২৬ মার্চ, ২০২০ ২১:২৫

ভুট্টোর কথা

সাদিকুর রহমান পরাগ

ভুট্টোর কথা

সফিকউদ্দিন ভুট্টো

বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের নেতাদের নাম ইতিহাস মনে রাখে। কিন্তু মনে রাখে না সেইসব সাহসী সন্তানদের কথা যারা প্রাণভয়কে তুচ্ছ করে মাঠে লড়াই করে যায়। ভুট্টো সেই সাহসী সন্তানদের একজন যার কথা ইতিহাসে লেখা থাকবে না। ভুট্টো সেই সাহসী সন্তানদের একজন যে তার কৈশোরে-তারুণ্যে নিজেকে উৎসর্গ করেছিল দেশের জন্য।

আমাদের উত্তাল তারুণ্যে এমন একটা সময় ছিল যখন আমাদেরকে লড়তে হয়েছিল সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, লড়তে হয়েছিল একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিরুদ্ধে। সারাদেশেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। খোদ রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার তরুণরাও সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। আমাদের একব্যাচ পরের ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের আল-মামুন থাকতো আজিমপুর নিউপল্টনে। ওর এলাকারই ছোটভাই ভুট্টো, মাসুদ ওরা। মূলত মামুনের হাত ধরেই ওরা আসতো, বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিতো। অসম্ভব রকমের ডাকাবুকো টাইপের ভুট্টোর ভয়ডর বলে কিছু ছিল না। মিছিলে ভুট্টো থাকলে সাহস অনেক বেড়ে যেত। সাহস বেড়ে যেত এই কারণে, যে কোনো পরিস্থিতিতে ভুট্টো কখনো মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যেত না। অনেকেই সেই সময় আসতো, কিন্তু ভুট্টো তার নিষ্ঠা, সাহস, চঞ্চলতা, দূরন্তপনা আর ব্যবহার দিয়ে সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। দ্রুতই হয়ে ওঠে সবার প্রিয়পাত্র।

একসময় জীবিকার তাগিদে ভুট্টো দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। তারপর থেকে ওর সঙ্গে যোগাযোগটা কমেই গিয়েছিল। এরপর কবে যে ও দেশে এসে সেটল করলো সেটিও আর জানা হলো না।

আজ ফেসবুকে মঞ্জু ভাইয়ের ওয়াল থেকে ভুট্টোর খবর পেলাম। খবর পেলাম আমাদের সেই ভুট্টো আর নাই। আমাদের অতি আদরের সেই ছোট ভাইটি আর নাই। মঞ্জু ভাইয়ের লেখা থেকে জানলাম যে ভুট্টো নাকি অসুস্থ ছিল। ওর ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই করোনা সন্দেহে ডাক্তার ওকে সরকারি হাসপাতালে যেতে বলে। ওকে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ডাক্তার দেখে। দেখে তারা বললো, সে করোনা আক্রান্ত নয়, তাকে অন্য যে কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তারপর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভুট্টোকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কেউ তাকে গ্রহণ করে না। এভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তারুণ্যে মৃত্যুকে ভয় না পাওয়া ভুট্টো।

ভুট্টোরা কখনো নিজের জন্য কিছু চায় নাই। ওরা চেয়েছিল শুধু দেশের ভালো হোক, দেশের মানুষের ভালো হোক। রাষ্ট্র হয়ে উঠুক মানবিক। সেই মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা ভুট্টো মৃত্যুর আগে মানবিক রাষ্ট্রটি আর দেখে যেতে পারলো না।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর