নামমাত্র রক্ষণাবেক্ষণ খরচে সরকারি ফ্ল্যাটে থাকবেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এ জন্য ১ হাজার ১৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৬ পৌরসভায় নির্মাণ করা হবে ৩ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের তীরভূমি সাজানো প্রকল্প অনুমোদনের সময় ঢাকার চারপাশে এলিভেটেডওয়ে নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

গতকাল পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণসহ আট প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫৮৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫ হাজার ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং বৈদেশি ঋণ ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বৈঠকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনার সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যেন বংশানুক্রমে কাজ (চাকরি) পায়। এ ছাড়া ঢাকার চারপাশের নদী তীরে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, কারণ ঢাকার চারপাশে জমি কম। সদরঘাট ও ওয়াইজঘাটের মতো অবস্থা যাতে না হয় সেই জন্য ঢাকার চারপাশে এলিভেটেডওয়ে করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ‘পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আটটি বিভাগের ৫৯টি জেলার ৬৬টি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ৬৬টি পৌরসভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ১৫ দশমিক ৬১ একর ভূমিতে ৩ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। ফ্ল্যাটের ভাড়া প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাড়া নেওয়া যাবে না। ওরা গরিব মানুষ, তাদের জন্য আমাদের সহায়তা দেওয়া দরকার। বাসা সংরক্ষণ করার জন্য যেটুকু দরকার, এর বেশি যেন নেওয়া না হয়। সেই সঙ্গে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যেন বংশানুক্রমে চাকরি পায় সেই ব্যবস্থা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ঢাকার চারপাশে সার্কুলার ওয়ে করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, নদী যাতে দূষণ না হয় সে বিষয়ে সব সিটি করপোরেশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

গতকালের একনেক সভায় ‘পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ’; ‘হিলি, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা এলসি স্টেশনের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ’; ‘বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত)’; ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, রংপুর স্থাপন’; ‘অ্যাক্সিলেরেটিং অ্যান্ড স্ট্রেংথেনিং স্কিলস ফর ইকোনমিক ট্রান্সফরমেশন (অ্যাসেট)’; ‘আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্র, মাদারীপুরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বৃহত্তর বরিশাল, ফরিদপুর অঞ্চলে ডাল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’; ‘সিরাজগঞ্জ জেলায় যমুনা নদী হতে পুনরুদ্ধারকৃত ভূমির উন্নয়ন এবং প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল রক্ষা (১ম সংশোধিত)’ এবং ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নম্বর ১৫ পুনর্বাসন’ প্রকল্পগুলো অনুমোদন করা হয়। এদিকে ঢাকার চারপাশ সাজানো প্রকল্পের ব্যয় ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের তীরভূমির অবৈধ দখল রোধ এবং দখলমুক্ত অংশের সৌন্দর্য বর্ধন; নদীর উভয় তীরের পরিবেশগত উন্নয়ন; নদীর দখলমুক্ত তীরভূমিতে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনায় ঢাকার চারপাশে এলিভেটেডওয়ে নির্মাণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।