বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

উত্তরার বিপজ্জনক ফুটওভার ব্রিজ

সড়কের মাঝখানে ওঠানামা - সার্ভিস রোড পার হয়ে উঠতে হয় - ঝুঁকি নিয়ে চলছেন পথচারীরা

হাসান ইমন

উত্তরার বিপজ্জনক ফুটওভার ব্রিজ

রাজধানীর উত্তরায় ফুটওভার ব্রিজ থেকে মানুষ উঠছে নামছে মাঝ রাস্তায় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর উত্তরার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জসীমউদ্দীনে ফুটওভার ব্রিজ এখন গলার কাঁটা। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে রাস্তা প্রশস্ত করায় সার্ভিস রুটগুলো ভেঙে মূল সড়কে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগের মূল সড়কের পাশের ফুটওভার ব্রিজগুলো এখন সড়কের মাঝখানে পড়ে গেছে। ফলে পথচারীদের রাস্তা পার হয়ে ফুটওভার ব্রিজ পর্যন্ত আসতে ঝুঁকি নিতে হয়। ব্যস্ততম এ মহাসড়ক পারাপার হতে গিয়ে প্রতিদিনই কেউ না কেউ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। একই সঙ্গে পথচারীদের চলাচলের কারণে যানজটও তৈরি হচ্ছে বলে তারা জানান।

সরেজমিন দেখা যায়, উত্তরা জসীমউদ্দীন মোড়ের সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ফুটওভার ব্রিজটির অবস্থান এখন সড়কের মাঝখানে।

 এক পাশে ব্র্যাক ব্যাংক, অন্য পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালসহ সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শপিং মল রয়েছে। মূলত উত্তরা সেক্টর ৩ ও ৪-এর মধ্যে সংযোগ সড়ক এ ফুটওভার ব্রিজটি। এ ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। বিশেষ করে এ ব্রিজ দিয়ে স্কুল-কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। শিক্ষার্থী ও পথচারীদের অভিযোগ, ফুটওভার ব্রিজে উঠতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা। কারণ হিসেবে বলেন, ফুটওভার ব্রিজের দুই পাশে আলাদা সার্ভিস লেন ছিল। এ সড়ক দুটি দিয়ে মূলত সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশা, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস চলাচল করত। কিন্তু বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় সার্ভিস লেনটি ভেঙে মূল সড়কের সঙ্গে সংযোগ করা হয়েছে। এখন এ সড়ক দিয়ে দূরপাল্লার ও সিটির বাস চলাচল করছে। এতে সড়কটি পার হয়ে ফুটওভার ব্রিজে উঠতে খুব ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয়। প্রায়ই এখানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ফুটওভার ব্রিজটি। একই সঙ্গে মানুষের চলাচলের কারণে গাড়ির গতি কমাতে হচ্ছে বলে জানান পরিবহনের চালকরা। তারা বলেন, ফুটওভার ব্রিজে উঠতে মানুষ সিরিয়ালি রাস্তা পার হন। এজন্য এখানে গাড়ির গতি কমাতে হয়। তবে গতি কমানোর ফলে পেছনে কিছুটা যানজট তৈরি হয়।

পথচারী বিশ্বজিৎ বলেন, ‘এখান দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হই। কিছুদিন আগে আমার চোখের সামনে এক ভাই রাস্তায় পার হওয়ার সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।’

পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রুবেল মিয়া বলেন, ‘আমার বাসা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর রোডে। কয়েক দিন ধরে আমি অসুস্থ। তাই হাসপাতালে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ পার হতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। একে তো অসুস্থ, এর ওপর হুটহাট করে গাড়ি আসছে। কোনোরকমে দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে ফুটওভার ব্রিজে উঠলাম। ব্রিজ থেকে নেমে আরেক দৌড়ে রাস্তা পার হলাম।’

তিনি বলেন, ‘এত ঝুঁকি নিয়ে কি চলাচল করা যায়! আমাদের এ ভোগান্তি কি দেখার কেউ নেই?’

আরএকে শপিং মলে চাকরি করেন মোহাম্মদ ইয়াসিন। তার বাসা ৪ নম্বর সেক্টরে। তিনি বলেন, ‘চাকরির স্বার্থে প্রতিদিন আমাকে এ রাস্তার পারাপার হতে হয়। অনেক ভয় লাগে। তাই এখানে আগের মতো একটা ফুটওভার ব্রিজ হলে অনেক ভালো হয়।’

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ ফুটওভার ব্রিজটি আমাদের তত্ত্বাবধানে আছে। উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ফুটওভার ব্রিজ বিআরটি প্রকল্পের সঙ্গেই বাস্তবায়ন হবে। এ ফুটওভার ব্রিজটি শিগগিরই ভেঙে ফেলা হবে। এটি আর এখানে আমরা নির্মাণ করব না। বিআরটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কিছু ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে এসব এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর