নয় দিন আগে রবিউলের জ্বর হয়। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়ার বাসায় থাকেন তিনি। পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করালে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয়। রবিউলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে চিকিৎসকরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখান থেকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও তা জোটেনি রবিউলের ভাগ্যে। তার আগেই মারা যায় রবিউল। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে সারা বছরই আইসিইউ সংকট থাকে। সরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে সিট পাওয়া লটারি ভাগ্যের মতো। ডেঙ্গুর কারণে সেই সংকট আরও বেড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু রোগীর সংখ্যার তুলনায় এই বৃদ্ধি নামমাত্র।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে আইসিইউ ৩২টি। মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০টি, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০টি। দেশের সরকারি ৩০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও একটি ডেন্টাল কলেজের মধ্যে আইসিইউ আছে মাত্র ১৩টিতে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১১১। আর সাতটি ইনস্টিটিউটে ৭৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে সাতটি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২২টি। সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ২ হাজার ৬০০ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নেয়। ডেঙ্গু জ্বরে গতকালও ভর্তি হয়েছেন ১৮৩ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রেফার্ডে মুমূর্ষু রোগী এলে বাধে বিপত্তি। ২০০-এর মতো আইসিইউ শয্যার প্রয়োজন হলেও আছে মাত্র ৩২টি। এর মধ্যে কোনো দিন একটি বা দুটি খালি হয়। আবার কোনো দিন খালি হয় না। গত রবিবার ডেঙ্গু জ্বরে অবস্থার অবনতি ঘটায় ফরিদপুর থেকে ঢাকায় আনা হয় জয়ন্তী সাহাকে। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলে আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ঘুরে সময় যায় স্বজনদের। পরবর্তীতে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরেই মারা যান তিনি। ডেঙ্গু জ্বরে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। গতকাল ঢাকায় চারজন, কুমিল্লায় একজন, খুলনায় একজন, মাদারীপুরে একজন ও বাগেরহাটে একজন মারা গেছেন। গতকাল ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শারমিন আক্তার (২৫) নামে ঢাকার এক আবহাওয়াবিদের স্ত্রী মারা গেছেন। তিনি ৩২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসান (১৩) ও নকুল দাস নামের এক স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন। রাজধানীর ধানমন্ডি আনোয়ারা প্রাইভেট হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অথৈ সাহা (১১) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লায় আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় ঢাকা আনার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরে পথেই মারা গেছেন তিনি। খুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে খাদিজা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মাদারীপুরে শিবচরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রিপন হাওলাদার নামে (৩০) এক যুবক মারা গেছে। বাগেরহাটের শরণখোলায় ডেঙ্গু জ্বরে খাদিজা বেগম (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল খুলনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ডেঙ্গু জ্বরে ঝুঁকিতে রয়েছেন গর্ভবতী নারী এবং শিশুরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৬৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৫৯ জন এবং বাকি বিভাগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০৬ জন।