মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টি বেহাল

৭৭টি সাংগঠনিক জেলার ৪৭টি মেয়াদোত্তীর্ণ, ১৬ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন নেই

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টি বেহাল

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যবার্ষিকী আগামী ১৪ জুলাই। গত দুই বছরে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা কি পর্যায়ে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ দলের ভিতরেই। জানা গেছে, পার্টির ৭৭টি সাংগঠনিক জেলার ৪৭টিই মেয়াদোত্তীর্ণ। ১৬টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সবকটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এরশাদের মৃত্যুর পর গত দুই বছরে অনুষ্ঠিত সব পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়ে শুধু একটি উপজেলায় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। এদিকে এরশাদের জীবদ্দশায় প্রতি মাসে তালিকা করে অনেককে দান করা হতো, সে প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ট্রাস্ট নিয়ে রয়েছে ষড়যন্ত্র। এরশাদ ট্রাস্টের সব সম্পদ নেই ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রণে। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্টি এখন অনেক চাঙা। সংসদেও আমরা সরব রয়েছি। সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্টি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি জেলায় কমিটি গঠনের কাজ চলছে। তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বলতে কিছু নেই। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করা হচ্ছে। করোনা ও বিধিনিষিধের কারণে কাউন্সিল করা যাচ্ছে না। গত দুই বছরে অনুষ্ঠিত  নির্বাচনে অনেক জায়গায়ই পার্টির প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার কারণে এমন ফল হয়েছে। জানা যায়, গত দুই বছরে উল্লেখ করার মতো পার্টির কোনো জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। পার্টির চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে কোনো জেলায় সম্মেলন করতে পারেননি। একই অবস্থা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও। পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে প্রত্যেকটি বিভাগে একজন করে বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য কাজ করছেন। গত দুই বছরে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে অংশ নিয়ে শুধু সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। জানা গেছে, এইচ এম এরশাদের জীবদ্দশায় পার্টি কয়েকটি ভাগে ভাগ হলেও তাঁর মৃত্যুর পর দল এখনো এক রয়েছে। তবে, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন না। এদিকে সম্মেলনের মাধ্যমে জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রেসিডিয়ামের পদ না পাওয়া এরশাদের করা ১০ জন প্রেসিডিয়ামের অধিকাংশই সারা দেশে পার্টির পদ না পাওয়া ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তারা যে কোনো সময় এরশাদের আদর্শ সামনে রেখে নতুন আঙ্গিকে দলের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারেন। এদের অধিকাংশই এরশাদ ট্রাস্ট এবং রওশন এরশাদকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছেন। এরশাদের জন্মদিন, মৃত্যবার্ষিকীতে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেন তারা। প্রয়াত এরশাদ সর্বশেষ যে জোট গঠন করেছিলেন জোটের একটি বড় অংশও ট্রাস্টের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছেন। এদিকে এরশাদ জীবদ্দশায় যাদের তালিকা করে প্রতি মাসে দান করতেন তা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ট্রাস্ট বা পার্টির পক্ষ থেকে তাদের খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও উপলব্ধি করা হয় না। ট্রাস্টের অধীনে যত সম্পদ রয়েছে তা এখনো বুঝে পাননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ব্যক্তিগতভাবে দখল করে ভোগ করছেন অনেকে। জানতে চাইলে ট্রাস্ট চেয়ারম্যান কাজী মো. মামুনুর রশীদ জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাস্টের সম্পদ বুঝে না পাওয়ায় এইচ এম এরশাদ জীবদ্দশায় যেসব দান করতেন তা বন্ধ রয়েছে। সব সম্পদ বুঝে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। দল গঠন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা পল্লীবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। জি এম কাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাদের দলে রাখার প্রয়োজন মনে করেননি। আমরা পল্লীবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য এইচ এম এরশাদের পরিবারকে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন প্ল্যাটফরম গড়ে তোলার জন্য কাজ করে চলেছি। আর এইচ এম এরশাদ জীবদ্দশায় যাদের দান করতেন ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তা অব্যাহত না থাকলেও তাদের অনেকের জন্যই ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সহায়তা চালু রয়েছে। জানা যায়, সংসদে মাঝে মধ্যেই সরব হয়ে উঠে জাতীয় পার্টি। নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন, সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রাজপথে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি নেই। মহামারী করোনা পরিস্থিতির জন্য সবকিছু আটকে আছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। নেতা-কর্মীরা বলছেন, এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক চরিত্র কী রূপ নেবে, শক্তি-সামর্থ্যে দলটির অবস্থানই বা কেমন হবে এমন প্রশ্ন ছিল রাজনৈতিক মহলে। দলের কর্তৃত্ব নিয়ে যে দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছিল তা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেনি। বক্তৃতা-বিবৃতিতে চারপাশের বাস্তবতা নিয়মিত তুলে ধরছেন জি এম কাদের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর