বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পৌরসভায় ইভিএমে ভোট কম, ব্যালটে বেশি

গোলাম রাব্বানী

ধাপে ধাপে পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি, ভোট কাস্টিং কম বেশি হচ্ছে। একেক ধাপে ভোটার উপস্থিতি, একেক রকম। কোনো পৌরসভায় ইভিএমে ভোট কম পড়ছে, অনেক পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ভোট বেশি পড়ছে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, অঞ্চল ভেদে ভোটার উপস্থিতি কম, বেশি হচ্ছে। ইভিএম বা ব্যালটের কারণে নয়।

ফলাফলে দেখা গেছে, প্রথম ধাপে ইভিএমে ভোট পড়েছে ৬৫.২৫ শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে ব্যালট ও ইভিএম ভোট পড়েছে ৬১.৯২ শতাংশ। আর তৃতীয় ধাপে ব্যালটে ভোট পড়েছে ৭০.৮২ শতাংশ। গড়ে ইভিএমের চেয়ে ব্যালটে ৫ শতাংশ ভোট বেশি পড়েছে। আর দ্বিতীয় ধাপের ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোট কম পড়েছে ১১ শতাংশ। এবার পাঁচ ধাপে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিন ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম ধাপে গড়ে ভোট পড়েছে ৬৫.২৫ শতাংশ। ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে এ ধাপে পটুয়াখালীর কুয়াটাকায় সর্বোচ্চ ৮৫.৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে। সবচেয়ে কম চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ৪০.৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা ওই ধাপে সবচেয়ে কম ভোট।

দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারির পৌরসভা নির্বাচনে ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে প্রায় ১১ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হয় ১৬ জানুয়ারি। এর মধ্যে চারটি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মেয়র পদে ভোট হয়নি। বাকি ৫৬টি পৌরসভার মধ্যে ২৬টিতে ভোট নেওয়া হয় ইভিএমে। বাকি ৩০টিতে ভোট হয় কাগজের ব্যালটে। দ্বিতীয় ধাপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যালট পেপারে ভোট পড়ার হার ছিল ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর ইভিএমে ভোট পড়েছে ৫৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ব্যালট পেপারে যেসব পৌরসভায় ভোট হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে ৪টি পৌরসভায়। তবে কোনোটিতেই ৫৫ শতাংশের নিচে ভোট পড়েনি। আর ৭৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ১৪টি পৌরসভায়। দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ব্যালটে ভোট পড়েছে গড়ে ৬৮.১৫ শতাংশ। ইভিএমে ভোট পড়ার গড় হার ৫৭.৩৪ শতাংশ। এ ধাপে ব্যালটে সর্বোচ্চ ৮৫.০৪ শতাংশ ভোট পড়েছে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ পৌরসভায়। দ্বিতীয় ধাপের ব্যালটে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ৫৬.৪০ শতাংশ। আর ইভিএমে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে রাজশাহীর কাকনহাট পৌরসভায় ৮৩.৪৪ শতাংশ। আর সবনিম্ন ইভিএমে ভোট পড়েছে সাভার পৌসভায় ৩৩.৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া ইভিএমে মোংলায় ভোট পড়েছে ৪০.৪৬ শতাংশ, ৩৮.৬৩ শতাংশ ভোট পড়েছে ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভায়। 

তৃতীয় ধাপে ব্যালটে ভোট ৭০.৪২ শতাংশ : তৃতীয় ধাপে ব্যালট পেপারের ভোটে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপের ১৯,০৮,৬১৫ ভোটারের মধ্যে মেয়র পদে ভোট দিয়েছেন ১৩,৪৪,০১৬ জন। সে হিসাবে, এ ধাপের ভোটের হার ৭০.৪২ শতাংশ। সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে নওগাঁর ধামইরহাটে ৯২.১৪ শতাংশ। এ ছাড়া বগুড়ার কাহালু পৌরসভায় ভোট পড়েছে ৮৮.০৪ শতাংশ। এটা এ ধাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট। সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে ৪১.৮৭ শতাংশ মৌলভীবাজারে। এ ধাপে ব্যালটে ৮০ শতাংশের উপরে ভোট পড়েছে ১৪ পৌরসভায়। একটি মাত্র পৌরসভায় ৪১.৮৭ শতাংশ। আর বাকি সব পৌরসভায় ৫০ শতাংশের উপরে ভোট পড়েছে। ইভিএমে কম, ব্যালটে বেশি ভোট কাস্টিংয়ের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ইভিএমে কম থাকে, ব্যালটে বেশি থাকে, এটা কিন্তু সব জায়গায় নয়। সব জায়গায় ভোটার উপস্থিতি এক রকম তাও কিন্তু নয়। কোনো কোনো জায়গায় ভোটারের উপস্থিতি অনেক। যেমন তৃতীয় ধাপে মৌলভীবাজারে ব্যালট পেপারে ভোটের হার এসেছে ৪১.৮৭ শতাংশ। এটা সবচেয়ে কম। আবার ব্যালটে ৮৮.০৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বগুড়ার কাহালু পৌরসভায়। তিনি বলেন, অঞ্চল ভেদে ভোটারের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভোটের হার কত হতে পারে বা কম বেশি হতে পারে। শুধু ইভিএমের কারণে যে ভোটের হার কমে যাচ্ছে, শুধু ব্যালটে বেড়ে যাচ্ছে, এটা কিন্তু নয়। তাহলে মৌলভীবাজার এবং কাহালু যে ফারাক এটার কি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারব? ওই অঞ্চলে (মৌলভীবাজারে) ভোটার উপস্থিতি হয়তো কোনো কারণে কম হতে পারে। ভোটার নাও আসতে পারে বা ভোটার আনার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের যে ভূমিকা, সেটা হয়তো ওইভাবে ছিল না। আবার কাহালু হয়তো প্রার্থীরা চেয়েছে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসুক। তিনি বলেছেন, ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে আসে, আমরা সেই পরিবেশ দেব। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ দেওয়ার জন্যই এত কিছু আয়োজন। ভোটাররা যাতে তাদের স্বাধীন মতামত প্রয়োগ করতে পারে, সেটা অ্যানশিওর করার সব ধরনের প্রচেষ্টা কমিশনের থাকে, সব ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হয়। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, পলাশবাড়ী পৌরসভায় ইভিএমে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে ভোটারদের অত্যন্ত আগ্রহ দেখেছি। অনেকেই বলেছে মেশিনে ভোট দেব বলে, ভোট দিতে এসেছি। এটা মিডিয়া থেকে জেনেছি। অনেকেই বলে আমরা ইভিএমে ভোট চাই। গ্রামের লোকজন ইভিএমে ভোট দিতে চায়। ইভিএমের প্রতি ভোটারদের আগ্রহ আছে, কৌতূহল আছে।

সর্বশেষ খবর