বরিশালে গরু চুরি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বরিশাল নগরীর রূপাতলীর ২ পয়েন্ট থেকে গাভী ও বাছুর সহ ৬টি গরু এবং জেলার বানারীপাড়ার চৌয়ারীপাড়া থেকে একই ব্যক্তির ৬টি গরু চুরি হয়। নগরীর রূপাতলী থেকে গাভী ও বাছুর চুরির দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড এবং তাদের ছবি হাতে পাওয়ার পরও পুলিশ কোন চোরকে সনাক্ত করে গ্রেফতার বা চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার করতে পারেনি। এতে চুরি যাওয়া গরুর মালিকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অন্যান্য গরু মালিকরা রয়েছেন আতংকে।
এর আগে জেলার উজিরপুর এবং গৌরনদীতে প্রাইভেটকারে করে গরু চুরির সময় দুই দফায় কয়েক জন চোর হাতেনাতে আটক হলেও গরু চুরি বন্ধ হয়নি।
গত পহেলা নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর গ্যাস টারবাইন এলাকার ইকবাল হোসেনের বিদেশী জাতের একটি গাভি এবং একটি বাছুর চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য স্থানীয় হাজী ফিলিংস্টেশনের সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়। পরে গরু দুটি নগরীর টিয়াখালী নতুনহাটে নিয়ে একটি পিকাপে উঠিয়ে বানারীপাড়ার বাইশারী নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নতুনহাট এলাকার আরেকটি সিসি ক্যামেরায় গরু নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য রেকর্ড হয়। এ ঘটনায় পরদিন কোতয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। এরপর যে পিকাপে করে গরু দুটি বানারীপাড়া নিয়ে যাওয়া হয় সেই পিকাপ চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার এবং চোর গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
কোতয়ালী থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, গরু চুরি রোধে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। চুরির কাজে ব্যবহৃত এক পিকাপ চালককে গ্রেফাতর করা হয়েছে। অভিযুক্ত চোর গ্রেফতারের জন্য বানারীপাড়ার বাইশারী একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবর রাতে গেটের চেইন ভেঙ্গে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের চৌয়ারীপাড়া গ্রামের মাহফুজুর রহমান লিটনের বিদেশীজাতের ৬টি গরু চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পরদিন ১৬ অক্টোবর থানায় অজ্ঞাত চোরদের নামে মামলা হলেও পুলিশ আজ পর্যন্ত চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার কিংবা চোর গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত ২২ অক্টোবর রাতে উজিরপুরের শিকারপুর গ্রামে ফারুক খানের একটি গাভী গরু চুরি হয়। প্রতিকার না পাওয়ায় আশংকায় ফারুক থানা পুলিশে অভিযোগ করেননি বলে জানান তার স্বজন সৈয়দ জাহিদ আলম।
বিগত কোরবানীর আগ মুহূর্তে কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড রূপাতলী এলাকা থেকে স্থানীয় এসকেন্দার মুন্সির ৪টি গরু ট্রলারে নিয়ে পালিয়ে যায় চোর চক্র। ওই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ করা হলেও আজ পর্যন্ত গরু উদ্ধার কিংবা চোর গ্রেফতার হয়নি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা আল-আমিন।
প্রায় ৩ মাস আগে উজিরপুরের জয়শ্রী এলাকায় মাঠে চড়ানো একটি গরু দিনদুপুরে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের দেয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ওই প্রাইভেটকার সহ ঝালাকাঠীর এক চোর আটক করে। অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। গরুটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার হলেও চোর চক্রের শিকড় রয়েছে গেছে অক্ষত।
এর কয়েকদিন আগে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে গরু নিয়ে পালানোর সময় ২ চোর আটক করে গৌরনদী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও পুলিশ ওই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
গৌরনদীর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন জানান, গত ১ বছরে ওই উপজেলার বার্থী এলাকার ৫টি গোয়াল থেকে অন্তত ২০টি গরু চুরি হয়েছে। একটি গরুও আজ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে অন্যান্য গরু মালিকরা রয়েছেন চুরি আতংকে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গরু চুরির ঘটনা উদ্বেগজনক। গরু চুরির বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজে কাজ করছেন। রাত ১১টার পর কোন এলাকা থেকে গাড়ি গেলে সেদিকে জনগণকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। গরু চুরির ঘটনায় জেলায় যে কয়টি মামলা হয়েছে সেগুলো তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল