দেশের অন্যতম ব্যস্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক। এতে প্রায়ই যাত্রীবাহী বাস কিংবা পণ্য পরিবহনকারী যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটছে দুর্ঘটনা। গতকাল চাঁদপুরের কড়ইয়া বিশ্বরোড এলাকায় বিআরটিসি বাসের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
শুধু এই মহাসড়ক নয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ মহাসড়কে অবাধে যাতায়াত করছে তিন চাকার ধীরগতির এসব যানবাহন। ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা টাঙ্গাইল, ঢাকা-কুমিল্লা সব সড়কের অরাজকতার চিত্র প্রায় একই। অধিকাংশ মহাসড়কে সার্ভিস রোড না থাকায় স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতে মানুষ বেছে নিচ্ছে এসব পরিবহনকে। অনেক জায়গায় সার্ভিস রোড থাকলেও আইনের কড়াকড়ি না থাকায় নিশ্চিন্তে মহাসড়কে চলছে এসব যানবাহন। ফলে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ, ঘটছে প্রাণহানি। গত ১৬ জুলাই সোনারগাঁয়ের তালতলা এলাকায় পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। গত ২৪ জুন নায়বাড়ি এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গত বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ হাজার ৪৮০টি। এর মধ্যে ১ হাজার ২২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে ধীরগতির যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষে। ৩১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে ইজিবাইক, অটোচার্জার, নসিমন, করিমনের কারণে। রিকশা ভ্যানের সংঘর্ষে ঘটেছে ১০১টি দুর্ঘটনা। সাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬৮টি, লেগুনার সঙ্গে ১১টি, ট্রাক্টর দিয়ে ১০৮টি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা-বেবিট্যাক্সির সংঘর্ষে ৩৯৫টি ও অন্যান্য তিন চাকার যানবাহনে ২২৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে সড়কে। ২০১৯ সালে দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৬৪৩টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৫৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে ধীরগতির যানবাহনের কারণে। ২৩৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে ইজিবাইক, অটোচার্জার, নসিমন, করিমনের কারণে। রিকশা ভ্যানের সংঘর্ষে ঘটেছে ১৫২টি দুর্ঘটনা। সাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০৮টি, লেগুনার সঙ্গে ২৬টি, ট্রাক্টর দিয়ে ১৩৩টি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা-বেবিট্যাক্সির সংঘর্ষে ৭৭৩টি ও অন্যান্য তিন চাকার যানবাহনে ৩২৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে সড়কে। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে মহাসড়কের ব্যবহার সম্পর্কিত ৪৮ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে- ‘জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক সাধারণত দ্রুতগতির মোটরযান চলাচলে ব্যবহৃত হবে। এ ক্ষেত্রে জেলা মহাসড়ক থেকে আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে জাতীয় মহাসড়কে যাওয়ার ক্ষেত্রে দ্রুতগতির মোটরযান অগ্রাধিকার পাবে। এ আইন অমান্যকারী ব্যক্তি অনধিক এক মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে।
সারা দেশে অবৈধভাবে চলা বিদ্যুৎচালিত যানবাহন, বিশেষ করে ইজিবাইক, ভটভটি, নসিমনকে শৃঙ্খলায় আনতে প্রায় দুই বছর আগে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। গত সেপ্টেম্বরে বিআরটিএ বুয়েটের সঙ্গে আলোচনা করে এই খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
দেশের মহাসড়কগুলোর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে সরেজমিন তথ্য তুলে ধরেছেন আমাদের প্রতিনিধিরা। সোনারগাঁ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে ২৮ কিলোমিটার অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানবাহন। মহাসড়কে এসব গাড়ি বেপরোয়াভাবে চলাচলের ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ছয় মাসে দুই শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের সঙ্গে। থানা ও হাইওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১১ জন। আহত প্রায় অর্ধশতাধিক। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ করিম খাঁন বলেন, ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৮ কিলোমিটার রাস্তায় থ্রি-হুইলার রয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি। জনবল স্বল্পতার কারণে অনেক সময় এসব নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত অক্টোবর মাসে ৩৯৩টি তিন চাকার অবৈধ যানবাহন আটক করা হয়েছে।
কুমিল্লা প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মোল্লা জানান, কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, চৌদ্দগ্রাম বাজার ও দাউদকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন ক্রসিং দিয়ে চলাচল করছে তিন চাকার যান। এসব যানবাহনের কয়েকজন চালক বলেন, মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছা যায়। কিছু জায়গায় সার্ভিস রোড না থাকায় মহাসড়কে চলা ছাড়া উপায় থাকছে না তাদের। এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ বলেন, এসব নিষিদ্ধ যানবাহনের বিরুদ্ধে সারা বছরই আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে। ১০ হাজারের বেশি তিন চাকার যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। চলতি বছর আড়াই কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছি। এ ছাড়া মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ সচেতনতামূলক সভা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে যাচ্ছে। গাজীপুর প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, টঙ্গী-কালীগঞ্জ, নবীনগর-চন্দ্রা, বিশ্ব ইজতেমা মহাসড়কে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ তিন চাকার যানবাহন। অবৈধ এসব যান মহাসড়কে চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সাইফউদ্দিন জানান, এ জেলায় জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা মহাসড়কসহ মোট ৪০১ দশমিক ৩৩৪ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক হচ্ছে ৯৪ দশমিক ৫৭৩ কিলোমিটার। