সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। ‘হে মুমিন নরনারীগণ যে বিষয়টি হৃদয়কে সর্বাধিকভাবে উদ্ভাসিত, অন্তরকে পূর্ণ, জিহ্বাকে যা অধিকতর আলোকিত করে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সঠিকভাবে পরিচালিত করে তা হলো তাওহিদ ও একনিষ্ঠ বাণী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোনো সত্য মাবুদ নাই।’ এটি সেই বাক্য যার সাক্ষ্য আল্লাহ নিজেই নিজের জন্য দিয়েছেন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)কে দিয়েও তার সাক্ষ্যদান করিয়েছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ সাক্ষ্য দেন তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই। ফেরেশতাগণ ও জ্ঞানীরাও সাক্ষ্য দেন তিনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। (আল ইমরান-১৮)। তিনি ইনসাফের সঙ্গে নিয়মশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইবাদতের উপযুক্ত নয়। তিনিই পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (জাছিয়াহ ৩৬-৩৯)। এটি সাক্ষ্যের সর্বোচ্চ সম্মানিত, ন্যায়সংগত ও সর্বাধিক সত্যনিষ্ঠ সাক্ষ্য। যা সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সাক্ষ্য দাতা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।
এটি সেই মহাবাণী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। যার ভিত্তিতে আসমান ও জমিন স্থির হয়েছে এবং যার কারণে সব সৃষ্টিকে সৃজন করা হয়েছে। এ বাণী প্রচারের জন্য আল্লাহতায়ালা রসুলগণকে পাঠিয়েছেন, কিতাবগুলো অবতীর্ণ করেছেন এবং শরিয়তের বিধানগুলো প্রবর্তন করেছেন। (আল ইমরান-১৬৪)। এজন্যই কায়েম করা হয়েছে আমলের পাল্লা, রেকর্ড করা হয়েছে আমলনামা। এর ওপর নির্ধারিত হয়েছে কিবলার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দীন ও মিল্লাত।
এটি ইসলামের মূলনীতি ও শান্তির ঘর জান্নাতের চাবিকাঠি। শরিয়তের দায়িত্ব অর্পিত সব বান্দার কাছে। এটি আল্লাহর অধিকার। এ কালিমা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির শুরু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষকে প্রশ্ন করবেন। এ মহান বাক্যের উদ্দেশ্য হলো কারও মর্যাদা যতই উচ্চ হোক না কেন কিংবা সে মানুষের চোখে যতই সম্মানিত হোক না কেন, সে কোনো ধরনের ইবাদত পাওয়ার অধিকার রাখে না। কেননা ইবাদত কেবল একমাত্র আল্লাহর প্রাপ্য। তিনি পরিপূর্ণ ও সর্বব্যাপী প্রভূত্বের অধিকারী আর এ গুণ একমাত্র আল্লাহর রয়েছে। কারণ তার কাজগুলোতে গুণাবলিতে এবং তার নামগুলোতে রয়েছে সর্বাধিক পরিপূর্ণতা। আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছুই দুর্বল নির্ভরশীল ও মুখাপেক্ষী।
এজন্য তিনিই একমাত্র ইবাদতের হকদার। বিশ্বাসী ব্যক্তি এ বাক্যের মাধ্যমে স্বীকার করে নেয় একমাত্র আল্লাহই ইবাদতের প্রকৃত হকদার অন্য কেউ নয়। ফলে তার অন্তর ও দেহ অন্য কারও সামনে নত হয় না। সে তার প্রভু ছাড়া আর কারও ইবাদত করে না। তিনিই তো মহান আল্লাহ যার সামনে সেজদায় কপাল লুটিয়ে পড়ার আগেই অন্তরগুলো সমর্পিত হয়। এটা নবী ও রসুলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই, এ সাক্ষ্য দেওয়া এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর বান্দা আবশ্যক করে তোলেন। কাজেই লা ইলাহা ইল্লালাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য উপাস্য নেই, তখনই সম্পূর্ণ হবে যখন আন্না মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ এ সাক্ষ্য দেওয়া হবে। আল্লাহ কী ভালোবাসেন কী পছন্দ করেন তা জানার অন্য কেনো পথ নেই তার রসুল ছাড়া, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের তা জানিয়ে দেন। তাই রসুল (সা.)-এর আনুগত্য করতে হবে, তাঁর আদেশ মেনে নিষেধ পরিহার করে চলতে হবে। তাই আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে অবশ্যই স্থায়ীভাবে তাঁর রসুলকে ভালোবাসতে হবে এবং তাঁর প্রতি ইমান এনে তাঁকে অনুসরণ করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। মুয়াজ (রা.)কে আল্লাহর রসুল বলেন, হে মুয়াজ যে কেউ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সত্যভাবে হৃদয় থেকে সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। আর এ কালিমা ধারণকারী কেয়ামত দিবসে রসুল (সা.)-এর সুপারিশ লাভের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হবেন। আর হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসও অনুরূপ।
তাই আসুন! আমরা যারা কবর, মাজার ও বাবা পূজারি তারা আন্তরিক তওবা করে ওই পথ থেকে ফিরে আসি এবং সালাত, সিয়াম, হজ, জাকাত ও দানসদকাসহ সব ইবাদত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করি। একই সঙ্গে সব ইবাদত একমাত্র মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.) অনুসরণে আদায় করে জান্নাত লাভে সচেষ্ট হই। হে আল্লাহ আমাদের অতীতের সব ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে দীনের পথে চলার তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামিক গবেষক