পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতার হতেই আগুন জ্বলছে দেশটিতে। সরকারি সম্পত্তি থেকে সেনা শিবিরে হামলা চালাচ্ছেন ইমরান সমর্থকরা। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকদের হামলার হাত থেকে বাদ যায়নি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনও। এ পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমনের হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বুধবার ভোরে তার বাড়িতে চড়াও হন অন্তত শতাধিক ইমরান সমর্থক। তার বাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় পেট্রল বোমাও। আর টুইটারে এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা বিমান বাহিনীর সদর দফতরের দেয়াল ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেলছে। এসব ঘটনার পর গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমন করার হুঁশিয়ারি দেন শাহবাজ। তিনি বলেন, ‘দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ হিসেবে দেখা হবে। যারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে সরকার।’ শাহবাজের কথায়, দেশের আদর্শ সুরক্ষিত রাখা আমাদের জীবনের থেকেও মূল্যবান। দেশের বিরুদ্ধে কোনো রকম ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেবে সরকার। তবে শাহবাজের এসব হুঁশিয়ারি কানে তুলতে নারাজ ইমরান সমর্থকরা।
লাহোর পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল শহরে ১৪টি সরকারি ভবনে ভাঙচুর এবং ২১টির বেশি পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, একদল বিক্ষোভকারী দেশটির আর্মি হেডকোয়ার্টারের গেটে পর্যন্ত হামলা করেছে। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের এমন সহিংস প্রতিবাদ যেন অনেকটা অকল্পনীয়। কেননা এতদিন পর্যন্ত দেশটির টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও সেনাবাহিনী ছিল অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক ভাবেই সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। তবে সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর থেকে দেশটির আর্মি জেনারেলরা যেন একটু বেকায়দায় পড়ে গেছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে দেশটির রাজনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল। যার ফলশ্রুতিতে তিনটি সফল সেনা অভ্যুত্থান ও কয়েক দশকের সেনা শাসনের মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তানের জনগণ।
গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজিরা দিতে গেলে ইমরান খানকে আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে ইমরান খানের সমর্থকেরা বিক্ষোভের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর স্থাপনাগুলোতে হামলা করতে থাকেন।