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, ৬২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার মহাসড়ক এলাকার জন্য জনবল রয়েছে ২৯৫ জন। মহাসড়কে প্রবেশের ১১৫টি পয়েন্ট রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের জনবল কম থাকায় ৮০টি ডিউটি পোস্টে ফোর্স দেওয়া হয়। গত বছরের জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার ৪৪৩টি অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা আটক করা হয়েছে। গাজীপুর জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ইনচার্জ এএসপি ফারহানা আফরোজ জেমি জানান, জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের আওতায় লোকবল কম থাকায় সব পয়েন্টে সব সময় পুলিশ মোতায়েন সম্ভব হয় না। ওই ফাঁকে অবৈধ অটোরিকশা বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মহাসড়কে চলে আসে। সালনা হাইওয়ে থানার ওসি মীর গোলাম ফারুক জানান, গত মাসে এ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. আবু নাঈম জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইকসহ এ ধরনের যানের রেজিস্ট্রেশন আমাদের আওতাভুক্ত নয়। মহাসড়কে বা ব্যস্ততম সড়কে এগুলো পেলে আইনের আওতায় আনা হয়। বিআরটিএর পক্ষ থেকে অবৈধ যানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত আছে। টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মো. নাসির উদ্দিন জানান, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে তিন চাকার যানবাহন। সার্ভিস লেন না থাকায় মহাসড়কে দিয়ে এসব যানবাহনে যাতায়াত করেন স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা। গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কের এক পাশে সার্ভিস লেনের কাজ শেষ হলেও অপর পাশে এখনো কাজ চলছে। সে জন্য অনেক সময় এখনো কোথাও কোথাও মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল করছে। কুমুদিনী সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক প্রাণেষ কুমার জানান, এ ধরনের তিন চাকার যানবাহন মহাসড়কে চলাচল অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। না হলে অকালে আরও অনেক মানুষের প্রাণ যাবে। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো. ইয়াসিন আরাফাত জানান, এলেঙ্গা থেকে টাঙ্গাইল শহর পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশেই সার্ভিস থানায় তিন চাকার যানবাহনগুলো এখন আর মহাসড়কে ঢুকতে পারে না। ময়মনসিংহ প্রতিনিধি সৈয়দ নোমান জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র। তিন চাকার এ যানের সংখ্যা কমপক্ষে ৩০০। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে নিরাপদেই চলছে ময়মনসিংহ নগরী থেকে ভালুকা উপজেলা পর্যন্ত। তবে মাহিন্দ্র চলে ত্রিশাল উপজেলা পর্যন্ত। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ প্রশাসন ও শ্রমিক সংগঠনকে টাকা দিলেই ঘুরে চাকা। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলা পুলিশ ও শ্রমিক সংগঠন। জেলা মোটর মালিক সমিতির সম্পাদক সোমনাথ সাহা বলেন, সিএনজি মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠন একটি সার্ভিস চার্জ নিয়ে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে এসব যানবাহন মহাসড়কে চালাচ্ছে। ময়মনসিংহ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সানাউল হক ছানু বলেন, চরপাড়া মোড়ে লিয়াকতরা টার্মিনাল করে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে। মূলত সিএনজি নিয়ন্ত্রণ করা সংগঠনগুলোই এই কাজে জড়িত। এদিকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ময়মনসিংহ জেলার সিএনজি-মাহিন্দ্র মালিক সমিতির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম শাহীন জানান, আমাদের সঙ্গে চূড়ান্ত বেয়াদবি করে জাতীয় মহাসড়কে এসব যান চলছে। চাঁদা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় ‘ছোটকা’ পুলিশ চাঁদা নিতে পারে। ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন জানান, আমরা এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দিচ্ছি। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগটি সত্য নয়।
সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদা জানান, সাভার ও আশুলিয়ায় প্রতিদিন ৪৫-৫০ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। এর পাশাপাশি ১০ সিটের অটোরিকশাগুলো মহাসড়কের মধ্যে চলাচল করে। আশুলিয়া থানা রিকশা-ভ্যান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি সেলিম সরকার বলেন, ইউনিয়নে নিবন্ধনকৃত রিকশার সংখ্যা ২৫ হাজার আর চলাচল করে প্রায় ৫০ হাজার। অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে একাধিকবার তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয় না। সাভার ট্রাফিক পুলিশের অ্যাডমিন আব্দুস সালাম বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় অনেকে। আমরা এই রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি মো. কাবুল খান জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জে বেপরোয়াভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ বিভিন্ন তিন চাকার যানবাহন চলাচল করছে। মানিকগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহনের সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় প্রায় ৭ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। জেলার সাত থানায় ১ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। গোলড়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, টেম্পু চলাচল করছে না। তবে আঞ্চলিক সড়ক থেকে অনেক সময় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা মহাসড়কে চলে আসে।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        