মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় ক্ষতি হবে বহির্বাণিজ্যে

বেইজিং থেকে জরুরি মেইল

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চীনে করোনাভাইরাসের প্রভাব আরও দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিজনিত সাপ্লাইচেইনে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে। দেশের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ গার্মেন্টশিল্পের উপকরণ ও মেশিনারিজ আমদানির জন্য বাংলাদেশ চীনের ওপর নির্ভরশীল। এটি কমে যেতে পারে। পদ্মা সেতুর মতো বড় অবকাঠামো যেখানে চীনের সংশ্লেষ রয়েছে থমকে যেতে পারে সেগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রম।  চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে সতর্ক করে একটি জরুরি মেইল পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে। বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ওই মেইলে উল্লেখ করেন, ‘চীনের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী ও বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে কাজ করছেন। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় দেশের বৃহত্তম অবকাঠামোগুলোর বাস্তবায়ন সময়মতো শেষ করা নিয়ে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে।’  কেননা চীনের নাগরিকদের চলাচল এরই মধ্যে সীমিত করা হয়েছে বিশ্ব পরিসরে। বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার দেশটির বাণিজ্য খাতে করোনাভাইরাস যে উদ্বেগ তৈরি করেছে- সেটি তুলে ধরে মেইলে বলা হয়, ভাইরাসের ভয়াবহতা চীনের সামগ্রিক সাপ্লাইচেইনে আঘাত করেছে, যা বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিজনিত বহির্বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দেশের সাপ্লাইচেইনেও বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। মেইলে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক আমদানির ২৫ থেকে ২৮ শতাংশ আসে চীন থেকে। তৈরি পোশাকশিল্প তথা বস্ত্র খাতের ৪০ শতাংশ উপকরণের জন্য এ দেশের ব্যবসায়ীরা চীনের ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন খাতে দেশীয় শিল্প-কারখানার অন্তত ৩০ শতাংশ মেশিনারিজ পণ্য আসে চীন থেকে। এসব খাতে শিল্পের কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে সেটি রপ্তানি খাতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা দেশের বহির্বাণিজ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, করোনাভাইরাস পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রভাব মূল্যায়নে কাজ করছি আমরা। তারই অংশ হিসেবে কমার্শিয়াল কাউন্সিলরকে পরিস্থিতির ওপর পর্যালোচনা পাঠাতে বলা হয়েছিল। করোনার নেতিবাচক প্রভাব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের কোন কোন খাতে কতটা পড়তে পারে- সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কাছেও প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা করণীয় নির্ধারণ করব। পণ্যের কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানির বিকল্প বাজার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যই চীনের বিকল্প বাজার পাওয়া কঠিন। দেশের মোট আমদানির এক-চতুর্থাংশের বেশি আসে চীন থেকে। এর মধ্যে প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পের উপকরণ আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চীনের ওপর নির্ভরশীল। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কোনো কিছুর জন্যই ব্যবসা-বাণিজ্য থেমে থাকবে না। বেইজিং থেকে পাঠানো মেইলে চীনের সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়েছে, দেশটিতে অ্যাপল, গুগল, মাইক্রোসফট, স্যামসাং, টেসলার’র মতো বিশ্বখ্যাত বড় বড় টেকনোলজি প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে তাদের সব করপোরেট অফিস, উৎপাদন কারখানা এবং পাইকারি দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফাস্টফুড ম্যাকডোনাল্ডস, কফিশপ চেইন স্টারবাকস এবং আসবাব পণ্যের আইকিয়ার মতো আন্তর্জাতিক মানের চেইনশপগুলো চীনে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান প্রদেশকে অটো ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পশহর হিসেবে উল্লেখ করে মেইলে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতি দেশটির অটোশিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চীনের পর্যটন, পরিবহন, শিক্ষা এবং বিমান চলাচল খাত। দেশটির স্টকমার্কেট অন্ততপক্ষে ৯ শতাংশ দর হারিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিকদের চলাচল বন্ধ থাকায় চীনের কারখানাগুলোর অচলাবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এ ছাড়া নববর্ষের ছুটি শেষে শিল্প-কারখানায় ফিরে আসা শ্রমিকের সংখ্যাও কমছে। তবে আশার কথাও উঠে এসেছে ওই মেইলে। বলা হয়েছে, দেশটির বাণিজ্য এবং জাতীয় উন্নয়ন দফতর সামগ্রিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

 স্থানীয় সরকার উহানে ১৮টি খোলাবাজার মার্কেট চালু করেছে। হুবেই প্রদেশে স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাণিজ্য দফতর পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতিতে কাজ করছে। দেশটির জাতীয় দৈনিকে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাব সত্ত্বেও দেশটির জিডিপি ৫ শতাংশের নিচে কমবে না। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে বিপুল উদ্যমে উৎপাদনযজ্ঞ পরিচালিত হবে।

সর্বশেষ খবর