সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বেকায়দায় নেতানিয়াহু

বেকায়দায় নেতানিয়াহু

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির কারণে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরিক একটি দলের সমর্থন প্রত্যাহারের পর বেকায়দায় পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একই কারণে জোটের আরও দল হেতানিয়াহুর ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে দেশটিতে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় আগাম নির্বাচন ঠেকানোর সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে গতকাল জোট সরকারের ভাগিদার কুলানু পার্টির নেতা অর্থমন্ত্রী মোসে কাহলোনের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর। ক্ষমতাসীন জোট টেকাতে কাহলোনের কুলানু পার্টির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের পর ইসরায়েলে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক সংকট। ক্ষমতাসীন জোট রক্ষায় শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ও অপর একটি প্রতিদ্বন্দ্বী জোটের মধ্যকার বৈঠক কোনো চুক্তি ছাড়া শেষ হয়। এরপরই মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠক ঘিরে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা আলোচিত হচ্ছে। শুক্রবারের ওই বৈঠকে হাবাইত হায়েহুতি পার্টির নেতা নাফতালি বেন্নেত প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদটি চান। কিন্তু তাতে রাজি নয় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ফলে সেদিনের আলোচনা ভেস্তে যায়। আর নাফতালি বেন্নেত সরকার থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। নির্বাচন ঠেকাতে একে নেতানিয়াহুর শেষ চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিবেরমেনের পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তার দল ইসরায়েল বেইতেনুও ক্ষমতাসীনদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। যা ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ক্ষমতাসীনদের অবস্থান নিয়ে আনে ১ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতায়। দুর্নীতির বেশ কয়েকটি অভিযোগ ঘিরে এমনিতেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে; নির্বাচন হলে তা তাকে আরও সমস্যায় ফেলতে পারে বলেও ধারণা অনেকের। ইসরায়েলিদের মধ্যে নেতানিয়াহু ও লিকুদ পার্টির জনপ্রিয়তা এখনো বেশি বলে বেশ কয়েকটি জরিপের বরাত দিয়ে বলছে বিবিসি। কিন্তু আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু থাকায় দেশটিতে একক কোনো দলের পক্ষে সরকার গঠন বেশ কঠিন। নেতানিয়াহু এ নিয়ে চারটি নির্বাচনে জিতেছেন। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলে তিনি ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়নকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি দিন দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার গৌরব অর্জন করবেন।

উল্লেখ্য, ইসরাইলে ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ক্ষমতায় বর্তমান সরকার। ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে উগ্র ডানপন্থি বলে তাদের উল্লেখ করা হয়েছে। এ সরকারে রয়েছে অতিমাত্রায় জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় দলগুলো। তারা ফিলিস্তিন ইস্যুতে কট্টর অবস্থান অবলম্বন করে। দখলিকৃত এলাকা নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে কোনো উদ্যোগকে প্রত্যাখ্যান করে তারা। ইসরাইলের সব সরকারই জোট সরকার। কারণ, ইসরাইলের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আনুপাতিকহারে প্রতিনিধিত্ব রাখার নিয়ম আছে। এর অর্থ হলো কোনো একক দল দেশ চালাতে পারবে না। যদিও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগাম নির্বাচন আহ্বান করতে চান না, কিন্তু সাম্প্রতিক জরিপগুলো বলছে, ভোটারদের মধ্যে এখনো প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার দল লিকুদ পার্টির প্রতি রয়েছে সবচেয়ে বেশি সমর্থন। তবে তারা যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলও হয় আর তাদের সঙ্গে জোটে অন্য দল না থাকে তার অর্থ এই নয় যে, লিকুদ পার্টি ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে। কারণ, একক একটি দলের দেশ শাসনের অধিকার নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর