ে হাঁটবে; তারা জান্নাতের পথ থেকে ছিটকে গেল। পথ হারাতে হারাতে এত দূরে চলে যায় যে সেখান থেকে ফিরে আসার মতো সুযোগ আর থাকে না। আর তাই মৌমাছি থেকে এই শিক্ষাটা আমাদের নেওয়া দরকার। মৌমাছি আল্লাহর দেখানো পথে হাঁটে বিধায় তারা তাদের গন্তব্যে ফিরে আসতে পারে। একইভাবে মানুষও যদি আল্লাহর দেখানো পথে হাঁটে তবে তারা পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে। মানুষ সৃষ্টির মূল লক্ষ্যে তারা পৌঁছতে পারবে। দ্বিতীয় যে বিষয়টি, মুমিনের কেমন হওয়া উচিত? মৌমাছি কিন্তু মানুষের উপকার করে। ক্ষতি করে না। মৌমাছি ফুল-ফল থেকে নির্যাস নেয়। তা নষ্ট করে না। মুমিন ব্যক্তিও এমন হবেন। একজন মুমিন কারও ক্ষতি করবে না। মুমিন ব্যক্তি পরিশ্রমী হবেন। যেমন হাদিসে উল্লিখিত আছে, মৌমাছি অত্যন্ত পরিশ্রমী হয়। খেয়াল করুন, মৌমাছি নিজে কষ্ট করে মানুষের জন্য মধু বিলিয়ে দিচ্ছে। মুমিন ব্যক্তিও তেমনি নিজে কষ্ট করে অন্যের খেদমত করবে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি কখনো অলস হয় না। মুমিন ব্যক্তি কপালে ঘাম নিয়ে মৃত্যুবরণ করে। অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তি পরিশ্রমী, আলসে থাকতে পারে না। এই যে বিষয়গুলো যেমন, পরিশ্রমী হতে হবে, সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকতে হবে এবং নেতৃত্ব মেনে চলতে হবে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শকে আঁকড়ে বেঁচে থাকা। এমনকি রাষ্ট্র এবং সমাজকে সুন্দর রাখার জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়গুলোকে মেনে চলা। দেখবেন, প্রত্যেক ঘরে একজন নেতা থাকেন। সে মা থেকে পারেন, বাবা থেকে পারেন। স্বামী থেকে পারেন, স্ত্রী থেকে পারেন। যে-ই হোক না কেন, তার একটা কর্তৃত্ব থাকবে। তার যে পরিকল্পনা থাকে তা নিঃসন্দেহে পরিবারকে সুসংগঠিত করার জন্য ব্যবস্থা থাকে। পরিবারের সদস্যরা যদি সেগুলো মেনে না চলে তাহলে কিন্তু পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়। বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সুশৃঙ্খলভাবে চলাফেরা করলে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র আলোকিত হয়। যেমনটি মৌমাছির চাককে আমরা একটা রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। রানীর আদেশ তারা মেনে চলে বিধায় মৌচাকে মৌমাছিরা সুশৃঙ্খলভাবে বসবাস করতে পারছে।

সরদারের অনুসরণের যে বিষয়টি নিয়ে বলা হচ্ছে তা হলো, একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র কিংবা ভূখন্ডকে পরিচালনার জন্য একজন নেতার দরকার। সে নেতা যদি অসৎ হয় এবং নেতার আনুগত্য সঠিকভাবে করা না হয় তাহলে ওই সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা ভূখন্ড পরিচালনা ব্যাহত হয়। অর্থাৎ পরিচালনা করা যায় না। সমাজে শান্তির সুবাতাস আনতে চাইলে সরদার কিংবা নেতার সঠিক অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর। নির্দেশ মান্য কর আল্লাহর প্রেরিত রসুলের। তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক, তাদের। তারপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিপদে, বিবাদে জড়িয়ে পড় তাহলে তোমরা আল্লাহ এবং তার রসুলের পথে পদার্পণ কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ এবং কিয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণ ও পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।’ এখানে নেতাকে অনুসরণ করতে হবে। নেতাকে তাকওয়াবান, পরহেজগার, ন্যায়নিষ্ঠাবান, সত্যবাদী হতে হবে। একজন ভালো নেতার যেসব গুণ থাকা দরকার সেসব থাকতে হবে। এখানে মৌমাছি যেভাবে নেতাকে অনুসরণ করে শান্তির বাসা নির্মাণ করে, একটি রাষ্ট্রের মতো তা সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করে। আমরাও যদি নেতৃত্বের অনুসরণ ঠিকভাবে করতে পারি আমরাও আমাদের সমাজকে সুন্দরভাবে সাজাতে পারব। আরেকটি বিষয় হলো, মৌমাছিরা উৎকৃষ্ট জিনিস খায়। এরা যে কোনো জায়গা থেকে মধু আহরণ করে না। তারা ভালো জায়গা থেকে মধু আহরণ করে। তারা সব সময় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন জায়গায় বসে। অপবিত্র জায়গায় কখনো বসে না। তাদের মুখ থেকে নিঃসৃত মধু হয় স্বচ্ছ এবং পবিত্র। তেমনি একজন মুমিনের অন্তরও হয় পবিত্র। সেই মুমিনের অন্তরে সব সময় ইমানের আলো পরিস্ফুটিত হয়ে থাকে। আমরা উপার্জন, ইবাদত, খাবার, পানীয় যা কিছু করি আমাদের সব কিছু হওয়া উচিত পবিত্র। যেমনটা হাদিস শরিফে এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলে পাক (সা.) বলেছেন, হে লোক সকল আল্লাহতায়ালা পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কিছু কবুল করেন না। আল্লাহ তাঁর রসুলকে যেসব হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরও তিনি সেসব বিষয়ের হুকুম দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, হে রসুলগণ তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার কর এবং সৎ কাজ কর। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আমি সবিশেষ অবগত। (সুরা মোমিনুন ৫১নং আয়াত)। এখানে কিন্তু পবিত্র জিনিস কিংবা ভালো খাবার আহারের কথা বলেছেন। খেয়াল করলে দেখবেন, যারা মুমিন নন, তারা যা পান তাই খাবার হিসেবে গ্রহণ করেন। হালাল হারামের বাছ বিচার নেই তাদের মধ্যে। সামান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য হারাম পথে অর্থ উপার্জনে দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু এখানে উৎকৃষ্ট জিনিস আহার করে মৌমাছি। এখানেও মুমিনের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় আছে যে, যা পাব তা খাওয়া যাবে না। উৎকৃষ্ট এবং পবিত্র জিনিস খেতে হবে। আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন। আরেকটি জিনিস হলো, কোনো কিছুর ক্ষতি করে না মৌমাছি। আমরা দেখেছি অনেক মৌমাছি উড়তে থাকে। শুধু ফুল ও ফলে উড়তে থাকে এবং দেখতে থাকে এখান থেকে যদি আমি মধু কিংবা নির্যাস নেই, তাহলে এটার ক্ষতি হবে কিনা। যখন দেখে এখান থেকে মধু আহরণে ফুল বা ফলের ক্ষতি হবে তখন তারা সেখান থেকে মধু আহরণ করে না। অন্যত্র সরে যায় এবং ততটুকু মধু আহরণ করে যতটুকুতে পরাগায়ণ হবে, ফল হবে। এর চেয়ে বেশি মধু তারা আহরণ করে না। অর্থাৎ তারা সব সময় দেখে এখান থেকে মধু নিলে ক্ষতি হবে কিনা। আমরা জানি, ‘সেই প্রকৃত মুমিন যার হাত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, জিহ্বা দ্বারা অন্য মানুষ নিরাপদে থাকবে।’ আমাদেরও প্রকৃত মুমিনের মতো আচরণ হওয়া উচিত। মানুষের কল্যাণে সর্বদা আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, ক্ষতি করা যাবে না, ক্ষতি সহ্যও করা যাবে না। যে অন্যের ক্ষতি করে, আল্লাহ তার ক্ষতি করেন। যে তার সঙ্গে শত্রুতা করে, আল্লাহ তাকে শাস্তি দেন। আমরাও কখনো অপরের ক্ষতি তো করবই না, আমাদের শক্তি থাকতে ক্ষতি মেনেও নেওয়া যাবে না। প্রতিবাদ করতে হবে। একটি সমাজ কিন্তু শুধু খারাপ মানুষের প্রভাবেই নষ্ট হয় না। একজন ভালো মানুষের নীরবতায়ও নষ্ট হয়ে থাকে। কারণ, খারাপ মানুষের সংখ্যা কম। কিন্তু তারা সংঘবদ্ধ। ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি, তবে তারা বিচ্ছিন্ন। আর তারা নীরব থাকে বিধায় সমাজের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়। খারাপ মানুষ অল্প হলেও তারা সংঘবদ্ধ বলে ভাঙাটা সহজ হয় না। এজন্য আমাদের সবার উচিত কারও ক্ষতি না করা এবং কোনো ক্ষতি সহ্যও না করা। আমাদের চেষ্টা করতে হবে সমাজ, পরিবার, নিজের জানমালের ক্ষতি যেন না হয়। সে দিকটায় সদা সতর্ক থাকতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, মৌমাছি সর্বদা পরিশ্রম করে বেড়ায়। পরিশ্রম করে তারা খায়। আর তারা সর্বদা আমানতদারিতা রক্ষা করে। মৌমাছি মধু আহরণ থেকে পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো আমানতদারিতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। তারা তাদের রানীর আদেশ এমনভাবে পালন করে যে, একবিন্দু মধুও তারা পাকস্থলীতে রাখে না। কখনো তারা মধুকে নিজের সম্পদ মনে করে না। তেমনি একজন মুমিনের সম্পদকে তিনি আল্লাহর আমানত মনে করবে। যত্রতত্র ব্যবহার করবে না। নিষিদ্ধ পথে ব্যয় করবে না। যে পথে ব্যয় করলে আল্লাহ এবং তার রসুল (সা.) খুশি হবেন সে পথেই ব্যয় করবে। বিলাসিতা এবং আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন করে সম্পদ নষ্ট করবে না। মৌমাছির বর্ণনা দিয়ে কত সুন্দর করে আল্লাহ আমাদের বুঝিয়েছেন। আমরা সরকারের সম্পদকে আমাদের নিজেদের সম্পদ মনে করি। কোনো কোনো জায়গায় সেটাকে নিজের সম্পদ মনে করে ব্যবহার করে থাকি। এটি করা যাবে না।

