মঙ্গলবার, ৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শ্বাসকষ্ট বেড়েছে সিসিইউতে খালেদা জিয়া, সিঙ্গাপুরে নিতে চায় পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গতকাল বিকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের  সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়েছে। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন কেবিনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তবে তিনি স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর কিংবা তিনি স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস   নিতে পারছেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সন্ধ্যায় ডা. জাহিদ বলেন, ‘সিসিইউতে যখন কোনো রোগী থাকেন তাঁরা স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেন। আমি ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কথা বলে এসেছি। ম্যাডাম স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন।’ তিনি বলেন, আজ (সোমবার) ভোরে বেগম খালেদা জিয়া শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। এর পরপরই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। পরে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তে ম্যাডামকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। রোগমুক্তির জন্য খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বলেও জানান ডা. জাহিদ। কী কারণে খালেদা জিয়ার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের যে কোনো সময়, যে কোনো পরিস্থিতিতে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ম্যাডামের সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি যে চিকিৎসকরা আছেন তাঁদের সিদ্ধান্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানাতে পারব। তবে খালেদা জিয়ার আবারও করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান ডা. জাহিদ হোসেন।

এদিকে, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সিঙ্গাপুর নিতে চায় তাঁর পরিবার। গত রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোনে এ কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় মির্জা আলমগীর বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার বলে বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়েছেন। তবে বেগম জিয়াকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বিষয়ে লিখিত কোনো আবেদন এখনো করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বোন সেলিমা ইসলাম।

সূত্র জানায়, এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে ভর্তির পর সেখানে এক থেকে দুই দিন রাখার কথা বলেছিলেন তাঁর চিকিৎসকরা। তখন তারা (চিকিৎসক) জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার করোনোর উপসর্গ নেই। তাই তাঁকে হাসপাতালের নন-কভিড জোনে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এক দিন পর চিকিৎসার জন্য অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। রবিবার মেডিকেল বোর্ড বসে সব পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে নতুনভাবে কিছু শারীরিক পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকীরে নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হলে ফল আবারও পজিটিভ আসে। ‘ফিরোজা’র বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও আরও ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন। তবে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র সব স্টাফ ইতিমধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন।

৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে তাকে ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি দেয়। পরে আরও দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে বাইরের কারও যোগাযোগ সীমিত।

সর্বশেষ খবর