বাংলা সাহিত্যের নন্দিত লেখক হাসান আজিজুল হক। অনন্য সৃষ্টিশীলতায় সাহিত্যে অগণিত পাঠক তৈরি করেছেন তিনি। গত ১৫ নভেম্বর ছিল হাসান আজিজুল হকের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রয়াত এই লেখককে স্মরণ করেছে বাংলা একাডেমি।
গতকাল বিকালে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে ‘হাসান আজিজুল হক : দেশভাগের অন্ধ সুরকার’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক এহ্সান মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন কথাসাহিত্যিক মশিউল আলম ও কথাসাহিত্যিক ওয়াসি আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। এহ্সান মাহমুদ বলেন, হাসান আজিজুল হক দেশভাগের অন্ধ সুরকার। তিনি ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশের দেশভাগের ফলে মানবিক ও সামাজিক যে বিপর্যয় তৈরি হয়েছে প্রায় গোটা জীবন ধরে তার শিল্পিত বিবরণ লিখে গেছেন। তাঁর লেখায় দেশভাগের আগেকার যে রাঢ়বঙ্গের দেখা পাওয়া যায়, তার পরের বাংলাদেশের ঠিক ততখানি দেখা মেলে না। তিনি বলেন, হাসান আজিজুল হক তাঁর গোটা লেখকজীবনে দেশভাগকে করুণ সুরে লিখে গেছেন।
আলোচকরা বলেন, হাসান আজিজুল হক কোনো পৃষ্ঠপোষকতার তোয়াক্কা করেননি বরং তিনি তাঁর লেখার গুরুত্বের কারণেই খ্যাতিমান লেখক হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। সারাজীবন প্রান্তে বসবাস করে তিনি সাহিত্যের নতুন কেন্দ্র তৈরি করেছেন। সামান্য দৃশ্যকে বৃহৎ ক্যানভাসে তুলে ধরার কৃতিত্বে তিনি অসাধারণ, বিন্দুতে সিন্ধু ধারণে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
তারা বলেন, হাসান আজিজুল হককে বৃত্তবন্দিভাবে বিচার করা যাবে না। তিনি বারবার বৃত্ত ভেঙেছেন। শৈশব-কৈশোরের রাঢ়বঙ্গের স্মৃতির রঙে যেমন তাঁর গল্প রাঙা হয়েছে তেমনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের মরণপণ জীবনসংগ্রাম তাঁর মতো সার্থকভাবে খুব কম কথাশিল্পীই সাহিত্যে ধারণ করতে পেরেছেন। হাসান আজিজুল হক সংকটের ছবি এঁকেছেন বারংবার কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি অনিঃশেষ আশাবাদেরই মানুষ।
সভাপতির বক্তৃতায় অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, হাসান আজিজুল হকের সাহিত্যে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাবাদ যেমন আছে তেমনি তার আড়ালও আছে। কোনো সরল তত্ত্বরেখায় তাঁকে ব্যাখ্যা করে চটজলদি সিদ্ধান্তে আসা যায় না। তিনি বলেন, হাসান আজিজুল হক আশির দশক পর্যন্ত তাঁর শিল্পচর্চাকে যেভাবে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন পরবর্তীকালে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অবস্থানের কারণে হয়তো সে মাত্রায় থাকেনি। কিন্তু অবশ্যই তিনি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ গল্পকার।