শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

পাঠ্যবইয়ের অভাব বাংলা ভাষা চর্চার প্রতিবন্ধকতা

হাসনাত আবদুল হাই

পাঠ্যবইয়ের অভাব বাংলা ভাষা চর্চার প্রতিবন্ধকতা

পাকিস্তান আমলেই বাংলা রাষ্ট্রভাষা হলো। এটা বিরাট মর্যাদার ব্যাপার। কিন্তু, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে যেভাবে ব্যবহার করা দরকার, সেভাবে হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ পরিভাষা। আমাদের খুবই প্রয়োজনীয় ইংরেজি অনেক বই এখনো অনুবাদ হয়নি। যেমন- পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, অর্থনীতি। এসব বিষয়ের সব বই বাংলায় পাওয়া যায় না। সে জন্য শিক্ষার্থীদের এখনো ইংরেজি বই পড়ে বুঝতে হয়, শিক্ষকদের কাছে যেতে হয়। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে এটা একটা বড় প্রতিবন্ধকতা।

বাংলায় পর্যাপ্তসংখ্যক বই ছাপা হয়নি। বই লেখাও হয়নি। এ জন্য আমরা সবাই দায়ী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন, ভাষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী- সবাই কমবেশি দায়ী। থাইল্যান্ডে সব বিষয় থাই ভাষায়। সেখানকার সব বই, তা স্থাপত্য হোক বা ওষুধের বই হোক- সবই থাই ভাষায়। ওদের ইংরেজি পড়তেই হয় না। বইয়ের অভাব বাংলা ভাষা সর্বস্তরে প্রচলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। আমরা বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দিচ্ছি। সেই মর্যাদাটা মুখে মুখে। কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে এখনো বাংলার প্রচলনটা সেভাবে হয়নি। এটা কোনো দুরভিসন্ধি নয়। মূল কথা, বই নেই। বাংলা একাডেমির অনুবাদে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন ১৯৬৪ সালে তারা আমাকে দিয়ে মুদ্রা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর একটা বই লিখিয়েছিল বাংলায়। এতে একটা বিষয়ের বই অন্তত পাওয়া গেল। কিন্তু অর্থনীতির অন্য যে বই রয়েছে সেগুলো তো বাংলায় লেখা হয়নি। বাংলা একাডেমি বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একটা বই করেছে। বিষয়ভিত্তিক সব বই বাংলায় অনুবাদ করতে হবে, যাতে বাংলা বই পড়েই স্মাতক বা স্মাতকোত্তর পরীক্ষা দেওয়া যায়। লিখতে হবে বাংলায়। কিন্তু, বাংলা একাডেমি এটা করছে না। তারা বেশি নজর দিচ্ছে সাহিত্যে। তা দিক। কিন্তু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ব্যবহারের জন্য যে বই লেখা দরকার তা বাংলা একাডেমি করছে না। অথচ, এটা খুবই জরুরি।

শুধু বাংলায় লেখা নয়, বাংলা বই ইংরেজিতে অনুবাদও দরকার। অনুবাদ না করায় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা বইগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারছি না। অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলার প্রচলন করতে সব পাঠ্যবই বাংলায় লিখতে হবে। অন্যদিকে শিল্প-সাহিত্যের বই, যা আমাদের বহির্বিশ্বে পরিচিত করাবে, সেগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করতে হবে। একটা হলো বাংলায় লেখা, অন্যটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা। দুটোই বাংলা একাডেমির করা উচিত। তারা করছে না। তারা কবিতার বই নিয়ে আছে। লোকসংস্কৃতি নিয়ে আছে। ওগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যবই বাংলায় লেখা ও আমাদের শিল্প-সাহিত্যের বই ইংরেজিতে অনুবাদ করা। কোনো দুরভিসন্ধি নয়, এক ধরনের আলসেমি ও পরিকল্পনাহীনতার কারণে এটা হচ্ছে না।

ভাষার চর্চা তিনভাবে হয়। একটা সাহিত্যের চর্চা। আরেকটি দৈনন্দিন জীবনে। তৃতীয় হলো পাঠ্যবই। আমাদের সাহিত্যের বই অনেক। গল্প-কবিতার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার চর্চা ভালোই হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে বাংলাই বলছি বেশি। সবচেয়ে সংকট পাঠ্যবইয়ের। এটা ভাষা চর্চায় বড় প্রতিবন্ধকতা।

লেখক : কথাশিল্পী। অনুলেখক : শামীম আহমেদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর