বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে

জিন্নাতুন নূর

দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে

সৈয়দ আবুল মকসুদ

বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, সমন্বয়হীনভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের ফলে সৃষ্ট দুর্ঘটনা থেকে ভবিষ্যতে যদি আমরা বাঁচতে চাই তাহলে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিতে হবে। এ জন্য একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, সমন্বয়হীনতা দেখার জন্য যদি একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ না থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত এগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার দায়িত্বও কেউ নেবে না। অর্থাৎ সেবামূলক সব সংস্থা যেমন- সিটি করপোরেশন, রাজউক এবং তিতাস গ্যাস অন্য সব সংস্থার একটি কেন্দ্রীয় অথরিটি থাকতে হবে। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন।

এই প্রাবন্ধিক বলেন, দেখা যাচ্ছে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা যে কর্তৃপক্ষের নজরদারি করার কথা তারা তা করছেন না। তাদের কর্তব্যে অবহেলা এবং দুর্নীতির কারণেই গ্যাস-বিদ্যুতের লাইনগুলো সমন্বয়হীনভাবে টেনে নেওয়া হচ্ছে। সাধারণত কোনো স্থাপনা যখন তৈরি করা হয় তা বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা আর এটি তৈরির ফলে সাধারণ মানুষের চলাচলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করছে কিনা তা নজরদারি করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কিন্তু এটি যথাযথভাবে নজরদারি না করার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার অবৈধ গ্যাস লাইনের কারণেও বহু দুর্ঘটনা ঘটছে। এ জন্য দুর্ঘটনা রোধে অবিলম্বে অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করতে হবে কিংবা তা নিয়মিত করতে হবে।

সৈয়দ আবুল মকসুদ আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন স্থাপনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এগুলো সমন্বয় করার দায়িত্ব যাদের তারাও তা ঠিকভাবে পালন করেন না। যার জন্য মাঝেমধ্যেই ছোট-বড় দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি ঘটছে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মসজিদে বিস্ফোরণে যে ২৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে তা কোনো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্যই এ দুর্ঘটনা এবং এত প্রাণহানি ঘটেছে। একে বলা হয় ‘অনিচ্ছাকৃত হত্যাকান্ড’। আর এই হত্যাকান্ডের দায় সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর নিতে হবে। তার মতে, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শুধু চাকরি থেকে বরখাস্ত করাই পর্যাপ্ত শাস্তি নয়।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ-গ্যাস এবং ওয়াসার মতো সংস্থাগুলোর দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। দুর্নীতির কারণে এই সংস্থাগুলোতে কর্মরতরা নিজেদের কাজ ঠিকভাবে করছেন না। মাঠ পর্যায়ের কর্মচারী নিয়মিত কাজ করছে কিনা তা ওপরস্থ কর্মকর্তাদের নজরদারি করার কথা। কিন্তু এ কাজটিও করা হচ্ছে না। ওপরস্থ কর্মকর্তারা তাদের নজরদারির দায়িত্বে অবহেলা করেন। যে কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। নারায়ণগঞ্জের যে মসজিদটিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেই মসজিদটি নির্মাণের আগে তিতাস গ্যাসের লাইন টেনে নেওয়া হয়। শুধু মসজিদই নয়, আশপাশের আরও বাড়িঘর নির্মাণের আগেও গ্যাসের এই লাইন টেনে নেওয়া হয়। কিন্তু এখানে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি যে সংস্থার দেওয়ার কথা অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এই বিষয়গুলো তদারকি করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করার কারণে এ দুর্ঘটনায় সিটি করপোরেশন তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। একইভাবে দায়িত্ব এড়াতে পারে না তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষও।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর