মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফুলপরীকে নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছে ছাত্রলীগ

ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদন ও শাখা ছাত্রলীগের তদন্ত প্রতিবেদনে নবীন ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর ওই দিনই প্রতিবেদন হাই কোর্টে পাঠিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে আজ হাই কোর্টে শুনানির দিন ধার্য আছে।

এদিকে নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের আগামী ১ মার্চ দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বেলা ৪টার দিকে হল প্রশাসনের জরুরি সভা থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। বহিষ্কৃত ছাত্রীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের একই সেশনের ইসরাত জাহান মীম এবং একই সেশনের ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মী।

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম লিখিত বক্তব্যে বলেন, তাদের সবার বিরুদ্ধে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল সংযুক্তি বাতিলের বিষয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর সুপারিশ প্রেরণ ও হালিমা আক্তার ঊর্মীর বিবৃতিতে তার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রক্টর বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট কক্ষে আলোচনায় বসেন হল তদন্ত কমিটির সদস্য ও হল কর্মকর্তারা। আলোচনা সভায় সম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত জানান তারা। জরুরি সভায় হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে এ সময় হল কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. আহসানুল হক, সদস্য মৌমিতা আকতার, নুসরাত জাহান ও অন্যান্য হাউস টিউটর উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলে রাতভর নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী ছাত্রী ১৪ ফেব্রুয়ারি হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হল কর্তৃপক্ষ। এতে ড. আহসানুল হককে আহ্বায়ক করে, আবদুর রাজ্জাক মৌমিতা আকতার, নুসরাত জাহানকে সদস্য করা হয়। কমিটি তদন্ত করে গত রবিবার রাতে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। গতকালই তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয় হল প্রশাসন। হল থেকে বহিষ্কারের আদেশের খবরে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘অভিযুক্তরা তাদের প্রাপ্য ফল পাওয়া শুরু করেছে। আরও পাবে। ওই দিন অন্তরা আপু আমাকে ডেকে নিয়ে তাদের হাতে তুলে দিয়ে এ নির্যাতন করিয়েছে। অভিযুক্তরা বলেছেন অন্তরা আপুর নির্দেশে তোকে এমন করা হয়েছে, না হলে তোকে আমরা চিনতামই না।’ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামছুল আলম বলেন, ‘তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন পর্যালোচনায় ভুক্তভোগীর আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য হল প্রশাসন আবাসিকতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বিবস্ত্র ভিডিও ধারণের ভিডিও পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত হালিমা খাতুন তার বয়ানে মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে। ফোনটি পাওয়া গেলে ভিডিও পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছি।’

নির্যাতনের সত্যতা পেল ছাত্রলীগ : ইবি শাখা ছাত্রলীগ সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রীকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের সত্যতা পাওয়া গেছে। নির্যাতনকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। ত মোট ১১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ও সঙ্গে শতাধিক পৃষ্ঠার সংযুক্তি জমা দেওয়া হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হোসেন অনিক জানিয়েছেন, রবিবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। আরেকটি সূত্র জানায়, শিক্ষকদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনার শুনে তদন্ত কমিটির সদস্যরাও বিব্রত হয়েছেন। এমনকি নির্যাতনের কিছু চিত্রের বর্ণনার সময় কমিটির পুরুষ শিক্ষকদের বাইরে যেতেও হয়েছে।

সর্বশেষ খবর