বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ই-পাসপোর্টের যুগে বাংলাদেশ

মুজিববর্ষের উপহার, আমরাই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

মুজিববর্ষের উপহার, আমরাই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম : প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট কর্মসূচি এবং স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন করে বলেছেন, এটা (ই-পাসপোর্ট) জাতির জন্য ‘মুজিববর্ষে’ একটি উপহার। তিনি বলেন, ‘আমরা মুজিববর্ষে দেশের জনগণের হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দিচ্ছি। এটি একটি বিশেষ বছর এবং ঘটনাক্রমে জাতি এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে। এর মাধ্যমে যে কোনো দেশে প্রবেশ এবং বহির্গমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকের ঝামেলামুক্ত চলাচল নিশ্চিত হবে এবং ই-গেটের সর্বাধিক সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।’

গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক  সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ই-পাসপোর্ট কর্মসূচি এবং স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। খবর বাসস।  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফাহরেনহোল্টস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বহির্গমন এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের (ডিআইপি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান, ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তাঁর ই-পাসপোর্ট হস্তান্তর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ই-পাসপোর্ট ভবনের ফলক উন্মোচন করেন এবং এনরোলমেন্ট বুথ পরিদর্শন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ই-পাসপোর্ট এবং স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা সন্দেহাতীতভাবে ডিজিটাল বিশ্বে বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদা আরও সমুন্নত করবে এবং বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ই-পাসপোর্টে এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রো প্রসেসর চিপ থাকবে। যেখানে পাসপোর্ট গ্রহীতার সব তথ্য, স্বাক্ষর, ছবি, চোখের কর্ণিয়া এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট সিল্ড অবস্থায় সুরক্ষিত থাকে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, অতীতে একটা সমস্যা ছিল পাসপোর্ট নিয়ে। একসময় গলাকাটা পাসপোর্টও দেশে প্রচলিত ছিল, সেটা আর কখনো হবে না। মানুষ আর ধোঁকায় পড়বে না। স্বল্পতম সময়ে ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ গ্রহণে এবং এর আগে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু করায় ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একেকবার নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছি এবং সেটা যে তারা কার্যকর করতে পারছেন এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ বাংলাদেশকে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ই-পাসপোর্ট প্রসঙ্গে বলেন, একটি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন পদ্ধতি আমরা গ্রহণ করেছি, যার সুযোগটা দেশের মানুষ পাবে। তিনি বলেন, বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে আমরা তা চালু করতে পেরেছি এবং আমরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি। ফরেন রেমিট্যান্স দেশের উন্নয়নে কাজে লাগায় সেই প্রবাসীদের দেশ-বিদেশে যাতায়াত সহজীকরণের লক্ষ্যে তাঁর সরকারের এ উদ্যোগ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, দেশের অভ্যন্তরে ৬৪টি জেলায় ৬৯টি পাসপোর্ট অফিস, ৩৩টি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, বিদেশে অবস্থিত ৭৫টি বাংলাদেশ মিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা উইংয়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন সেবাকে আমরা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন সেবাকে যুগোপযোপী করতে ই-পাসপোর্ট প্রদান করতে যাচ্ছি। যাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আর হয়রানির শিকার না হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ই-পাসপোর্টের সঙ্গে ই-গেটও সংযোজিত হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট সংযোজিত হলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট সেবা সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে।’

বাউল ঐতিহ্য যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় : সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একজন বাউল শিল্পীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানে বাউল গানের তো কোনো দোষ নেই। বাউল গানে সম্পৃক্ত কেউ যদি কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হন, তাহলেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আইন অনুযায়ী অপরাধের বিচার হবে। সরকার বাউল গানকে বিশ্ব ঐতিহ্য করার উদ্যোগ নিচ্ছে। তাই অনুরোধ করব, বাউল গানে সম্পৃক্তরা যেন এমন কোনো কাজ না করেন, যাতে বিশ্ব ঐতিহ্য বাউল গান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে গতকাল তিনি এ কথা বলেন। আইসিটি মামলায় টাঙ্গাইলের বাউল শরিয়ত বয়াতীর গ্রেফতারের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রশ্নকর্তা। এর আগে বিকাল সোয়া ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্নকর্তা কী এমন কোনো গ্যারান্টি দিতে পারবেন- বাউল গান করছেন বলেই ওই শিল্পী কোনো অপরাধে জড়িত নন। নিশ্চয়ই তিনি এমন কোনো অপরাধ করেছেন, যার জন্য তার বিরুদ্ধে এমন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর আগে রাজবাড়ীর পাংশার বাউল সম্প্রদায়ের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসকদের মতো এখনো যদি চুল কেটে দেওয়ার মতো কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সরকার সেটা দেখবে। তিনি কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের বাউল সম্প্রদায়ের কল্যাণে সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। 

 

সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকদের লাভবান করতে হবে : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বেসরকারিভাবে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকদের লাভবান করতে পুরনো সমবায় আইনকে যুগোপযোগী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার সচেষ্ট : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট। অসৎ মুনাফাখোর কতিপয় ব্যবসায়ী মাঝেমধ্যে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন এবং অধিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করে থাকে।

সবজি রপ্তানি শুরু হয়েছে : সরকারি দলের শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকারের উদ্যোগ ও গবেষণার ফলে মৌসুমি তরিতরকারি ও শাকসবজি সারা বছর উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। বেসরকারি উদ্যোগে সবজি তরিতরকারি রপ্তানি করা শুরু হয়েছে।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ : মাহফুজুর রহমানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। শোষণ-বঞ্চনামুক্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার সুনিশ্চিত করা আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সরকার যথাযথ আইনি সংস্কার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

ধনী, গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করে সামাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের লক্ষ্যে ৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোর যে দ্রুত বিচার সম্পন্ন হচ্ছে তার প্রমাণ ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা। আইনের শাসন নিশ্চিতকল্পে বিচার কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দুর্নীতির মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের দুর্নীতির মামলাসহ অন্য চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে বা আশ্রয় গ্রহণ করে আছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

সর্বশেষ খবর