বৃহস্পতিবার, ৬ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে ফাঁড়িতে হত্যায় পাঁচ পুলিশসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার চার্জশিটে সাময়িক বরখাস্ত পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। হত্যার প্রায় সাত মাস পর গতকাল সকালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতের পুলিশ প্রসিকিউশন শাখায় এ চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিটটি গ্রহণ করেন প্রসিকিউশন শাখার পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ। প্রসিকিউশন শাখা চার্জশিটটি ভার্চুয়াল আদালতে উপস্থাপন করবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কার্যক্রমের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান। ২২ পৃষ্ঠার চার্জশিটে মামলার সাক্ষী করা হয়েছে ৬৯ জনকে। এর মধ্যে ১০ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। চার্জশিটে প্রধান আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে। অন্য অভিযুক্তরা হলেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ, টিটুচন্দ্র দাস, ফাঁড়ির ‘টুইআইসি’ এসআই মো. হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের বন্ধু কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান। এর মধ্যে অভিযুক্ত সব পুলিশ সদস্যকে ইতিমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। চার্জশিট জমা দেওয়ার পর নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন পিবিআইর বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। ব্রিফিংয়ে তদন্তের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন তিনি। তিনি বলেন, গত বছরের ১১ অক্টোবর রাত পৌনে ২টার দিকে গোলাগঞ্জের সাইদুল শেখ ও রণি শেখ কাস্টঘর সুইপার কলোনি থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে চার পিস ইয়াবা কেনেন। ইয়াবাগুলো আসল না নকল এ নিয়ে রায়হানের সঙ্গে বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে রায়হান নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে মারধর করে তাদের থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ ৯ হাজার ৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেন।

ঘটনার পর বন্দরবাজারে টহল পুলিশের একটি দল পেয়ে সাইদুল শেখ ও রণি শেখ পুলিশের কাছে মারধর ও ছিনতাইর অভিযোগ করলে পুলিশ কাস্টঘরের সুইপার কলোনির চুলাই লালের ঘর থেকে রায়হানকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর আরও জানান, ছিনতাই করা টাকা উদ্ধার, পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই ও আটকের সময় পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ এবং ছিনতাই ঘটনার তথ্য উদ্ধারে ফাঁড়ির ভিতরে বেতের লাঠি দিয়ে এসআই আকবর হোসেন ভঁ‚ইয়াসহ আসামি অন্য পুলিশ সদস্যরা তাকে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করেন। গুরুতর অবস্থায় তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হান মারা যান। এ ছাড়া হত্যার পর ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবরকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন কোম্পানীগঞ্জের আবদুল্লাহ আল নোমান। পুলিশ সুপার জানান, হত্যার পর আসামিরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে কাস্টঘরে ছিনতাইকালে গণপিটুনির শিকার হয়ে রায়হান মারা গেছেন বলেও মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেন।

এদিকে চার্জশিটে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন রায়হানের মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, রায়হানকে ফাঁড়িতে ধরে আনার পর এ রকম অভিযোগ করেনি পুলিশ। তাকে মেরে ফেলার পর নিজেদের অপরাধ ঢাকতে এখন কল্পকাহিনি তৈরি করছে। চার্জশিট প্রসঙ্গে প্রসিকিউশন শাখার পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ জানান, করোনা পরিস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে হচ্ছে। তাই আপাতত আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করা যাচ্ছে না। আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর পরই চার্জশিটটি দাখিল করা হবে। চার্জশিটে অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার ও আবদুল্লাহ আল নোমানকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী জানান, পিবিআইর দাখিলকৃত অভিযোগপত্র ও সংযুক্ত অন্যান্য কাগজপত্রে কোনো অসংগতি থাকলে আপত্তি জানানো হবে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ অক্টোবর রাতে কাস্টঘর এলাকা থেকে সিলেট মহানগরের নেহারিপাড়ার বাসিন্দা যুবক রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে আনে পুলিশ। এরপর টাকার জন্য ফাঁড়ির ভিতরে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। নির্যাতন করে তার হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়। পরদিন সকালে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ঘণ্টা পর তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। হত্যার ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে হেফাজতে মৃত্যু নিরোধ আইনে থানায় মামলা করেন। প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরে তদন্তভার পিবিআইতে ন্যস্ত হয়।

সর্বশেষ খবর