মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ঈদুল ফিতর ও করণীয়

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

ঈদুল ফিতর ও করণীয়

ইসলাম ধর্মে দুটি উৎসব বা ঈদ রয়েছে। এক. ঈদুল ফিতর দুই. ঈদুল আজহা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব উৎসবের দিন রয়েছে। আর এই দিন হলো আমাদের উৎসবের দিন। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৯৫২; সহিহ মুসলিম, হাদিস ৮৯২)

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের খুশি প্রকাশের দিন। আনন্দ-উৎসবের দিন। এ আনন্দ আল্লাহতাআলা তাঁর বান্দাদেরকে দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার যে বিধান দিয়েছেন এবং তা পালন করার তৌফিক দিয়েছেন এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার এবং তাঁর মহত্ত্ব ও       বড়ত্ব বর্ণনা করার। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহতাআলা বলেন, এবং (তিনি চান) যাতে তোমরা (রোজার) সংখ্যা পূরণ করে নাও এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে পথ দেখিয়েছেন সেজন্য আল্লাহর তাকবির পাঠ কর এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সুরা বাকারা : ১৮৫)।

ঈদ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। ঈদের প্রেক্ষাপট যদি লক্ষ্য করি তাহলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন সেখানকার লোকেরা দুটি দিনকে বিশেষ দিন হিসেবে পালন করত। ওই বিশেষ দিনে তারা খেলাধুলা ও আনন্দ ফুর্তির মাধ্যমে সময় কাটাত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুই দিন কীসের দিন?

লোকেরা উত্তরে বলল, আমরা জাহেলি যুগ থেকে এ দুই দিন আনন্দ-উৎসব করে আসছি। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ দুটি দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। সে দুটি দিন হলো, ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১১৩৪)

 

অতএব, আমাদের ঈদ আনন্দ উদ্যাপিত হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুসারে। আমাদের আনন্দ উদ্যাপন হবে পাপ পঙ্কিলতামুক্ত। নিম্নে একজন মুমিনের ঈদ উদ্যাপন কেমন হবে সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা হলো-

১. অন্য দিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে ওঠা। (সুনানে কুবরা, বাইহাকি, হাদিস ৬১২৬)

২. মিসওয়াক করা। (হাশিয়াতুত তাহতাবি পৃ: ২৮৯)

৩. গোসল করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩১৫)

৪. সামর্থ্য মোতাবেক ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করা এবং বৈধ সাজগোজ গ্রহণ করা।

(সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস ১৭৬৬; সুনানে কুবরা, বাইহাকি, হাদিস ৬১৪৩)

৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। (আদ্দুররুল মুখতার ২/১৬৮)

৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টিজাতীয় জিনিস, যেমন- খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আজহাতে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং ঈদের নামাজের পর নিজের  কোরবানির গোশত দ্বারা আহার করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৯৫৩; জামে তিরমিজি, হাদিস ৫৪২)

৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১১৫৭)

১০. ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা। (আদ্দুররুল মুখতার ২/১৬৮)

১১. ঈদের দিন রোজা না রাখা। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আজ বান্দার আনন্দের দিন। তাই আল্লাহতাআলা হারাম করে দিয়েছেন এ দিনের রোজা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৩)

১২. ঈদের দিনের একটি বিশেষ আমল হলো বেশি বেশি তাকবির বলা। তাকবির হলো, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আল্লাহু আকবর, আল্লাহ আকবর, ওয়া লিল্লাহিল হামদ। (সুনানে দারাকুতনি, হাদিস ১৭১৬; সুনানে কুবরা, বায়হাকি, হাদিস ৬১২৯)

১৩. ঈদগাহে এক পথে যাওয়া। আরেক পথে ফেরা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১২৯৫)

১৪. পরস্পরের সাক্ষাতে এই দোাটি পাঠ করা, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের আমলগুলো কবুল করুন)। (ফাতহুল বারি ২/৪৪৬)

১৫. সাধ্যানুযায়ী অধিক পরিমাণে দান খয়রাত করা। (আদ্দুররুল মুখতার-২/১৬৯)

এর পাশাপাশি শরিয়তের সীমার ভিতর থেকে সামাজিকতা রক্ষা এবং আনন্দ-বিনোদনে অংশগ্রহণ করায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

পরিশেষে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দরবারে মিনতি করছি, ঈদ যেন আমাদের জীবনে বয়ে আনে অনাবিল সুখ শান্তির বার্তা। ভ্রাতৃত্বের পয়গাম। দূর করে সব অশান্তির কালো আধার। প্রতিষ্ঠিত করে সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও উদারতার পরিবেশ।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভির ইসলামী প্রোগ্রাম উপস্থাপক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর