সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রেসিডেন্টের অভিশংসন চেয়ে ব্রাজিল উত্তাল

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রেসিডেন্টের অভিশংসন চেয়ে ব্রাজিল উত্তাল

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই দেশে ভয়ানক বিপর্যয় নেমে এসেছে- অভিযোগ তুলে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসানারোর অভিশংসনের দাবি জানিয়ে রাজপথে নেমেছেন ১০ সহস্রাধিক ব্রাজিলিয়ান। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি। রিও, সাও পাওলো, বেলো হরাইঝন্টে, রিসিফি ও রাজধানী ব্রাজিলিয়াসহ  ব্রাজিলের প্রায় ২শর বেশি শহরে বিক্ষোভকারীরা ‘বোলসানারো তুমি গণহত্যাকারী’ স্লোগান দেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ‘বোলসানারো তুমি ব্রাজিলের দুর্ভোগ’- এমন স্লোগান দিতেও দেখা যায়।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রাজিলের ৫৭ ভাগ নাগরিক তার অভিশংসনের দাবিকে সমর্থন করছেন। রিও সিটি সেন্টারে বিক্ষোভ করা ৫৫ বছরের নাগরিক অধিকারকর্মী সিলভিয়া ডি মেনডোনসা বলেন, ‘গণহত্যাকারী বোলসানারো প্রশাসনকে পরাজিত করার লড়াইয়ে আজ একটি উল্লেখযোগ্য দিন।’ করোনায় ছোট ভাইকে হারানো ৪৮ বছরের বাজানি ডি সিলভা বলেন, ‘আমরা আর কোনো ব্রাজিলিয়ানের মৃত্যু দেখতে পারব না। সরকার পতন হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রতিদিন রাজপথে নামব।’ মনোরোগবিদ ইরিনি গ্রেদার (৬৯) বলেন, ‘সরকার কোনো সক্রিয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমার দুই আত্মীয় প্রাণ হারিয়েছেন। এই সরকার ভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর।’ অর্থনীতিবিদ আনা পৌলা কারভালহো (৪৬) বলেন, ‘বোলসানারো ব্রাজিলের দুর্ভোগ। ব্রাজিলিয়ান জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বোলসানারোকে আন্তর্জাতিক আদালতে নেওয়া উচিত। তিনি এই মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী।’

প্রসঙ্গত, বিশ্বে করোনায় মৃত্যুতে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ব্রাজিলে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষ এই মহামারীতে মারা গেছেন। প্রথম থেকেই প্রেসিডেন্ট বোলসানারো করোনাকে ‘সাধারণ ফ্লু’ আখ্যা দিয়ে ক্রমাগত সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউনের বিরোধিতা করেছেন।

খবরে বলা হয়, বামপন্থি রাজনৈতিক দল, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সামাজিক গোষ্ঠীর ডাকে চতুর্থ সপ্তাহের মতো বিক্ষোভ চলছে ব্রাজিলে। বোলসোনারোর বিরুদ্ধে টিকা কেনায় সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে তদন্তও চলছে। রিও ডি জেনিরোতে কয়েক হাজার মানুষ লাল পোশাক ও মাস্ক পরে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা এ সময় ‘কেউ আর কিছু নিতে পারবে না’, ‘দুর্নীতিবাজ বিদায় হও’ বলে স্লোগান দেন। বিক্ষোভের আয়োজকরা বলছেন, গণতন্ত্র রক্ষা ও ব্রাজিলের অধিবাসীদের জীবন রক্ষার জন্য বোলসোনারোকে সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।

গত শনিবার বিকাল পর্যন্ত ব্রাজিলের ২৬টি রাজ্যের ২০টিতে  বোলসোনারোবিরোধী বিক্ষোভ চলেছে। দেশটির গণমাধ্যমে বিক্ষোভের ছবি ও খবর প্রকাশ হয়েছে। আয়োজক সংস্থাগুলো বিক্ষোভে কত মানুষ অংশ নিয়েছেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেয়নি। তবে ব্রাজিলের অন্যতম জনবহুল শহর সাও পাওলো ও রাজধানী ব্রাজিলিয়ায় আরও বড় ধরনের বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে।

আরেক খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমছে। জনমত জরিপে আগামী অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের বামপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার কাছে বোলসোনারো পরাজিত হতে পারেন বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। চলমান বিক্ষোভের পেছনে লুলা ডি সিলভার ওয়ার্কার্স পার্টির বড় ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন কংগ্রেসে বিরোধীরা বোলসোনারোর অভিশংসনের দাবি উত্থাপন করেন। তবে স্পিকারসহ কংগ্রেসে বোলসোনারোর পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন থাকায় অভিশংসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর