বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঝুলে আছে সাড়ে ৪ লাখ গ্রেফতারি পরোয়ানা

বিশেষ অভিযান চলছে অবৈধ অস্ত্র মাদক চোরাই ও নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধেও

আলাউদ্দিন আরিফ

ঝুলে আছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রেফতারি পরোয়ানা। যার মধ্যে ৮৮ হাজারের বেশি রয়েছে জিআর (থানায় করা) এবং সিআর (আদালতে দায়ের করা) মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এসব পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করার লক্ষ্যে সাত দিনের বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকদ্রব্য, চোরাই ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল আটক ও উদ্ধারের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডাকাতির মামলায় ১৯৯৮ সালে যশোরের একটি আদালত এক বছরের সাজা দেয় বরিশালের বাবুগঞ্জের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদারকে। দীর্ঘ ২১ বছর গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলে থাকার পর ৬ জুন বরিশালের বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ পরোয়ানাটি কার্যকর করতে সক্ষম হয়। পুলিশ জানায়, ১৯৯৮ সালে যশোরের অভয়নগর থানায় করা একটি মামলায় জাহাঙ্গীরের এক বছরের সাজা হওয়ার পর ঢাকায় আত্মগোপনে থাকে। দীর্ঘ ২১ বছর পর্যন্ত পুলিশ এই পরোয়ানা কার্যকর করতে পারেনি। এভাবে অসংখ্য পরোয়ানা ঝুলে আছে। পুলিশের সর্বশেষ হিসাব বলছে, (৩০ জুন পর্যন্ত) মোট ৪ লাখ ৭০ হাজার ২৩৩টি পরোয়ানা তামিলের অপেক্ষায় আছে। যার মধ্যে ৮৮ হাজার ৫৭০ জন জিআর ও সিআর মামলায় আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এসব পরোয়ানা তামিলে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি দেশজুড়ে সাত দিনের বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (অপারেশন) মোহাম্মদ এহ্সান সাত্তার স্বাক্ষরিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সাত দিন অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, চোরাই ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল আটক/উদ্ধার, নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেফতার ও গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের নিমিত্তে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ একই বিষয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট ছকে পুঠিশ সদর দফতরে ফ্যাক্সযোগে অথবা ই-মেইল করে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম দিনে (১ জানুয়ারি) গ্রেফতারি পরোয়ানা (জিআর) ছিল ২ লাখ ৩৩ হাজার ২০৯টি। একই দিন সিআর বা আদালতে করা মামলায় পরোয়ানা ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ২টি। বছরের প্রথম দিনে সাজা পরোয়ানা (জিআর) ছিল ৩৫ হাজার ২৭৮টি। আর সিআর মামলায় সাজা পরোয়ানা ছিল ৫০ হাজার ২৮১টি। অর্থাৎ চার ধরন মিলিয়ে বছরের শুরুতে মোট পরোয়ানা ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭০টি। পুলিশ সদর দফতর আরও জানায়, চলতি বছর ১ এপ্রিল জিআর পরোয়ানা ছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭৪টি। আদালত থেকে গৃহীত হয় ২৯ হাজার ৭৬৫টি। ৩০ জুন পর্যন্ত তিন মাসে মোট নিষ্পত্তি হয়েছে ৪১ হাজার ৯১৮টি। ৩০ জুন মুলতবি পরোয়ানা ছিল ২ লাখ ২৭ হাজার ৫২১টি। একই সময়ে সিআর পরোয়ানা ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৪২টি। জিআর মামলায় সাজা পরোয়ানা ছিল ৩৫ হাজার ৪৬২টি এবং সিআর মামলায় সাজা পরোয়ানা ছিল ৫৩ হাজার ১০৮টি। পুলিশ সদর দফতর গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল ও নিষ্পত্তির জন্য যে ইউনিট বেশি সাফল্য অর্জন করবে তাদের আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া মামলা নিষ্পত্তি ও পরোয়ানা তামিল এবং মাদক উদ্ধারে উত্তম চর্চা থাকলে সেটা পুলিশ সদর দফতরে লিখিতভাবে অবহিত করতে ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এত বিশাল সংখ্যক গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলে থাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের আইজি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘পরোয়ানা তামিলে পুলিশ সব সময়ই সচেষ্ট। বিভিন্ন ইউনিটকে এ বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে পরোয়ানা তামিল করার জন্য বলা হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো আদালতের সঙ্গে পুলিশের তথ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকে। কারণ আদালত থেকে আসামি জামিন পেলে বা খালাস পেলে সেটার তথ্য নানা কারণে সমন্বয়ে বিলম্ব হয়। এক্ষেত্রে পরোয়ানা হয়তো কিছু বেশি দেখাচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা আলাপকালে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি চোরাই ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল ব্যবহার হয়। এসব মোটরসাইকেল ব্যবহার করে খুন, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। তাই দেশজুড়ে চোরাই ও নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেলের আটক ও উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।’ বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা জানান, দেশে ২০ লাখের বেশি মোটরসাইকেল চলে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রিকৃত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ১২ লাখ ৫১ হাজার ৮০৫টি। মোটরসাইকেল চালানোর জন্য ইস্যুকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যা ৫ লাখ ২৪ হাজার ৮৮৫টি। গত পাঁচ বছরে মোট ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮৭৫টি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। বিআরটিএ নিবন্ধনবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুলিশ এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারলে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার সুবিধা ছাড়াও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

সর্বশেষ খবর