রাত পোহালেই আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলন হবে এক দিনের। এ সম্মেলনে কী চমক থাকছে তা নিয়ে দলীয় অসংখ্য নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর ব্যাপক কৌতূহল।
কাল সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশ থেকে সাড়ে ৮ হাজার কাউন্সিলর এবং ২৫ হাজার ডেলিগেট এতে অংশ নেবেন। বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এ অধিবেশনে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নির্ধারণ হবে।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দলের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৯টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে দলে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। ফলে সভানেত্রী পদে কাউকে প্রার্থী হতেও দেখা যায়নি। এবারও কাউন্সিলরদের ভোটে দশমবারের মতো সভানেত্রী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রতিবার কাউন্সিলেই নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু দলের কাউন্সিলর এবং নেতা-কর্মীদের তীব্র আপত্তি এবং আবেগের কাছে শেষ পর্যন্ত তিনি পরাস্ত হন। এবারও এরকম ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জাতির পিতাকে হত্যার পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তিনি দেশে ফিরে স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী দলটিকে নানা ধারায় বিভক্তি থেকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তাঁর নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদসহ মোট চারবার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। আর দলে তাঁর রানিংমেট হিসেবে টানা দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে। নতুন কেউ সাধারণ সম্পাদক হবেন, নাকি ওবায়দুল কাদেরই এ পদে আরেক মেয়াদে থেকে হ্যাটট্রিক করবেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নের বিষয়টি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনিই রানিংমেট বেছে নেবেন।
২০১৬ সালের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। এরপর থেকে তিনি দলের এ পদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এবারের জাতীয় সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক পদে তাঁর নামটি জোর আলোচনায় রয়েছে। তবে দলটির ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশে টানা তিন মেয়াদে কেউ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেননি। এর আগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে শেখ হাসিনা সভানেত্রী থাকাকালে টানা দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। অবশ্য প্রয়াত জিল্লুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ওবায়দুল কাদের এবারও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে নতুন নজির সৃষ্টি হবে, যা আওয়ামী লীগের চমক। কারণ এ পদে হ্যাটট্রিক করবেন। আবার সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কাউকে বেছে নিলে সেটাও চমক হিসেবে মনে করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে সারা দেশের নেতা-কর্মীর প্রত্যাশা, বঙ্গবন্ধু পরিবার থেকে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান সিদ্দিক ববি রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনেই তারা নেতৃত্বে আসুন। গত শনিবার অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কমিটির সভায় বেশ কয়েকজন নেতা প্রসঙ্গটি দলীয় সভানেত্রীর নজরে আনেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সবাই বড় হয়েছে। রাজনীতিতে আসবে কি আসবে না, সেটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তারা যদি রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায়, হতে পারে। এ বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। সবকিছু মিলে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে কী চমক আসছে তা দেখতে আগামীকাল বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হলে সেখানে বড় ধরনের রদবদল না হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন মুখ আসছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে যে কমিটি হবে, সেখানে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। নির্বাচনের পর আমরা পরবর্তী সম্মেলন আগামও করতে পারি, সেরকমও চিন্তাভাবনা আছে। তখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। আপাতত বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের ব্যাপারে ভাবছি না।
বর্তমান কমিটির বিতর্কিতরা বাদ পড়বে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কেউ পারফেক্ট মানুষ না, ভুলত্রুটি নিয়েই মানুষ। কাজেই পূর্ণতা খুঁজতে গেলে অনেক কিছুই চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিতর্কিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা আছে।
তৃতীয় মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সভানেত্রী আমাদের অপরিহার্য; যিনি সভানেত্রী আছেন, তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। শেখ হাসিনাকে সমর্থন করবেন না, এমন একজন কাউন্সিলরকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কাজেই এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। সাধারণ সম্পাদক পদে অনেকেরই ইচ্ছা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। আমার জানা মতে, ১০ জন অন্তত প্রার্থী আছেন, যারা সাধারণ সম্পাদক হতে চান। কাজেই কে হবেন সেটা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিল অধিবেশনে সেখানে কাউন্সিলরদের মতামতে এর প্রতিফলন ঘটবে। আমি এ মুহূর্তে কোনো প্রেডিকশনে যেতে পারি না। সময় এখনো ম্যাচিউর হয়নি।
এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, কেন্দ্রীয় সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছার, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম, আনোয়ার হোসেন, সানজিদা খানম, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সহসভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ আগে থেকেই বলে আসছে এবারের সম্মেলন হবে সাদামাটা। সে কারণে অতীতের মতো নেই আলোর ঝলকানি। নেই পুরো রাজধানীকে রঙিন করে সাজানো। এসব না থাকলেও নেতা-কর্মীদের উৎসাহ-আগ্রহের কমতি নেই। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, মঞ্চে নৌকা ও পদ্মা সেতু দুটির আদলই রাখা হয়েছে। মঞ্চের পাশে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সম্মেলনের ব্যানারে থাকছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ছবি। এ ছাড়া জাতীয় চার নেতার ছবি থাকবে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক ও মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশের ছবিও দেখা গেছে।
সারা দেশ থেকে আগত সাড়ে ৮ হাজার কাউন্সিলর আর ২৫ হাজার ডেলিগেটকে উপহার দেওয়া হবে। উপহারে থাকবে ১৩ জিনিস। এরই মধ্যে এসব জিনিসপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। উপহার সামগ্রীর মধ্যে থাকছে দলীয় লোগোযুক্ত নোটপ্যাড, কলম, চকলেট, বিস্কুট, পানি, টিস্যু, ফাইল ফোল্ডার, গত ১৪ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি তুলে ধরে প্রকাশনা, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের রিপোর্ট, দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার তোলা শোক প্রস্তাব ও অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়কের বক্তব্য।
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        