শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রতিকূলতায়ও ভোটে যাবে বিএনপি

স্বতন্ত্রভাবে লড়তে চায় জামায়াত

মাহমুদ আজহার ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিই এখন দলটির প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাই সব ধরনের নির্বাচন প্রস্তুতিতে সাময়িক ‘ভাটা’ পড়েছে দলটিতে। তবুও স্থানীয় সরকারের বিশেষ করে আগামী পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এখন মনোযোগী খালেদার মুক্তি আন্দোলনে। অবশ্য পাঁচ সিটির মধ্যে একটি বাদে বাকিগুলোর প্রার্থী আগের মেয়রই। শুধু বরিশালে প্রার্থী পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। অন্যদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এটা তাদের দলগত সিদ্ধান্ত বলেও জানা গেছে। 

বিএনপি সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নান, রাজশাহীর মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক  হোসেন বুলবুল, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং খুলনার মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনি আগামীতেও দলের মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন। আর বরিশালের বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালের পরিবর্তে সাবেক মেয়র ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি দলে আলোচনা আছে। আবার আহসান হাবিব কামালও প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে তার অবস্থান প্রায় শূন্যের কোঠায় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। বিএনপি সূত্র জানায়, পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক না কেন, সিটি নির্বাচনে যাবে বিএনপি। কারণ হিসেবে বিএনপি নেতারা বলছেন, সিটি নির্বাচনে ক্ষমতার পালা বদল হয় না। তা ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও উচ্ছ্বাস বাড়ে। তা ছাড়া এসব নির্বাচনের মাধ্যমে দলের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চায় দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘এ মূহূর্তে বিএনপির প্রধান কাজ হচ্ছে আমাদের চেয়ারপারসনকে কারামুক্ত করা। এ লক্ষেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। সিটি নির্বাচনের সময় হোক, তখন দেখা যাবে।’

২০১৩ সালের ১৫ জুন একযোগে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। একই বছরের ৬ জুলাই হয় গাজীপুর সিটির নির্বাচন। ওই নির্বাচনে সব সিটিতেই বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তাই এই পাঁচ সিটি নিয়ে আগামীতেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা ব্যাপক আশাবাদী। বরিশালের নির্বাচন প্রসঙ্গে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘এখন আমাদের মূল কাজ হচ্ছে বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। ম্যাডাম মুক্তিলাভের পর দলের নীতিনির্ধারকরা যদি আমাকে প্রার্থী করতে চান, সেক্ষেত্রেই কেবল বিবেচনা করা হবে। এর বাইরে কিছুই ভাবছি না।’  জানা যায়, কোনো কারণে মজিবর রহমান সারোয়ার নির্বাচন না করলে সেখানে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান  সেলিমা রহমানের কথাও ভাবা হচ্ছে। এ দিকে পাঁচ সিটিতে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এখন আমরা সবাই আন্দোলনে ব্যস্ত। নির্বাচনের এখনো দেরি আছে। তা ছাড়া বিগত নির্বাচনের প্রার্থীরা মনোনয়ন বাছাইয়ে তালিকার উপরের দিকেই থাকবেন। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এখনো কিছুদিন বাকি আছে। যথাসময়ে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে।’ জানা যায়, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পাঁচ সিটি নির্বাচনে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় বিএনপি। নির্বাচনী প্রচারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়টিকে তুলে ধরা হবে। জাতীয় সমস্যাগুলোও থাকবে প্রচারণায়। এর আগে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে এক বার্তা দেওয়া হয়, ভোটের ফলাফল পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকতে হবে। ফলাফল  ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত  ভোটকেন্দ্র থেকে বের না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নেতা-কর্মীদের কাছে বার্তা পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

দলের শীর্ষ নেতারা মনে করেন, সিটির জয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলা যাবে, সুষ্ঠু ভোট হলে সব নির্বাচনেই বিএনপি বিজয়ী হবে। তবে ভোট ডাকাতির শঙ্কাও রয়েছে দলটির। যদি  ভোট কেন্দ্র দখল করে কিংবা ভিন্ন কৌশলে কারচুপি করে জনগণের ফলাফল ছিনতাই করে আওয়ামী লীগ তাও জনগণের সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। জয়-পরাজয় দুটোতেই লাভের হিসাব দেখছে বিএনপি।

পাঁচ সিটিতে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী দেবে জামায়াত : আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই মেয়র পদে একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী। তবে নির্বাচন কমিশনের জামায়াতের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাতিল হওয়ায় স্বতন্ত্রভাবে নির্বচনী মাঠে লড়বেন তারা। এ জন্য নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণ করছে সংগঠনটি। ইতিমধ্যে সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনের জন্য একক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াত। বরিশাল, গাজীপুর ও খুলনায় প্রার্থী বাছাই চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন প্রভাবশালী সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সব সিটিতেই প্রার্থী ঠিক করতে শাখাগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তিন সিটিতে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি তিন সিটির প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে কোথাও জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সেলিম উদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াত। পরে অবশ্য আদালতের নির্দেশে ভোট স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে নগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ সিদ্দিক হুসাইন এবং সিলেট মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে সিলেটে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, দুটি কারণে জামায়াত আগেভাগেই নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে, প্রথমত, জামায়াত সরকারকে দেখাতে চাইছে তারা বিএনপির সঙ্গে সক্রিয় নয়। এতে জামায়াত আশা করছে সরকারে তাদের ব্যাপারে কিছুটা অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এককভাবে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে জামায়াত বিএনপিকে বার্তা দিতে চায় যে তাদের ব্যাপারে বিএনপির সাম্প্রতিক নিরাসক্তি তারা পছন্দ করছে না, এবং সামনের সাধারণ নির্বাচনে শরিক হিসেবে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর