বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

খালেদা জিয়াকে যথেষ্ট উদারতা দেখানো হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

ফের ফোর্বসের মূল্যায়নে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রীকে বাড়িতে থাকতে এবং দেশের সেরা হাসপাতালে অবাধে চিকিৎসা নিতে দিয়েছি। আমরা যথেষ্ট উদারতা দেখিয়েছি। তিনি বলেন, আজ এত চেঁচামেচি করছেন, কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে কী করেছিলেন তা-ও স্মরণ রাখবেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের ভিডিওবার্তাও প্রচার করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের মানুষ একটা অদ্ভুত চরিত্রের। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কথা বলবে আবার দুর্নীতিবাজের জন্য কান্নাকাটিও করবে। তাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসাও করতে হবে, যারা দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত। এ দ্বৈত মানসিকতা কেন? তিনি বলেন, বিএনপি এত দিন পর একটা সুযোগ পেয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এই দাবিতে তারা আন্দোলন করছে। খুব ভালো, তারা আন্দোলন করুক। আমার যতটুকু করার ছিল, সেটা কিন্তু করেছি। বিএনপি নেত্রীকে কারাগার থেকে বাড়িতে ফেরার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার বড় বোন আর ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী আমার কাছে এসেছিল। আমাদের কাছে যখন আসল, খুব স্বাভাবিকভাবেই, রেহানাও আমার সঙ্গে উপস্থিত ছিল। একটা মানবিক দিক থেকে আমি তাকে তার বাড়িতে থাকার, আমার এক্সিকিউটিভ পাওয়ারে যতটুকু আমি করতে পারি অর্থাৎ নির্বাহী যে ক্ষমতা আছে, আমি তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে তার বাসায় থাকার অনুমতি এবং চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছি। আজকে বাংলাদেশে সব থেকে দামি যে হাসপাতাল, যে হাসপাতাল সব থেকে ব্যয়বহুল, সেখানেই কিন্তু তার চিকিৎসা হচ্ছে। তার ছেলের বউ তো ডাক্তার, তারেকের বউ তো ডাক্তার, শুনেছি সে নাকি অনলাইনে শাশুড়িকে দেখে। কই, ছেলে, ছেলের বউ তো কোনো দিন দেখতে আসল না। অবশ্য কোকোর বউ এসেছে, তারা তো আসেনি। বিএনপি নেত্রীর জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে বড় কথা যে ১৫ আগস্ট, খালেদা জিয়ার জন্মদিন কি ১৫ আগস্ট? জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল, তার যে ডকুমেন্ট আছে এবং সেনাবাহিনীতে কেউ যোগদান করলে তার যদি কিছু হয়, তার সম্পদের অধিকারী কে হবে, সেটা হচ্ছে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। সেই ডকুমেন্টে কিন্তু খালেদা জিয়ার জন্মতারিখ মোটেই ১৫ আগস্ট নয়। প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার যে পাসপোর্ট সেখানেও তো ১৫ আগস্ট না। তার মায়ের যে বিবৃতি তাতেও তো ১৫ আগস্ট না। তার তো অনেক জন্মতারিখ। সামরিক বাহিনীর যে ডকুমেন্ট সেখানে তার জন্মবছর হচ্ছে ১৯৪৪। ১৯৪৪ সাল দেখানো আছে, যখন তার বিয়ে হয়। তাহলে কি তার ১৯৪৪ সালে জন্ম হয়েছিল? না, আমি জানি না। তাহলে বিয়ের জন্য সেটা বাড়ানো হয়েছিল কি না কে জানে? অবশ্য সেটা এখন ৪৫, ৪৫ থেকে ৪৬-এ এসেছে।

১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই দিন আমরা যারা বাবা, মা, ভাই হারিয়েছি, আমাদের মনে আঘাত করা। আমাদের কষ্ট দেওয়া। এটাই তো। এই কষ্টটা দেওয়ার জন্য খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জন্মদিবস পালন করে। ২০১৫ সালে বিএনপি নেত্রীর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সহানুভূতি জানাতে তাঁর বাসায় যাওয়ার বিষয়টিও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যখনই আমার গাড়িটা বাড়ির সামনে থেমেছে, এসএসএফের অফিসার যে ছিল, সে ভিতরে ছিল। উনি জাস্ট বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে আমাকে নিতে। তারা সঙ্গে সঙ্গে দরজাটা বন্ধ করে তালা দিয়ে দিয়েছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে আর ঢুকতে পারিনি। আমি গেছি, একটা মা সন্তানহারা তাকে সহানুভূতি দেখাতে। আর সেখানে এইভাবে অপমান করে ফেরত দিয়েছে আমাকে। বিএনপি নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করি, তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলে, সহযোগিতা চায়, খালেদা জিয়া কী আচরণ করেছে? ২১ আগস্ট যে গ্রেনেড হামলা, তার আগে খালেদা জিয়ার কী বক্তব্য ছিল? প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে যে অকথ্য অত্যাচার করেছে। বাহাউদ্দিন নাছিম থেকে শুরু করে মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবের হোসেন চৌধুরী, শেখ সেলিমসহ বহু নেতাকে গ্রেফতার করে তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। নাসিমকে তো এমন অত্যাচার করেছিল যে, তাকে মৃত মনে করে তাড়াতাড়ি কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। সে বেঁচে গেছে। দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে, আবার সে অত্যাচারের ভিডিও নিয়ে খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া দেখে তারা উৎফুল্ল হয়েছে। এ ধরনের হিংস্র একটা চরিত্র আমরা দেখেছি। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে। বাংলাদেশটাকে সমৃদ্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তারুণ্যের শক্তিটাকেই গুরুত্ব দিয়েছে।

উসকানির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে : এর আগে সকালে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ প্রদান এবং মহিলা কর্মজীবী হোস্টেলসহ আটটি নবনির্মিত স্থাপনা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কলকারখানায় অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে বাইরে থেকে অনেকে উসকানি দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে শ্রমিকদের সতর্ক থাকতে হবে। এখানে মালিক-শ্রমিক সম্পর্কটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিক-মালিক সৌহার্দ্যটা যেন থাকে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান থেকে ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ প্রদান করা হয়। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক-প্রতিনিধিদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুরস্কার তুলে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।

ফের ফোর্বসের মূল্যায়নে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় শেখ হাসিনা : যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী ফোর্বস-এর মূল্যায়নে ২০২১ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় এবারও রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এ তালিকা প্রকাশ করেছে সাময়িকীটি। এতে ৪৩তম অবস্থানে রয়েছেন শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের তালিকাতেও ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা, যিনি এবার চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ হাসিনাকে এই তালিকায় রেখে ফোর্বস বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর সংগ্রামের কথা বলেছে। খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে তাঁর সরকারের গুরুত্বের বিষয়টিও উল্লেখ করেছে। এবারেরটি ফোর্বসের অষ্টাদশ বার্ষিক তালিকা; যাতে বিশ্বে বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ১০০ প্রভাবশালী নারীর নাম উঠে এসেছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছেন লেখক ও অ্যামাজনের জেফ বেজোসের সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কট। লোকহিতৈষী কাজে নিবেদিত এ নারী বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ ধনী।

সর্বশেষ খবর