মৌমাছির বর্ণনা থেকে অনেক কিছু শিখে নিলাম। তাদের জীবন ব্যবস্থা থেকে আমল করার মতো অনেক বিষয় আমরা গ্রহণ করব। এই আমল করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে সুন্দর করি, আলোকিত করি, মহত্ত্ব এবং পবিত্রতার সঙ্গে গড়ে তুলি।

এখানে আরও কিছু বিষয় আমাদের শিক্ষণীয় আছে। মৌমাছি থেকে আমরা কী শিখতে পারি। আল্লাহপাক কেন এর উদাহরণ দিলেন? নিশ্চয়ই এখানে মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয় বিষয় আছে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যারা চিন্তাশীল, তাদের জন্য এখানে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।’ সবার জন্য নয়, যারা চিন্তাশীল, বুদ্ধিজীবী, যারা সমাজ এবং দেশ নিয়ে ভাবে তাদের জন্য এখানে বড় রকম শিক্ষা রয়েছে। দেখুন আল্লাহ তাদের আদেশ করছেন, তোমরা ঘর বানাও পাহাড়ে, গাছের ডালে এবং উঁচু জায়গায়। কেন? কারণ, এসব জায়গা নিরাপদ। এ জন্য আমাদেরও বাড়ি বানানোর জন্য নিরাপদ জায়গায় বাড়ি বানানো উচিত। আরেকটি বিষয় হলো, উঁচু জায়গাগুলো পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্ত। দূষিত বাতাসমুক্ত। আল্লাহপাকের নির্দেশনার অর্থই হলো, তোমরা যেন নোংরা থেকে তোমাদের বাড়িঘরগুলোকে সুন্দর রাখতে পার। কারণ, তোমাদের (মৌমাছি) মধ্যে খাবার আছে। এ খাবার মানুষ খাবে। এ মধু মানুষ পান করবে। সুতরাং এটা যেন পবিত্র থাকে। এটা যেন নোংরা বা ময়লার সংস্পর্শে না আসে। এটা কিন্তু একটা শিক্ষা। এ আয়াত থেকে আমাদের জন্যও শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমরা যেন আমাদের বাড়িঘরগুলোকে এমনভাবে বানাই যেন আমরা নিরাপদে থাকতে পারি। আমরা যেন আমাদের পরিবেশকে দূষিত না করি। আমরা পাহাড় কেটে ফেলব না। আমরা গাছ কেটে ফেলব না। ময়লা যত্রতত্র ফেলে পরিবেশ দূষিত করব না। আলো-বাতাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটাব না। রাস্তাঘাট নোংরা করব না। নোংরা জিনিসের ওপর তারা বসে না, যত্রতত্র খাবার খায় না। একইভাবে আল্লাহপাক আমাদের জন্য যেটা হালাল করেছেন সেটা গ্রহণ করতে হবে। আর যেটা হারাম করেছেন সেটা বর্জন করতে হবে। এখান থেকে এ শিক্ষাটা যদি আমরা নিতে পারতাম, তাহলে আমাদের দেশের অপরাধ বন্ধ হয়ে যেত। আমাদের সমাজে সুদ, ঘুষ, অর্থ আত্মসাৎ, বিদেশে অর্থ পাচার ইত্যাদি অপরাধ থাকত না। যদি আমরা এ আয়াত থেকে একটু চিন্তা করতাম। মৌমাছির এ শিক্ষাটা আমরা গ্রহণ করতাম।

শ্রুতি লিখন : আবদুল কাদের

সর্বশেষ খবর