বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাগলা মিজান ও জি কে শামীমের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন পাগলা মিজান। মালিক হয়েছেন ১৫টি ফ্ল্যাটের। তার স্ত্রীর নামে আছে তিনটি ফ্ল্যাট। মানি লন্ডারিং মামলায় হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে এ চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, মোহাম্মদপুরের সাবেক কাউন্সিলর পাগলা মিজানের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকায় আসেন। পরে মোহাম্মদপুরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বাহিনীর লোকজন ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করত। ’৭৫ সালে মোহাম্মদপুরে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত বাড়ি দখল করেন মিজান। ’৯৪ সালে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। মিজান মাদক কারবারে গঠিত বাহিনীর গডফাদার হিসেবে পরিচিত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে কাগজপত্রের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মানি লন্ডারিং মামলায় মিজানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। সিআইডি-সূত্র জানান, পাগলা মিজান গত বছরের ১১ অক্টোবর গ্রেফতার হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে। তার বাবা আবদুল মালেক মিয়া ঢাকায় জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঝাড়ুসহ খাবার সরবরাহ করতেন। দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় এসে বাবার ব্যবসায় যোগ দেন। ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়েন নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। ছিনতাই করে ধরা পড়ার পর বস্ত্রহীন অবস্থায় পাগলের মতো আচরণ করেন। পুলিশ ‘পাগল’ ভেবে তাকে ছেড়ে দেয়। তখন থেকে হাবিবুর রহমানের বদলে ‘পাগলা মিজান’ নামে পরিচিতি পান। একসময় গড়ে তোলেন ‘মিজান বাহিনী’। এ বাহিনীর লোকজন সিটি করপোরেশনের ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করত। পরে সে ঢাকনা সিটি করপোরেশনের কাছেই বেশি দামে বিক্রি করত। একপর্যায়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন পাগলা মিজান। মোহাম্মদপুরে দখল করেন আটকে পড়া পাকিস্তানিদের (বিহারি) পরিত্যক্ত বাড়ি। সেখানে তিনি বসবাস শুরু করেন।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ’৭৫ সালের শেষ দিকে মিজান মিরপুর-১০ নম্বরের এ-ব্লকে মিষ্টির দোকান দেন। নাম দেন হাবিব সুইটমিট। ’৮০ সালে গণপূর্তের ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। টানা ১৪ বছর এ ব্যবসা করেন। ’৯৪ সালে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বছিলায় ইটভাটা দেন। নাম দেন এইচআরএম। বছিলায় হাবিব প্লাজা নামে একটি মার্কেট আছে তার। লালমাটিয়ার স্বপ্নপুরি হাউজিংয়ে আছে তার সাতটি ফ্ল্যাট। মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব সড়কে আছে আরেকটি ফ্ল্যাট। রাজধানীর পল্টনের একটি পাঁচ তলা ভবনের মালিক মিজান। সেখানে আছে তার ১০টি ফ্ল্যাট। পাগলা মিজান মিশুক অ্যান্ড কোম্পানি ও ঢাকার হজ কাফেলা অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক। পাগলা মিজান মোহাম্মদপুরের অনীক সিদ্দিকী নামে এক ব্যক্তির ৫ কোটি টাকা মেরে দেন। হাবিব প্লাজার জায়গা বিক্রি বাবদ ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা নিলেও সম্পত্তি বুঝিয়ে দেননি। বছিলা বেড়িবাঁধসংলগ্ন খ্রিস্টানপল্লীর জমি দখল করে সেখানে ২০টি টিনশেড ঘর গড়ে তোলেন। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে সিটি করপোরেশনের সমবায় মার্কেটের ১৩৫টি দোকান বরাদ্দ দেওয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসার ভাগ নিতেন তিনি। সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, চারটি ব্যাংক হিসাবে তার নামে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৫৪ টাকা পাওয়া গেছে। করোনায় পাগলা মিজানের স্ত্রী মারা গেছেন। যে কারণে তাকে এ মামলার আসামি করা হয়নি।

অবৈধ সম্পদের মামলা জি কে শামীমের বিরুদ্ধে চার্জশিট : জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে চার্জশিটের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে তাদের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। শিগগিরই তা আদালতে দাখিল হবে।

এর আগে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে মা ও ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

সূত্রে জানা যায়, শামীম ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লেখ থাকলেও মোট টাকার বৈধ উৎসের খোঁজ পায়নি দুদক। এ ছাড়া জি কে শামীমের বাসা থেকে পাওয়া নগদ ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রারও বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫  কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরও ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদারিত্বের বৈধ কোনো উৎস খুঁজে পায়নি দুদক। এ ছাড়া জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬  কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর