গরু-ছাগলের চিকিৎসা সেবা দিয়ে কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনয়নের কুশলীহার গ্রামের আ. ওহাব মুক্তার পৌঁছে গেছেন তার স্বপ্নের সিঁড়িতে। প্রশিক্ষণ ও কঠোর পরিশ্রমেই পূরণ হয়েছে তার স্বপ্ন।
মুক্তার কাহালু উপজেলার কুশলীহার গ্রামের মৃত রমজান আলীর পুত্র। এক সময় প্রতিনিয়িত তাদের সংসারে লেগেই থাকতো অভাব-অনটন। ছাত্র জীবনে মুরগী পালন তার সবচেয়ে বড় একটি স্বপ্ন ছিলো। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরই তার পিতা-মাতা মারা যান। তাদের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েন মুক্তার। টাকার অভাবে তিনি পড়তে পারেননি কলেজে।
ওই সময় তাদের এলাকায় খুবই ভালো আলুর চাষাবাদ হতো। ২০০৭ সালে মুক্তার সাহস করে মানুষের কাছে ধার-দেনা করে তিন বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেন। আলুর চাষ করে তার প্রায় ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়। সেই লাভের টাকা দিয়ে প্রথমে একটি গাভী কিনে পালন করেন। ৪/৫ মাস গাভী পালন করে ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়। গাভী বিক্রির টাকা দিয়ে সে প্রথমে ৫০০ মুরগী দিয়ে ছোট একটি খামার করে। তার অভিজ্ঞতা না থাকায় অন্যান্য খামারীদের কাছ থেকে পরামর্শ দিয়ে মুরগীর খাবার ও ওষুধ ব্যবহারের প্রদ্ধতি শিখে নেন। সেই খামার থেকে মুক্তার আয়-উন্নতির পথে হাটতে থাকে।
অপরদিকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী পালন ও চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ওই প্রশিক্ষণের পর আবার সিএলপি প্রাণিসম্পদের পল্লী চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর থেকে মুক্তার কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন । নিজের খামারের কাজের পাশাপাশি মাছচাষ শুরু করেন। গরু-ছাগলের চিকিৎসায় ভালো অভিজ্ঞতা অর্জনে ওই এলাকার পল্লী চিকিৎসক আ. রাজ্জাকের সাথে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গরু-ছাগলের চিকিৎসা করা দেখে নিজেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে গরু-ছাগলের চিকিৎসা শুরু করেন। বর্তমানে মুক্তারের আয়ের উৎস্য অনেক ভালো। নিজস্ব মুরগী খামার, গরু পালন, মাছচাষ, গরু-ছাগলের চিকিৎসা ও ওষুদ দোকান থেকে তিনি ভালো আয় করেন।
একজন ভালো গরু-ছাগলের চিকিৎসক হিসেবে আশে-পাশের গ্রাম গুলোতে তার নামও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে এখন তার আয় হয় ৩০/৩৫ হাজার টাকা। প্রায় ৪০ শতক জমি কিনে সেখানে মুরগীর সেট করেছে এবং দোকান ঘর করে সেগুলো ভাড়া দিয়েছে।
আবদুল ওহাব মুক্তার জানান, এক সময় আমার কাছে কোন টাকা পয়সা ছিলোনা। টাকার অভাবে দু-বেলা ভালো খাবারও জুটেনি। এখন আমার আর টাকা পয়সার অভাব নেই। আমি আমার স্বপ্নের সিঁড়িতে পৌছে গেছি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল