গাজীপুরের টঙ্গীতে স্বামী-স্ত্রী মিলে এক প্রতিবন্ধী নারীকে হত্যার অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো: আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার বিজয়নগর থানার নিন্দারাবাদ গ্রামের মো: আব্দুল মান্নানের ছেলে সাইফুল ইসলাম উজ্জল (২৮) ও তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (১৯)।
নিহত বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী রাবেয়া সাবরিন লিখন (৩৩) টঙ্গীতে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন শারীরিক প্রতিবন্ধি সুরক্ষা ট্রাস্ট মৈত্রিশিল্পে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই বিশ্বজিত বিশ্বাস জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী পূর্ব থানার উত্তর আরিচপুর গাজীবাড়ী পুকুর পাড় এলাকার জনৈক গোলাম মোস্তফার বাড়ীর ২য় তলায় ভাড়া থাকতেন বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী রাবেয়া সাবরিন লিখন (৩৩)। গত ১৯ মে সকালে তিনি তার বাসায় রান্না করছিলেন। এ সুযোগে তার ঘরে প্রবেশ করে পাশের ঘরের ভাড়াটিয়া সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তার। পূর্ব পরিকল্পনা অনুয়ায়ী তারা রাবেয়া সাবরিনের হাত পা মুখ বেঁধে হত্যা করে ঘরের দরজা বাইরের দিক হতে ছিটকিনি লাগিয়ে পালিয়ে যায়। রান্না পুড়ে যাওয়ার গন্ধ পেয়ে পাশ্ববর্তী ভাড়াটিয়া সাদিয়া আক্তার সাথী লিখনকে ডাকতে এসে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ পেয়ে বাড়ির মালিককে খবর দেন। বাড়ির মালিক ও পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়ারা ঘরের দরজা খুলে দেখেন লিখনের লাশ হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় বিছানার উপর উপুর হয়ে পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় নিহতের নিহতের মা বাদি হয়ে জিএমপির টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ রবিবার ওই অভিযুক্ত স্বামী-স্ত্রীকে টঙ্গী থেকে আটক করে। পরে তাদের গাজীপুর আদালতে পাঠানো হলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বিশ্বজিত বিশ্বাস আরো বলেন, আসামী সাইফুল ইসলাম উজ্জল একটি গার্মেন্টে চাকুরী করে এবং সে অনলাইন আইপিএল জুয়ায় আসক্ত। তার দুই মাসের বাড়ী ভাড়া বাকী থাকায় স্ত্রী সাদিয়া আক্তারের সাথে প্রায়সই ঝগড়া হতো। আসামী সাইফুল ইসলাম নিহত রাবেয়া সাবরিন লিখনের বোনাস পাওয়ার খবর জানতে পেরে ঐ টাকা চুরির পরিকল্পনা করে। তারই প্রেক্ষিতে গত ১৯ মে সকালে লুকিয়ে তার রুমে আসামিরা ঢুকে লিখনের মুখ পেছন দিক থেকে চেপে ধরে বিছানায় উপুড় করে শুইয়ে তার পিঠে চেপে বসে এবং লিখনের মুখ ও হাত বেঁধে ফেলে। পরে সাইফুলের স্ত্রী লিখনের পা বেঁধে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। পরে সাইফুল নিহত লিখনের ব্যাগ থেকে ১,২৫০ টাকা, মোবাইলের বাক্স ও ২ কেজি চাল নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাইরে থেকে রুমের দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে আসামি সাইফুল ইসলাম চুরি করা টাকা তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তারের কাছে রেখে অফিসে চলে যায়।
এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাবেয়া সাবরিন লিখন একজন শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধী। এ ধরনের মানুষকে সমাজের বোঝা মনে না করে আমাদের সকলেরই উচিত তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। আসামিরা সামান্য কিছু টাকার জন্য যে গর্হিত অপরাধ করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল