রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

এখনো বিচারের আশায় সাংবাদিক সাগরের মা

ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ বছর আগে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের সাবেক বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সাবেক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। বিচার দেখে যাওয়ার আশায় দিন গুনতে গুনতে গত বছর জানুয়ারিতে রুনির মা নূরন নাহার মীর্জা মারা গেছেন। এখন বেঁচে আছেন কেবল সাগরের মা সালেহা মনির। ছেলের নির্মম মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি এই মা। সালেহা মনির বলেন, ‘আমি তো মা। আমার মনের ভিতর অনেক কথা বলে। আদৌ খুনি বের হবে কি না জানি না। তবে আমি আশা ছাড়ব না। যতক্ষণ কবরে না যাব, ততক্ষণ বিচার চাইতে থাকব।’

মঙ্গলবার নবাবপুরের বাসায় গণমাধ্যমের সঙ্গে এসব কথা বলেন সাগরের মা। তিনি বলেন, ‘মা হয়ে আজও আমি সাগরের কবরের কাছে যাইনি। সাগর খুনের পর আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যত দিন সাগর-রুনির খুনি বের হবে না, তত দিন আমি সাগরের কবর জিয়ারত করতে যাব না। তবে আমি রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে সব মৃত ব্যক্তির আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। সেখানে আমার সাগরও থাকে।’

র‌্যাবের উদ্দেশে সাগরের মা বলেন, ‘পত্রপত্রিকার খবর মারফত জানতে পারতেছি, খুনের ঘটনাস্থল থেকে দুজন অজ্ঞাতনামা পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে। সেই দুই ব্যক্তি কে? কেন এটা র?্যাব বের করতে পারে না? আমি খুনিকে দেখতে চাই।’

সালেহা মনির বলেন, ‘সাগর-রুনি খুন হওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, মেঘের সব দায়িত্ব তিনি নেবেন। সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুদান হিসেবে সাগরের জন্য ২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। আমি সেই টাকা নিয়েছিলাম। এরপর আর কোনো যোগাযোগ নেই।’ ছেলের মৃত্যুর পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকারের কথাগুলো সালেহা মনিরের কানে বাজে। ঘুমের ঘোরেও শুনতে পান সেই ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনি বের করার’ আশ্বাসের কথা। আর আইজিপির তদন্তের ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতির’ কথা আজ তার কাছে নির্মম পরিহাস।

 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নৃশংসভাবে খুন হন। সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে এ মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাই কোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র?্যাবকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন। তখন থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র?্যাব। র?্যাবের পক্ষ থেকে ৪ জানুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু র?্যাবের পক্ষ থেকে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। আদালত আগামী ৫ মার্চ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন। আদালতের নথিপত্রের তথ্য বলছে, এ নিয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত ৯৫ বার সময় দিলেন।

সর্বশেষ খবর