১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:৫০

জাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে অছাত্র ও বহিষ্কৃতদের হিড়িক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

জাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে অছাত্র ও বহিষ্কৃতদের হিড়িক

দুই সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণার ১১ মাস পর ঘোষিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শীর্ষ পদে রয়েছেন অছাত্র, ছিনতাই, মারামারিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বহিষ্কৃতরাও।

গত মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাত ১০ টায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ এই কমিটিতে সহ-সভাপতি হয়েছেন ১০১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১১ জন, সহ-সম্পাদক ৬৬ জন এবং সদস্য ৫৫ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন সম্পাদক ও উপ-সম্পাদক পদে আরো ১৪২ জন পদ পেয়েছেন।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১২১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা গেলেও এই কমিটিতে পদ পেয়েছেন মোট ৩৮৮ জন। এমনকি অন্যান্য শাখা কমিটিতে পদ থাকার পরেও নতুন করে এই কমিটিতেও পদ পেয়েছেন অনেকেই। এদিকে, যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও অনেক নেতাকর্মী পদ পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত কর্মীরা বলছেন, কিছু নেতাকর্মী জেলা ও উপজেলায় পদে থাকার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ এ কমিটিতে পদ পেয়েছেন। যাদের মধ্যে ঢাকা জেলা উত্তরের সহ-সভাপতি শান্ত মাহবুবকে দেওয়া হয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদকের পদ, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা হয়েছেন কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক এবং বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থোয়াই মহাজন হয়েছেন সদস্য।

গত মঙ্গলবার রাতে সোয়া ১২টায় পর্বের বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক তাসমিয়া মেহরিনকে সহ-সভাপতি করা হয়। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর কমিটিতে নতুন করে এই সংযোজন-বিয়োজন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার তথ্য মতে, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ৪৬ ব্যাচ থেকে ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। অথচ পূর্ণাঙ্গ কমিটির অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্থান পেয়েছেন ৪২ ও ৪৩ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পদবঞ্চিতরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাড়ে ৯৫ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন এবং কর্মী সৈয়দ লায়েব আলীর বিরুদ্ধে। সৈয়দ লায়েব আলী পূর্ণাঙ্গ এই কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন।

২০১৯ সালের ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর জামাতাকে মারধর করে ছিনতাই ও তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃত ওই পাঁচজনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আল-রাজি সরকার পেয়েছেন উপ-ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদকের পদ এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শাহ মোস্তাক আহমেদ সৈকত হয়েছেন সহ-সভাপতি।

একই বছরের ২২ জুলাই রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিং এর ঘটনায় ১১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। তাদের মধ্যে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ফয়জুল ইসলাম নীরব পেয়েছেন উপ-ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদকের পদ এবং ইতিহাস বিভাগের সারোয়ার হোসেন সাকিল হয়েছেন উপ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক।

২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে লাঞ্ছনা ও কর্তব্যরত এক সংবাদকর্মীকে মারধরের ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কৃত বাংলা বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শুভাশীষ ঘোষ পেয়েছেন উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদ।

চলতি বছরের ২ আগস্ট বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের অতিথিকক্ষে এক সাংবাদিককে নির্যাতনের দায়ে বহিষ্কৃত আইন ও বিচার বিভাগের ৪৭ ব্যাচের মাসুম বিল্লাহ হয়েছেন সহ-সম্পাদক। আর গত ৬ আগস্ট মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কৃত খালিদ হাসান ও সাব্বির হোসেন সদস্য পদ পেয়েছেন। 

এবছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাটে অভিযুক্তদের মধ্যে সহ-সভাপতি হয়েছেন সাজ্জাদুল ইসলাম ও এহসানুল হক, আর সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন ফারসাদ হোসেন এবং মেহেদী জয়।

এছাড়া র‍্যাগিং, মারধরসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা মেয়াদে বহিষ্কৃত এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় বিতর্কিত আরো অন্তত ২০ জন ছাত্রলীগের এই কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এর বাইরে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত নন এমন অনেকেই পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, যেসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মী দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং ইতোমধ্যে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করেছে করোনা ভাইরাস বিবেচনায় তাদের বিষয়টিও মাথায় রেখেই আমারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের স্থান দিয়েছি। আর বিভিন্ন সময় যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিল আমরা তাদেরকে দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণ করেছি এবং শুধরানোর সুযোগ দিয়েছি। তাই অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরও তাদেরকে কমিটিতে স্থান দিয়েছি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান বৃহৎ এই কমিটিকে 'শুভঙ্করের ফাঁকি' বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, অছাত্র ও বহিষ্কৃতরা কমিটিতে থাকতে পারেনা। একইসাথে কোন ইউনিটে পদে থাকা অবস্থায় নতুন করে অন্য কোন ইউনিটে পদে থাকা ছাত্রলীগের জন্য অবমাননাকর।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোন অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তার ব্যাখ্যা দেবেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর