অর্থ পাচার এক ধরনের ক্যান্সার, যা দেশের জাতীয় অর্থনীতির পরিধি সংকুচিত করছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি উত্তরণে আইনি কাঠামো করলেও তা বাস্তবায়নে সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। অর্থ পাচার প্রতিরোধে আইনের সংশোধন, কার্যকর প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ এবং পাচারকারীদের নাম প্রকাশে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হওয়া উচিত। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘অর্থ পাচার রোধে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা’ নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডি বিশেষ ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, ড. শাহ আলম চৌধুরী, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও কাবেরী মৈত্রেয়। এতে সরকারি দল নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশকে পরাজিত করে বিরোধী দল প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে ক্রেস্ট, ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন, জাতীয় বাজেটে কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক চর্চা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে অর্থ পাচার প্রতিরোধে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশে আর্থিক খাতের দুষ্ট ক্ষত হলো ঋণ খেলাপ ও অর্থ পাচার। অর্থ পাচার রোধে সরকারের নানা দৃশ্যমান পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারাও অর্থ পাচারে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। সরকার ও দুদক সক্রিয়ভাবে কাজ করার কথা বললেও অর্থ পাচার প্রতিরোধে রাজনৈতিক জবাবদিহি আরও জোরদার করতে হবে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে জড়িত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজদের তালিকা জাতীয় সংসদসহ গণমাধ্যমে প্রকাশ করে জনগণের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দৃশ্যমান বিচার করতে পারলে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বেড়ে যাবে।ছায়া সংসদে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে অর্থ পাচার প্রতিরোধে ১০ দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। সুপারিশগুলো হচ্ছে- মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ সংস্কার করে অর্থ পাচারকারীদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার ব্যবস্থা করা, অর্থ পাচারকারীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশে আইনগত বাধা দূর করা, আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা, অর্থ পাচারকারীরা দেশে কোনো রাজনীতি বা নির্বাচনে মনোনয়ন যাতে না পায় সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা, অর্থ পাচার রোধে সর্বদলীয় রাজনৈতিক ঐক্য তৈরি করা, অন্য দেশে নাগরিকত্ব গ্রহণকারী সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার জন্য পৃথক সেল করা, অনুসন্ধানের মাধ্যমে অর্থ পাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে যারা বিদেশে বাড়ি করেছেন তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা, দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সর্বস্তরে গণজাগরণ তৈরি করা, অর্থ পাচার রোধে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে আরও শক্তিশালী করা এবং দেশে বেসরকারি বিনিয়োগে আমলাতান্ত্রিকতা দূর করে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা।