বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

আরাভ সিন্ডিকেটের ওরা কোথায়

দুবাইয়ে ফ্ল্যাটের সামনে পুলিশ, স্ত্রীও হত্যা মামলার আসামি

সাখাওয়াত কাওসার ও মাহবুব মমতাজী

আরাভ সিন্ডিকেটের ওরা কোথায়

বহুল আলোচিত স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান হত্যার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান সম্পর্কে একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি তার সিন্ডিকেটের যে দুজনকে দিয়ে আবু ইউসুফ লিমনকে ভুয়া আসামি সাজিয়েছিলেন, তারা কোথায়? এ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে নতুন করে। ওই দুজন হলেন- নারায়ণগঞ্জের জোবায়ের আহমেদ বাপ্পী ও নোয়াখালীর ফরহাদ আহমেদ মজুমদার। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতারণার মামলা করেছেন লিমনের বাবা নুরুজ্জামান। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে জানা যায়, জোবায়ের আহমেদ বাপ্পীও এখন অবস্থান করছেন দুবাইয়ে। কিন্তু ফরহাদের খোঁজ কেউই জানাতে পারেননি।

এদিকে আরাভ ওরফে রবিউলের পরিবর্তে জেলখাটা লিমন রাজধানীতে রাইড শেয়ারে বাইক চালান। একই সঙ্গে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন।

লিমনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুরের ৬ নম্বর বাজারে উঠতি ক্রিকেট প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে আড্ডায় যোগ দিতেন লিমন। সেখানে ক্রিকেট প্রশিক্ষণার্থীরা যে বাসায় থাকতেন, সেখানে একজন দুবাইয়ের লাগেজ ব্যবসায়ীও থাকতেন। ওই সূত্রে আরাভ ওরফে রবিউল ইসলামের সঙ্গে উঠতি ক্রিকেট প্রশিক্ষণার্থীদের যোগাযোগ তৈরি হয়।

আবু ইউসুফ লিমন জানান, প্রতারণার শিকার হয়ে তিনি মামলার আসামি হয়েছেন। নিরপরাধ হয়েও তিনি জেল খেটেছেন। আর এখন প্রতারণার মামলার হাজিরা দিতে হচ্ছে তাকে। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ৯ মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পান লিমন। হাই কোর্ট থেকে লিমনের এই জামিন করিয়ে দিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট শামীম সরকার। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি শুধু জামিন করিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর মামলাটি জজ কোর্টে চলে যায়। এ ছাড়া বিস্তারিত আমার কিছু জানা নেই।’ গতকাল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন লিমনের বাবা নুরুজ্জামান। তিনি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা অফিসে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘লিমন ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করে। এরপর তাকে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ার ম্যাটসে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্সে ভর্তি করে দিই। তিন বছর পড়ার পর সে চূড়ান্ত পরীক্ষা না দিয়ে ক্রিকেট খেলতে ঢাকায় চলে যায়। সে ক্রিকেটের জন্য খুব পাগল ছিল। এ নিয়ে আমার সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। আমি তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিই। তবে বাড়িতে তার মা-বোনদের সঙ্গে কথা বলত। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আরাভ ওরফে রবিউলের সঙ্গে লিমনের পরিচয় হয়। পরে সরাসরি পরিচয় হয় জোবায়ের আহমেদ বাপ্পী ও ফরহাদ আহমেদ মজুমদারের সঙ্গে। তারাই আরাভ ওরফে রবিউলের হয়ে লিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তাকে বিকেএসপিতে খেলার সুযোগ করে দেবে বলে লিমনের আইডি কার্ড-সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন কাগজপত্র নেয়। লিমন প্রলোভনে পড়ে জেলে গেলেও পরিবারের কাছে বিষয়টি গোপন রাখে। তিন মাস জেলে থাকার পর তার বিষয়টি আমরা জানতে পারি। এরপর তার জামিন পেতে আরও ছয় মাস লেগেছে। এই মামলায় ছেলেকে জামিনে আনতে গিয়ে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। সব মিলিয়ে আমার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’ স্বজনরা বলছেন, করোনাকালে আরাভের সঙ্গে ফেসবুকে লিমনের কথা হয়। আরাভ জানান, তিনি আমেরিকায় থাকেন, দেশে এলে লিমনকে বিকেএসপিতে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেবেন; একটা ভালো দলে খেলার পাশাপাশি সাকিব আল হাসানের সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দেবেন; কিন্তু মামলার কারণে তিনি দেশে আসতে পারছেন না। লিমনকে আরাভ অনুরোধ করেন, তার হয়ে আদালতে গিয়ে কাস্টডিতে গেলে তিনি তাকে দেড় মাসের মধ্যে জামিনে মুক্ত করবেন। এতে লিমনকে ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। একসময় লিমন তার প্রস্তাবে রাজি হয়। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর আরাভের কথামতো লিমন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে যান। এর পরদিন রবিউল ইসলাম পরিচয়ে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। জেলে যাওয়ার পর একাধিকবার লিমনের জামিনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ সময় আরাভ ওরফে রবিউল আশ্বস্ত করেন, ১৬ ডিসেম্বরের আগেই জামিনের ব্যবস্থা করবেন। এরপর ডিসেম্বরেও তিনি জামিন করাতে ব্যর্থ হন। লিমনকে তখন কাশিমপুর জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে এই মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে কথা হয়।

লিমনের বাবা নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তিন মাস ধরে লিমনের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। পরে থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। লিমনের কয়েকজন বন্ধু তাদের ফেসবুকে তার ছবিসহ পোস্ট করে স্ট্যাটাস দেয় যে, আবু ইউসুফ লিমনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার মা-বাবা খুব টেনশন করছেন। ওই পোস্ট দেখে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ইমোতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বলে, সে নাকি সাভারের বিকেএসপিতে লিমনকে ভর্তি করে দিয়েছে। সে খেলা নিয়ে ব্যস্ত, তাই ফোন করতে পারছে না। হঠাৎ ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি লিমন জেল থেকে তার ছোট বোন লিজাকে ফোন করে বলে যে, খুনের মামলায় আসামি হয়ে সে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছে।’

২০১৮ সালের ৮ জুলাই খুন হন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান (৩৪)। এ ঘটনায় ওই বছরের ১০ জুলাই মামুনের ভাই রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন। এ মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয় মামলাটির। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্যও গ্রহণ করা হয়েছে। এই মামলার ৬ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। তিনি পলাতক হয়ে দুবাইয়ে আরাভ খান নামে ব্যবসা করছেন।

দুবাইয়ে ফ্ল্যাটবন্দি আরাভ! : এসবির পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছে দুবাই পুলিশ। দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফার ৬৫ তলায় আরাভের ফ্ল্যাটের সামনে গত সোমবার রাত থেকে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। তাকে দুবাই ত্যাগ না করতে বলেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অনেকটা ফ্ল্যাটবন্দি অবস্থাতেই আরাভকে রাখা হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। বলছে, যে কোনো সময় তাকে আটক দেখানো হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি আরাভ খানের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি হয়। এর পরপরই দুবাই পুলিশের এনসিবি শাখা আরাভকে নজরবন্দি করে। পাশাপাশি শুরু হয় নানামুখী তৎপরতা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘আমি এটুকুই বলতে পারি বাংলাদেশের আসামি কোনো বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে পালিয়ে থাকতে পারবে না। রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান গ্রেফতারের বিষয়টি সময়মতো জানতে পারবেন। ঢাকার পক্ষ থেকে অফিশিয়ালি দুবাইয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’ গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এর আগে গত সোমবার পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। ইন্টারপোল সেটি গ্রহণ করেছে। এদিকে, গত রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফর ক্ষুদে বার্তায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, আরাভ দুবাই পুলিশের নজরদারিতে আছে বলে নানা মাধ্যমে খবর পাচ্ছি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ একাধিক গণমাধ্যমে আরাভ নিজেকে বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন। খুনের মামলাসহ ১২ মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া এবং জালিয়াতি করে সেখানে নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট নেওয়ার বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আরাভের পাসপোর্ট এবং নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দুবাইতে আরাভের অবস্থানও অবৈধ হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার অন্যতম আসামি সুমন শিকদার ওরফে মুছাকে ওমান থেকে ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ পুলিশ। এর আগে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই সৌদি আরব থেকে সিলেটের কুমারগাঁওয়ের শিশু রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়। এক্ষেত্রে ও বন্দিবিনিময় চুক্তির কোনো প্রয়োজন হবে না। আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশ সদর দফতরের যৌথ দল দুবাই যাওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে।

 ইতোমধ্যে সরকারি আদেশ জারির জন্য পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই তারা দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার ব্যাপারে আশা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুবাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সোমবার থেকেই বুর্জ দুবাইয়ের ৬৫ তলায় আরাভের ফ্ল্যাটের সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। আপাতত আরাভকে তার ফ্ল্যাটেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে। সে অন্য কোথাও যাতায়াত করতে পারছে না। রবিবার রাতেও আরাভ তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। আরাভ অনেকটা গৃহবন্দি বলতে পারেন।

এদিকে, গতকাল দিনের বিভিন্ন সময় এই প্রতিবেদক আরাভকে তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পেয়েছেন।

গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপনসহ কয়েকটি নামে পরিচিত।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন রবিউল। নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন এমরান। এরপর তাকে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখার এআইজি শরীফ মোস্তাফিজুর রহমান কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি এআইজি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে এআইজি মিডিয়া মনজুর হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। পেলেই গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত সপ্তাহে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনের পর ব্যাপক আলোচনা আসে প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানকে নিয়ে। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলেন আরাভ খান। তখনই তাকে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামি বলে শনাক্ত করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

আরাভের স্ত্রী কেয়াও পুলিশ হত্যা মামলার আসামি : দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের স্ত্রীর খোঁজ মিলেছে মেহেরপুরে। আরাভ খানের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াও এই পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক ও কেয়ার বাবা। কেয়া মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদের মেয়ে। পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলায় জামিন পেয়ে মেহেরপুর সদরের আমঝুপি গ্রামের শাহিন নামে একজনকে বিয়ে করে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।

কেয়ার বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৯৯৬ সালে খালাতো বোন মনোয়ারার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসার ভালোই চলছিল। ২০০০ সালে জমিজমা বিষয়ে বিরোধের জেরে মামলায় তার জেল হয়। তখন কেয়ার বয়স মাত্র তিন বছর। দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে তাদের সংসারে ফাটল ধরে। ২০১১ সালে জেল থেকে বেরিয়ে শোনেন তার স্ত্রী তালাক দিয়ে মেহেরপুর সদরের গোভিপুর গ্রামের এক হোমিও চিকিৎসককে বিয়ে করে ঢাকায় অবস্থান করছেন। ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন কেয়া। এরপর ঢাকার একটি ম্যাটস কলেজে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাবিদ্যায় ডিপ্লোমা করেন। তার পর থেকেই মেয়ের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না তার। কিছুদিন পর শুনতে পান তার মেয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে আপন ওরফে আরাভ খান নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছেন। ২০১৪ ও ১৫ সালে আপনকে নিয়ে দুবার গাড়াডোব গ্রামে তার খালার বাড়ি বেড়াতে আসেন। সেখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন তারা। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই খবর আসে কেয়া একটি পুলিশ হত্যা মামলার আসামি। পরে পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলে যান কেয়া। এ সময় আপন তালাক দেন তাকে। কয়েক বছর হাজতবাসের পর ২০২২ সালে জামিনে মুক্তি পান কেয়া। এরপর আমঝুপি গ্রামের শাহিনকে বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে মালয়েশিয়ায় চলে যান।

গাংনী থানার এসআই জিল্লুর রহমান বলেন, কেয়া নামে ওই মেয়ে সম্পর্কে আমাকে তদন্ত করতে বলা হয়েছিল। আমি খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি কেয়া এখন মালয়েশিয়ায় তার দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, সুরাইয়া আক্তার কেয়া হত্যা মামলার আসামি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ। তার সম্পর্কে অনেকেই ভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। কেউ বলছেন দুবাই আছেন, আবার কেউ বলছেন মালয়েশিয়ায় আছেন। আমরা চেষ্টা করছি তার অবস্থান জানার।

সর্বশেষ খবর