রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঈদকালীন ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতা

২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২১৭৬ জন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ঈদকালীন ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতা

ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছেন নগরবাসী। এতে করে রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঈদের ছুটিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের ছুটি বাতিলের সঙ্গে জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু গাইড লাইন প্রশিক্ষণে জোর দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং অধীনস্থ দফতর ও সংস্থার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত কর্মস্থল ত্যাগ না করার (ঢাকার বাইরে না যাওয়ার জন্য) নোটিস জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রম জোরদার ও সমন্বয় করার জন্য গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রশাসন-১ অধিশাখার যুগ্ম-সচিব শাহিনা খাতুন স্বাক্ষরিত এ নোটিস জারি হয়। নোটিসে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক তদারকি করার জন্য বলা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ১৭৬ জন। এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬৫ জন। ঢাকা শহর বাদে অন্য বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১১১ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রুশা (১০) নামে এক শিশু মারা গেছে। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকীর হোসেন জানান, ঢাকায় অবস্থানকালে রুশা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। গত দুই দিন আগে রুশার পরিবার সড়ক পথে রাজাপুরের গ্রামের বাড়ি আসে। পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বরিশালের রাহাত-আনোয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। ঈদের ছুটি শুরু হতেই রাজধানীর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি কমে বাড়ছে সারা দেশের হাসপাতালে। গত শুক্রবার রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৪৭ জন এবং অন্য জেলা ও বিভাগীয় সদরে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৫ জন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৫৯ জন এবং অন্য জেলা ও বিভাগীয় সদরে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৬৭ জন। ঈদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাস, ট্রেন, লঞ্চে মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হাসপাতালগুলো। এর মধ্যেই জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ডেঙ্গু শনাক্তকরণে অপরিহার্য উপাদান কিট। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দেশের জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালসমূহে ঈদের ছুটিকালীন ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে বরাদ্দকৃত অর্থের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গুর আরডিটি ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ওষুধ প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।  স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেছেন, জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালগুলো সরকারি টাকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ কিট কিনতে পারবে। পরবর্তীতে রোগীর উপসর্গ দেখে পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়লে তারা বিনামূল্যে টেস্ট করাবে। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলো নির্ধারিত দামে ডেঙ্গু টেস্ট ফি নেবে। ঈদে ঢাকার বাইরে গিয়ে কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাদের সেবার সার্বিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। এর মধ্যেই পর্যাপ্ত কিট আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সহযোগিতায় ৬৪টি জেলার সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট আরএমও, মেডিসিন ও শিশু বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৬৪ জেলা সদর হাসপাতালে ঈদে রোগী বাড়ার আশঙ্কায় আগাম ব্যবস্থা হিসেবে অতিরিক্ত এনএস১ কিট সরবরাহ করা হয়েছে। ই-কমার্স প্লাটফর্মের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতে ১৬ লাখ স্কাউটকে সম্পৃক্ত করেছে। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০ শয্যার দুটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ এই ডেঙ্গু ওয়ার্ডের উদ্বোধন করবেন। রাজধানীর বাইরে অন্য বিভাগীয় ও জেলা সদর হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। আমাদের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবার ঈদুল আজহার ছুটি নেওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেলের হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদে যাতে কোনো রোগীকে ভোগান্তিতে না পড়তে হয়, সে জন্য আগাম সব ওষুধ ও সব ধরনের টেস্টের উপকরণ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রাখা হয়েছে। আমাদের বগুড়ার নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঈদকালীন ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগী বাড়লে তাদের সেবায় আগাম প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। বগুড়া সিভিল সার্জন গওসুল আজিম চৌধুরী বলেন, ঈদের ছুটিতে রোগী বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা থেকে অনেকেই বগুড়ায় আসছেন। এই সময় সাবধান না থাকলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। রোগীদের সুচিকিৎসায় চিকিৎসক, নার্সসহ সব স্বাস্থ্য কর্মী তৎপর রয়েছে।

সর্বশেষ খবর