শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

ভয়াবহ ইতালি স্পেন নিউইয়র্ক

বিশ্বে মৃত্যু ২৩ হাজার ৯ জন, আক্রান্ত ৫ লাখ ৯ হাজার ৬৭৮

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। বর্তমানে ইতালির পর স্পেন ও নিউইয়র্কে ল-ভ- অবস্থা বিরাজ করছে। খুব খারাপ অবস্থা ফ্রান্সেও। সূত্র : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গতকাল ভোর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গোটা বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয় ২ হাজার ২৭৪ জনের। এ পর্যন্ত মোট মারা গেছে ২৩ হাজার ৯ জন। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে সব থেকে বেশি ৬৮৩ জনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে ইউরোপের এ দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ হাজার ৫০৩-এ। মৃত্যুতে খুব পেছনে থাকেনি স্পেনও। ওই সময় পর্যন্ত স্পেনে করোনা কেড়ে নেয় ৬৫৬ জনের প্রাণ। প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী মহামারীর রূপ নেওয়ায় গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন ২০০ কোটির বেশি মানুষ, এর সিংহভাগই ভারতের। কারণ লকডাউন চলছে গোটা ভারতে। সেখানে ঘরবন্দী আছেন প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ। এ ছাড়া এশিয়া-ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশ ও শহরের মানুষও রয়েছেন গৃহবন্দি। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৯ জন, আক্রান্ত ৫ লাখ ৯ হাজার ৬৭৮ এবং রোগমুক্তির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার। এ সময় পর্যন্ত সারা দিনে নতুন মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০০, আক্রান্ত প্রায় ২১ হাজার। নতুন মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ইরানে ১৫৭ ও ২ হাজার ৩৮৯, বেলজিয়ামে ৪২ ও ১ হাজার ২৯৮, সুইজারল্যান্ডে ১৮ ও ৪১৯, জার্মানিতে ২৩ ও ৩ হাজার ৯৮, ইন্দোনেশিয়ায় মৃত্যু ২০, পর্তুগালে ১৭, অস্ট্রিয়ায় ১১, ফিলিপাইনে ৭, মালয়েশিয়ায় ৩, চীনে ৬ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫ জন। এদিকে স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সন্ধ্যায় জানায়, ল-ভ- অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া স্পেনে ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৫৫ জন, আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১৮৮-এ, মৃত্যু ৪ হাজার ৮৯ জনের। এ ছাড়া দেশজুড়ে লকডাউনের মেয়াদ আরও ১৫ দিন বাড়ানোর ব্যাপারে সায় দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো শানচেজের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। আমেরিকায় এক দিনে আক্রান্ত ১০ হাজার : আমেরিকায় অসম্ভব গতিতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। গত বুধবার শুধু এক দিনেই মারা গেছেন ২০০ ব্যক্তি। এর ফলে আমেরিকার করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ওই দিন বেড়ে দাঁড়ায় ৯২১-এ। এই এক দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। ইনডিপেনডেন্ট ইউকের খবরে বলা হয়েছে, কেবল নিউইয়র্কেই ২ শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৬ জনের। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের। সেখানে পুলিশ বিভাগের কমপক্ষে ২১১ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ৩ হাজার ২০০ পুলিশ অফিসার অসুস্থ যা নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, নিউইয়র্কে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে ৪২২ জনের। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। করোনায় কাশ্মীরে প্রথম মৃত্যু : কলকাতা প্রতিনিধি জানান, করোনায় ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালের দিকে শ্রীনগরের ডালগেটের চেস্ট ডিজিজ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। উপত্যকার হায়দরপোরার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি বেশ কিছুদিন ধরেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ওবসিটি সমস্যায় ভুগছিলেন। হাসপাতালের তরফ থেকে বলা হয়েছে, চিকিৎসকদের সবরকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ওই রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ওই বৃদ্ধের নানা শারীরিক সমস্যাও ছিল।

জানা গেছে, সম্প্রতি দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও জম্মু ঘুরে বাসায় ফিরেছিলেন ওই ব্যক্তি। ওইসব জায়গায় ‘তাবলিগ জামাত’-এ অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে আগত মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, গোটা ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা এখন ৬০৬। এর মধ্যে ৪৩ জন বিদেশি নাগরিক। মৃতের সংখ্যা ১৩। পশ্চিমবঙ্গে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১-এ, মারা গেছেন একজন। শুধু লকডাউনেই করোনা থামবে না : করোনাভাইরাস রোধে শুধু লকডাউন যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস।

গতকাল এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ডব্লিউএইচওর প্রধান বলেন, ‘করোনাভাইরাস রোধে অনেক দেশ লকডাউনের ব্যবস্থা নিয়েছে। মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু শুধু এসব পদক্ষেপে বিশ্ব থেকে করোনাভাইরাসের মতো মহামারীর ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যাবে না। করোনাভাইরাস রোধ করতে আমরা বিশ্বের সব দেশকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে জিততে হলে একটি দ্বিতীয় পথ রাখতে হবে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘মানুষকে বাইরে চলাফেরা না করে ঘরে থাকতে বলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সময় পাওয়া যাবে এবং লকডাউন দিয়ে হয়তো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমানো যেতে পারে। এর বেশি কিছু নয়। এসব দিয়ে করোনাভাইরাস দূর করা যাবে না, মহামারী ঠেকানো যাবে না। এর বিরুদ্ধে সবাইকে আক্রমণাত্মক হতে হবে। তাই সন্দেহভাজনদের সন্ধান করুন, বিচ্ছিন্ন করুন, করোনার পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসা করুন। এটাই সর্বোত্তম উপায়।’

উহানে বাস সার্ভিস চালু : হুবেই প্রদেশ ও উহান শহরে আসা কর্মীদের অভ্যন্তরীণ যাতায়াতে সুবিধার জন্য গত বুধবার রাত ১২টা থেকে উহানে ১১৭টি বাসের রুট পুনরায় চালু হয়েছে। আগামী শনিবার থেকে ছয়টি সাবওয়ে লাইনও খুলে দেওয়া হবে। হুবেই প্রদেশের করোনাভাইরাস প্রতিরোধের নির্দেশনা কেন্দ্র সম্প্রতি হুবেই প্রদেশের ওপর থেকে বাইরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং উহান শহরের উৎপাদন কাজ পুনরায় শুরু করার নির্দেশনা দেয়। হুবেই প্রদেশের বিশেষ স্বাস্থ্য কোড বা ‘সবুজ কোডধারী’ লোকজন শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রদেশে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে পারবেন। উহান শহরের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, যাত্রীদের বাস ও সাবওয়েতে চলার সময় মাস্ক পরতে হবে, শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে, নিরাপত্তার জন্য নিজের আসল নাম দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে এবং কোড স্ক্যান করে বাস বা সাবওয়েতে উঠতে হবে। যারা হুপেই প্রদেশের বাইরে থেকে এসেছেন এবং ‘সবুজ কোড’ নেই, তারা নিজ প্রদেশের বিশেষ ‘স্বাস্থ্য কোড’ দিয়ে বাস ও সাবওয়েতে চলাচল করতে পারবেন। একই সঙ্গে নিজের আসল নাম দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে এবং কোড স্ক্যান করে বাস বা সাবওয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া সর্বোচ্চ মাত্রায় সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ৬৫ বছর বয়সের বেশি বয়সী ও যাদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের গণপরিবহন এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর