বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

শ্রমিক ধর্মঘটে অচল নৌপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রমিক ধর্মঘটে অচল নৌপথ

লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে গতকাল স্থবির ছিল চট্টগ্রাম নৌবন্দর। নগরীর বাংলাবাজার ঘাট এলাকা থেকে তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নৌযান শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে সারা দেশে সব ধরনের নৌযান গতকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। নৌবন্দরগুলোয় লাইটারেজ শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে পণ্য পরিবহনেও অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। নৌপথে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ডাকাতি বন্ধ, ২০১৬ সালের ঘোষিত বেতন স্কেলের পূর্ণ বাস্তবায়ন, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেওয়া ও হয়রানি বন্ধ, নদীর নাব্য রক্ষা, নদীতে মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপনসহ ১১ দফা দাবিতে সোমবার মধ্যরাত থেকে ধর্মঘট আহ্বান করে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর সদরঘাট থেকে সারা দিন কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। অনেকেই ঘাটে এসে লঞ্চ না পেয়ে বিপাকে পড়েন। নৌপথের সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা বলেছেন, সকালে সদরঘাটে অনেক যাত্রী এসেছিলেন কিন্তু লঞ্চ না চলায় তারা ফিরে যান। তিনি জানান, সোমবার রাত ১২টার পর সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছাড়েনি। তবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাত ১২টার আগে ছেড়ে আসা ৪৩টি লঞ্চ সদরঘাটে এসেছে। এদিকে দিনভর লঞ্চ চললেও রাতে চলা শুরু হতে পারে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর যুগ্মপরিচালক (বন্দর) আলমগীর হোসেন।

শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো বন্ধ রয়েছে। দেশের অন্য নদীবন্দরগুলোতেও ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম থেকেও সারা দেশে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো বন্ধ রেখেছেন লাইটারেজ জাহাজের শ্রমিকরা। তাই কর্ণফুলী নদীতে অলস বসে আছে অন্তত দেড় শ লাইটারেজ জাহাজ। একইভাবে রপ্তানি পণ্য লোড করতে ও আমদানি পণ্য খালাসের অপেক্ষায়ও বন্দরের বহির্নোঙরে বসে আছে বেশকিছু মাদার ভ্যাসেল। চট্টগ্রাম বন্দরের ভিতরে কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও সার্বিকভাবে পণ্য পরিবহন ও ওঠানো-নামানোয় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।

লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ জানান, ধর্মঘটের কারণে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাট ও সংলগ্ন নদীতে প্রায় ১৫০টি জাহাজ অলস বসে আছে। ৫০টি জাহাজ পণ্য খালাসের জন্য বহির্নোঙরে গেলেও সেখানেও কাজ করছেন না শ্রমিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদীবন্দর। সোমবার রাত থেকে যাত্রী, পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযান বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নৌপথের যাত্রীরা। পণ্য ও জ্বালানিবাহী নৌযান বন্ধ থাকায় বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। গতকাল ভোর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো যাত্রীবাহী নৌযান গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি বরিশাল নদীবন্দর থেকে। নৌযানগুলো বন্দরের অদূরে মাঝনদীতে নোঙর করে রয়েছে। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল জেলা সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন তারা।

বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন বন্ধ রয়েছে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে নদীপথে দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কর্মবিরতির ফলে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও মোংলা নদীতে পণ্য বোঝাই ও খালি কার্গো-কোস্টার জাহাজগুলো অলস সময় পার করছে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ধর্মঘটে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মোংলা বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটে দুই শতাধিক কার্গো জাহাজ আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আটকে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে আশুগঞ্জের সঙ্গে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ৬টি নৌরুটের পাঁচ জেলা সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লঞ্চ যোগাযোগ। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। বন্ধ হয়ে গেছে নদীবন্দরের বিভিন্ন কার্যক্রম।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নৌযান ধর্মঘটে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো যাত্রীবাহী লঞ্চ। ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ভোরে চাঁদপুর নৌ টার্মিনালে এসে অনেক মানুষ বিপাকে পড়েন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শ্রমিক ধর্মঘটে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর অচল হয়ে পড়েছে। জাহাজ থেকে সার, জ্বালানি তেল, খনিজ কয়লাসহ অন্যান্য পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। পণ্যবাহী জাহাজগুলো বন্দরের দক্ষিণ পাশের বড়াল নদের মাঝচরে নোঙর করে রাখা হয়েছে। জাহাজ ও বন্দর শ্রমিকরা দিনভর অলস সময় পার করছে। বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপোর ইনচার্জ যমুনা অয়েল ডিপোর ম্যানেজার কে এম জাহিদ সরোয়ার বলেন, আপাতত বাঘাবাড়ীতে জ্বালানি তেলের কোনো সংকট নেই। তবে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকলে কিছু কিছু জ্বালানি তেলের ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর